|
|
|
|
শেষ বিকেলে গোয়া পৌঁছে প্রাপ্তি এক রাতের রেহাই
প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত • পানজিম
২৯ নভেম্বর |
এ যেন কেবলই কান ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়া। উজিয়ে দিল্লি গিয়ে বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিশ। খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। ফের গোয়ার বিমানবন্দরে আটক করা গিয়েছিল। কিন্তু আদালতের নির্দেশে সাময়িক রেহাই মিলল।
অতএব শুক্রবার দিনের শেষে আরও একটা রাতের জন্য স্বস্তিতে তরুণ তেজপাল।
বিকেল গড়িয়ে গোয়ায় এসে পৌঁছেছেন। আদালতে সরকার পক্ষ কিছু বলার মতো সময়ই না পাওয়ায় তাঁর আগাম জামিনের শুনানি আজকের মতো স্থগিত হয়ে গিয়েছে। শনিবার আবার শুনানি হবে। তত ক্ষণ অবধি ২০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে গ্রেফতারি এড়ানোর সুযোগ পেলেন তেজপাল।
গত কালই গোয়া পুলিশের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সারিকা ফলদেশাই তেজপালের বিরুদ্ধে জামিন -অযোগ্য পরোয়ানা জারি করেছিলেন। তার পরে তেজপালের আইনজীবীরা পুলিশের কাছে তেজপালের একটি ফ্যাক্স -বার্তা জমা দেন। সেখানে তেজপাল প্রতিশ্রুতি দেন, আজ তিনি গোয়ায় আসবেন। পুলিশি তদন্তে সাহায্য করবেন।
তেজপালের জন্য অপেক্ষা না করে আজ সাত সকালেই অবশ্য গোয়া পুলিশের একটি দল দিল্লি পৌঁছে গিয়েছিল। দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে তেজপালের বাড়িতে তল্লাশিও চালায় তারা। কিন্তু তেজপাল সেখানে ছিলেন না। তেজপালের স্ত্রী গীতান বাত্রা পুলিশকে কোনও তথ্য দিতে চাননি।
অন্য দিকে গোয়ায় তেজপালের আইনজীবীরা বেলা দশটা নাগাদ মুখ্য জেলা এবং দায়রা বিচারক অনুজা প্রভুদেশাইয়ের এজলাসে তেজপালের জন্য আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। দুপুরবেলা শুরু হয় সওয়াল। তেজপাল যে আজই গোয়া এসে পৌঁছবেন, সে কথা তখনই আদালতকে জানানো হয়। আদালত তখন বেলা আড়াইটে পর্যন্ত তাঁকে ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দেয়। |
|
শনিবার গোয়া বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশি ঘেরাটোপে তেজপাল। ছবি: পিটিআই। |
মধ্যাহ্নভোজের পরে ফের শুরু হয় শুনানি। তেজপালের আইনজীবী গীতা লুথরা তাঁর সওয়ালে দাবি করেন, তেজপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ একটা সাজানো ঘটনা। এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। আইনজীবী বলেন, গোয়ায় চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যেও একটি যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। সে ব্যাপারে প্রশাসনকে এই ভূমিকায় দেখা যায়নি। অথচ তেজপালকে তাঁর অপরাধ প্রমাণের আগেই অপরাধী বানানো হচ্ছে।
কথার তোড়ে তেজপালের আইনজীবী এক সময় অভিযোগকারিণীর নামও উচ্চারণ করে ফেলেন। আদালত তাঁকে কড়া ধমক দেয়। আইনজীবী ক্ষমা চেয়ে নেন। তবে তাঁর যুক্তি, অভিযোগকারিণী ঘটনা ঘটে যাওয়ার ১১ দিন পর অভিযোগ এনেছেন। মাঝের দিনগুলোয় তাঁকে দিব্যি হাসিখুশি চেহারায় থিঙ্ক ফেস্টিভালের নানা অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। তাঁর চেহারায় বিপর্যয়ের কোনও ছাপ ছিল না বলেই আইনজীবীর দাবি। প্রমাণ হিসেবে তিনি রবার্ট ডি নিরো এবং তেজপালের সঙ্গে অভিযোগকারিণীর ছবিও আদালতে পেশ করেন।
গোয়ার আদালতে দাঁড়িয়ে যখন এই সওয়াল চলছে, তার মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে অভিযোগকারিণীর একটি লিখিত বিবৃতি। যেখানে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, তাঁর সঙ্গে যা ঘটেছে, আইনের চোখে তা ধর্ষণই। আর, দিল্লি বিমানবন্দরে ভিড় জমতে শুরু করেছে তেজপালকে ঘিরে। স্ত্রী -মেয়েকে নিয়ে তেজপাল সেখানে হাজির হয়েছেন বিমান ধরার জন্য। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ছেঁকে ধরেছিলেন তেজপালকে। তেজপাল এক বার তা নিয়ে মেজাজও হারান। শেষ পর্যন্ত আড়াইটে নাগাদ গোয়ার উড়ানে ওঠেন তিনি। |
