সব কাজে সন্দেহ হলে স্তব্ধ হবে প্রশাসন: সুপ্রিম কোর্ট

২৯ নভেম্বর
রকারের সব কাজকর্মকেই সন্দেহের চোখে দেখলে প্রশাসনিক কাজ স্তব্ধ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।
টুজি স্পেকট্রাম মামলায় সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিল শীর্ষ আদালত। কয়লাখনি বণ্টনের ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত চলছে। ফলে, সরকার বিশেষত কেন্দ্রের নীতিপঙ্গুত্ব দেখা দিয়েছে বলে দাবি নানা শিবিরের। এমনকী এই বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকেও। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুজরাত সরকার। ওই প্রকল্পে বেআইনি ভাবে জমি দেওয়া হয়েছে বলে মামলা হয়। সিবিআই তদন্তও চেয়েছিলেন কয়েক জন আবেদনকারী। প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিএজি— কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলও। সেই মামলারই শুনানি ছিল আজ।
প্রকল্প নিয়ে সব আপত্তি খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন বিচারপতি কে সিকরির বেঞ্চের মতে, কেবল নিলাম বা টেন্ডার ডাকা হয়নি বলে কোনও সরকারি সিদ্ধান্তকে একতরফা বা অযৌক্তিক বলা যায় না। বেঞ্চের মন্তব্য, “প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে। যা ফল পাওয়া যাবে ভাবা হয়েছিল তা না পাওয়া যেতে পারে। গণতন্ত্রে তার সমালোচনাও হবে। কিন্তু সৎ উদ্দেশ্যে নেওয়া সিদ্ধান্তকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সব সিদ্ধান্তকে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় রেখে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখারও প্রয়োজন নেই।” এ ক্ষেত্রে জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখেই গুজরাত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে বেঞ্চ।
কয়লা কেলেঙ্কারি টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তুলেছিল সিএজি। কিন্তু গুজরাতের এই প্রকল্প নিয়ে সিএজি - প্রশ্নকেও গুরুত্ব দেয়নি বেঞ্চ। বিচারপতিদের মতে, সিএজি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। কিন্তু মনে রাখতে হবে জনস্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে প্রশাসনের। এবং জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হয়। কী ভাবে সম্পদ বণ্টন করলে মানুষের উপকার হবে তা স্থির করতে হয় সরকারকেই।
টুজি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে স্পেকট্রাম নিলাম করার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। পরে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স’ পদ্ধতির মাধ্যমে সেই রায়ের একটি দিক নিয়ে ব্যাখ্যা চায় ইউপিএ সরকার। কেন্দ্র জানতে চায়, কোন পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক সম্পদ বণ্টন করা উচিত। নিলামই একমাত্র পথ কি না। জবাবে কোর্ট জানায়, জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে বণ্টনের পদ্ধতি স্থির করতে হবে। আজ গুজরাতের এই মামলার রায়েও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে জনস্বার্থকেই।
তবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সরকারি নীতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় যে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে তা বার বার নানা মঞ্চে বলেছেন ইউপিএ সরকারের শীর্ষ কর্তারা। সব সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললে আমলারা এগোতে ভয় পাবে বলে মন্তব্য করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। আমলাদের দ্বিধা কাটিয়ে এগোনোর অনুরোধও করেছেন তিনি।
আবার সরকারি নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের মতো তদন্তকারী সংস্থা কেন মাথা ঘামাচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মনমোহন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তবে সরকার তথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের এই মন্তব্যে নীতিপঙ্গুত্ব কতটা কেটেছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকেরই।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য যাবতীয় সরকারি প্রকল্প বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘কেবলমাত্র নিলাম’ পদ্ধতিই অবলম্বন করেছে। রাজারহাটে ব্যবসা -বাণিজ্য করবার এক খণ্ড জমি কিংবা পাবলিক -প্রাইভেট -পার্টনারশিপের (পিপিপি ) ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থা বাছার জন্যও নিলামের মাধ্যমে বাছাই করার নীতিই নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। কেবলমাত্র নিলাম পদ্ধতি অবলম্বন করার ফলেই সম্প্রতি রসুলপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে আগ্রহী এক সংস্থাকে বাতিল করা হয়েছে। কারণ, কোনও রকম নিলাম ছাড়া একটি মাত্র সংস্থা এই বন্দর নির্মাণে এগিয়ে এসেছিল। শিল্প দফতর তা মানেনি। ফলে নতুন করে নির্মাতা সংস্থা খোঁজা হবে বলে জানা গিয়েছে।
তবে অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে সরকার মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে কোনও সংস্থাকে বরাত দেওয়ার কথা ভাবতে পারে বলে জানিয়েছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাঁর কথায়,“সাধারণ ভাবে যে কোনও সরকারি, যৌথ উদ্যোগ বা পিপিপি প্রকল্প পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিলাম অথবা দরপত্রের মাধ্যমেই আসতে হবে। সেই কারণে শিল্পে জমি বিলির ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।” ওই মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, এখন পিপিপি নীতি অনুসারে রাজ্যে জন প্যানেলভুক্ত ‘ট্রানজ্যাকশন অ্যাডভাইসার’ আছে। কোনও দফতর হাতে প্রকল্প নিলে এই ‘ট্রানজ্যাকশন অ্যাডভাইসাররাই’ নিলাম বা দরপত্রের নিয়ম নীতি ঠিক করে। স্বচ্ছতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের অংশীদার খোঁজা হয়।
যদিও বাম জমানায় প্রকল্পের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র নিলাম পদ্ধতি অবলম্বন করা হত না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জমানার সবচেয়ে আলোচিত নন্দীগ্রামে সালিমদের কেমিক্যাল হাব প্রকল্পই সরকার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরাত দিয়েছিল। কোনও নিলাম হয়নি। টাটাদের ন্যানো কারখানার জমিও নিলাম করে দেওয়া হয়নি। বরং রাজ্যে শিল্পায়নের স্বার্থে টাটাদের সস্তায় জমি দিয়েছিল রাজ্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.