|
|
|
|
তেজপাল যা করেছেন সেটা ধর্ষণই |
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, নিজের সততার লড়াই লড়ছেন, বিবৃতি নিগৃহীতার |
গত দু’সপ্তাহে যত মানুষ আমায় সমর্থন করেছেন, তাতে আমি অভিভূত। একই সঙ্গে ভোটের বাজারে তৈরি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা বলে যে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, তাতে আমি খুবই উদ্বিগ্ন এবং বিরক্ত।
কোনও অবস্থাতেই এ ধরনের ইঙ্গিতের ভিত্তি নেই। এই নিয়ে আমার কিছু বলার আছে: নিজের জীবন এবং শরীরের প্রতি নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে মহিলাদের যে সংগ্রাম করতে হয়, সেটা অবশ্যই রাজনৈতিক। কিন্তু দলীয় রাজনীতির সঙ্কীর্ণ দুনিয়ার তুলনায় সেই রাজনীতির পরিসর অনেক ব্যাপ্ত। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমার অনুরোধ: লিঙ্গ, ক্ষমতা এবং হিংসা সংক্রান্ত একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাকে নিজেদের কথাবার্তা বানিয়ে ফেলবেন না।
কেউ কেউ বলছেন, বিশেষ কারও নির্দেশেই আমি প্রতিবাদ করার কথা ভেবেছি। এ ধরনের মন্তব্য থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। মহিলারা নিজেদের ব্যাপারে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারেন, সেটা এখনও মানতে ইচ্ছুক নয় জনমতের একাংশ। |
|
রয়েছি পাশে। গোয়ার পথে দিল্লির বিমানবন্দরে এক আত্মীয়ার সঙ্গে তেজপাল। শুক্রবার পিটিআইয়ের ছবি। |
তেজপাল আমায় যখন নিগ্রহ করেছিলেন, সেই সময়ে এবং তার পরে আমার উদ্দেশ্য এবং কাজকর্ম নিয়ে গত সপ্তাহে টিভিতে বক্তারা প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ প্রশ্ন করেছেন, অভিযোগ জানাতে এত সময় লাগল কেন? অত্যুৎসাহীরা আবার একে ‘যৌন নিগ্রহ’ বলা হবে না কি ‘ধর্ষণ’, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ঘটনাটাকে কী নামে চিহ্নিত করব, যন্ত্রণাময় এই অভিজ্ঞতায় সব চেয়ে কঠিন কাজ ছিল সেটাই। আমার সহকর্মী, বন্ধু, সমর্থক এবং সমালোচকরা আমায় যদি ধর্ষিতা বলে মনে করে, আমিও কি নিজেকে ‘ধর্ষিতা’ হিসেবেই দেখতে চাইব? জানি না। যে আক্রান্ত, সে তো আর অপরাধের মাত্রা ঠিক করে না। সেটা আইনের কাজ। আর এ ক্ষেত্রে তেজপাল আমার সঙ্গে যা করেছেন, তা ধর্ষণের আইনি সংজ্ঞার আওতার মধ্যেই পড়ে।
আমাদের নতুন আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞার পরিসর অনেকটা বেড়েছে। তাই আমরা যা নিয়ে লড়াই করছি, তার প্রতি যেন আমরা দায়বদ্ধ থাকি। আমরা বরাবর বলেছি, ধর্ষণের সঙ্গে কাম বা যৌনতার সম্পর্ক যতটা, তার চেয়ে ঢের বেশি ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও সুবিধাবাদের সম্পর্ক। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বিত্তবান, ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালী সবার ক্ষেত্রেই এই কথাটা প্রযোজ্য।
আমার ঘটনার পরে যত রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, পারিবারিক গণ্ডি বা কোনও কর্তৃপক্ষের হেফাজতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে কট্টর নারীবাদীদেরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। আমি তেজপালের মতো প্রতিপত্তিশালী নই। আমার মা তাঁর একার রোজগারে আমায় বড় করেছেন। বাবা বহু বছর ধরে অসুস্থ।
তেজপালের মতো নিজের অর্থ, প্রভাব -প্রতিপত্তি রক্ষা করার জন্য আমি লড়াই করছি না। নিজের সততা রক্ষার জন্য লড়ছি। আমার শরীরটা যে আমারই, যাঁর কাছে চাকরি করি, তাঁর খেলার জিনিস নয় এটা বোঝানোর দায় থেকে আমার লড়াই। এই অভিযোগ জানানোর ফলে যে কাজটা আমি ভালবাসতাম, শুধু সেটাই হারাইনি। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতাও চলে গিয়েছে আমার। ব্যক্তিগত ভাবে আমায় নিয়ে কুৎসা করার সুযোগও করে দিয়েছি অনেককে। এটা খুব সহজ লড়াই নয়।
যৌন অপরাধ যে গোপনীয়তা এবং নীরবতার ঘেরাটোপে আটকে থাকে, সেটা আমি ভাঙতে চেয়েছি সব সময়। নিজের জীবনে এবং লেখায় মহিলাদের বলেছি, চেপে না রেখে কথা বলুন। কিন্তু কথা বলার পরে যে কত রকম চাপ তৈরি হয়, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। প্রথমত, কেন বললাম তাই নিয়ে প্রশ্ন। তার পরে বলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন। শেষে আমাদের শক্তিকে আমাদের বিরুদ্ধেই কাজে লাগানো। কোনও রাজনীতিবিদ বলবেন, যৌন হিংসার বিরুদ্ধে কথা বললে তা আমাদের পেশাগত উন্নতিতে বাধা তৈরি করবে। দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানালে প্রশ্ন উঠবে যৌন হেনস্থার শিকার হয়েও সংশ্লিষ্ট মহিলা এত ‘স্বাভাবিক’ থাকলেন কী ভাবে?
এ ক্ষেত্রে যদি আমি চুপ থাকতাম, নিজের সামনে নিজেই দাঁড়াতে পারতাম না। অসংখ্য সাহসী মহিলা বহু দিন ধরে যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, দাঁড়াতে পারতাম না সেই লড়াইয়ের সামনেও।
শেষে একটাই কথা। গোটা ঘটনার ফলে তহেলকার মতো প্রতিষ্ঠানে সঙ্কট তৈরি হল বলে প্রভাবশালী অনেকেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তাঁদের মনে করাতে চাই, সঙ্কটের সূত্রপাত পত্রিকার এক কর্মী মুখ খুলেছেন বলে নয়, প্রধান সম্পাদকের কৃতকর্মের জন্যই। |
|
|
|
|
|