সারা দিনের নাটক |
সকাল ৭টা: তেজপালের বাড়িতে দিল্লি, গোয়া পুলিশের হানা
সকাল ৮টা ২০: তেজপাল কোথায়, জানালেন না স্ত্রী
সকাল ১০টা: আগাম জামিন চেয়ে গোয়া আদালতে তেজপালের আইনজীবী
বেলা ১১টা ৩০: দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত তেজপালকে ছাড়
দুপুর ১২টা ৪৫: নিগৃহীতার বিবৃতি যা ঘটেছে তা ধর্ষণই
দুপুর ১২টা ৫০: দিল্লি বিমানবন্দরে হাজির তেজপাল
বিকেল ৫টা ১৮: গোয়ায় পৌঁছলেন তেজপাল
বিকেল ৫টা ২২: তেজপালকে আটক করল পুলিশ
বিকেল ৫টা ৫০: শনিবার সকাল পর্যন্ত ছাড় তেজপালকে
সন্ধে ৭টা ৪৫ : পুলিশের কাছে বন্ড জমা দিলেন তেজপাল। |
|
আড়াইটে, অর্থাৎ আদালতের ছাড়ের মেয়াদ তখন শেষ। গোয়ার বিমানবন্দরে এ বার ভিড় করে দাঁড়িয়ে পড়ে পুলিশ। কিন্তু হাজিরা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও এত দেরিতে রওনা হলেন কেন তেজপাল? আদালতে তেজপালের আইনজীবীর ব্যাখ্যা, তেজপাল আগের একটি উড়ান ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যম সব সময় তাঁকে যে ভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, সে সব ঠেলে তাঁর পক্ষে এর আগে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি।
আদালতকক্ষে এ দিন সারা দিনই তেজপালকে নিয়ে নানা গুজব ছড়াতে থাকে। কখনও শোনা যায়, তিনি এসে পড়েছেন, আদালতে ঢুকবেন। কখনও শোনা যায়, তিনি আদালতের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ বলতে থাকেন, তেজপাল ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন। এ সবই অবশ্য গুজব ছাড়া কিছু নয়। যখনই এজলাসের দরজা ফাঁক হয়েছে, সমবেত সকলের ঘাড় ঘুরে গিয়েছে তেজপাল ঢুকছেন নাকি? তেজপালের আইনজীবী ক্রমাগত বলতে থাকেন, তেজপাল এক জন দৃঢ় চরিত্রের মানুষ। তাঁর কথার দাম আছে। তিনি সব সময়ই তদন্তে সাহায্য করতে প্রস্তুত। তিনি গোয়াতেই আসছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে হেফাজতে চাইছে কেন পুলিশ? তাঁকে গ্রেফতার করার প্রয়োজনই বা কী?
আইনজীবী গীতা লুথরা নিজের এই সব বক্তব্য রাখতে এত সময় নিয়ে নেন যে এ দিন আদালত সরকার পক্ষের বক্তব্য শুনতেই পারেনি। বিচারক একাধিক বার বলেনও যে, “আপনি একই কথা বারবার বলছেন।” কিন্তু গীতাকে দমানো যায়নি। ফলে বিকেল গড়িয়ে যায় এবং শুনানি স্থগিত করে দিতে হয়। তেজপাল যথারীতি তখনও আদালতে এসে পৌঁছননি। গোয়া বিমানবন্দরে তত ক্ষণে তেজপালকে আটক করে ফেলেছে পুলিশ। গীতা এ বার আবেদন করেন, কাল সকাল অবধি তেজপালকে ছাড় দেওয়া হোক। আদালত তাঁকে ২০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে কাল সকাল ১০টা অবধি ছাড় মঞ্জুর করে। কিন্তু সব মিলিয়ে এত দেরি হয়ে গিয়েছিল যে, আদালত এই নির্দেশ লিখিত আকারে দিতে পারেনি। আইনজীবী গীতা একটি সাদা কাগজে আবেদন লিখে আদালতের সিলমোহর লাগিয়ে নেন। সন্ধেবেলায় নিজের ছবি ও সই সমেত ওই বন্ড তেজপাল নিজে ডোনা পাওলার ক্রাইম ব্রাঞ্চে গিয়ে তদন্তকারী অফিসার সুনীতা সবন্তের কাছে জমা দিয়ে আসেন। তেজপাল এখানকার একটি পাঁচতারা হোটেলে উঠেছেন। রাত পর্যন্ত দফায় দফায় নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও জানা গিয়েছে।
অনেকেই বলছেন, তদন্তের কাজে তিনি কতটা সহযোগিতা করছেন, সেটা বোঝাতেই তেজপাল নিজে আজ পুলিশের দফতরে গেলেন। এটা তাঁর দিক থেকে তাঁর লড়াইয়েরই কৌশল। কাল যদি আদালতে এসপার -ওসপার হয় তো হল ! নইলে আদালত চত্বরে জোর জল্পনা, তেজপালের আইনজীবী কালও হয়তো সওয়াল -জবাবকে প্রলম্বিত করার চেষ্টা করতে পারেন। পরদিন রবিবার। সোমবার কেটে গেলে মঙ্গলবার থেকেই ছুটিতে চলে যাবেন সংশ্লিষ্ট বিচারক !
তেজপাল তাই আক্ষরিক অর্থেই দিন গুনছেন ! |
পুরনো খবর: জারি হল পরোয়ানা, আজ হাজিরার বার্তা |
|
|
|
|
|