কড়েয়ায় ধর্ষণ-কাণ্ডে বেকসুর খালাস অভিযুক্ত
ড়েয়ার এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত শাহজাদা বক্সকে শনিবার বেকসুর খালাস করে দিল আদালত। এক বছর ধরে মামলা চলার পরে এ দিন আলিপুর আদালত জানিয়ে দিল, উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাব এবং সাক্ষীদের বয়ানে অসঙ্গতির কারণে শাহজাদাকে বেকসুর খালাস করা হল। তবে আদালতে শাহজাদাকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিচারক। তাঁকে লক্ষ করে বিচারক বলেন, “আপনিও কিন্তু খুব স্বচ্ছ প্রকৃতির নন। ভবিষ্যতে ভাল থাকার চেষ্টা করবেন।”
অভিযোগকারিণী ইংরেজি লিখতে পারত না বলে ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর তাকে সঙ্গে নিয়ে কড়েয়া থানায় গিয়েছিলেন এলাকারই বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি শাহজাদা বক্সের বিরুদ্ধে। শাহজাদার বিরুদ্ধে প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ জমা না নিয়ে পুলিশ আমিনুলকেই উল্টে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার করার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরে আমিনুল থানার সামনে গায়ে আগুন দেন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
শাহজাদাকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করার আগে আলিপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক সুনির্মল দত্ত জানান, পুলিশ এই মামলায় যাঁদের সাক্ষী করেছিল, তাঁদের বয়ানে গুরুত্বপূর্ণ অসঙ্গতি রয়েছে। যে জায়গায় ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে পুলিশ চার্জশিটে জানিয়েছিল, সাক্ষীদের বয়ানে সেই জায়গার নাম বারবার বদল হয়েছে। বিচারক জানান, ঘটনার অনেক দিন পরে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। সরকার এই মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিচারক এ দিন বলেন, পুলিশের কাছে অভিযোগকারিণী জানিয়েছিল, অসুস্থ থাকায় তাকে ছেড়ে দিয়ে তার বন্ধুকে ধর্ষণ করে শাহজাদা। তবে সেই কিশোরীটি নিজে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। পুলিশও তাকে এই মামলায় সাক্ষী করেনি। আদালত নিজের ক্ষমতাবলে ওই কিশোরীকে ডেকে পাঠিয়ে সাক্ষ্য নেয়। বিচারক জানান, তখন ওই কিশোরী জানায়, তাকে ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানি করা হয়নি। আদালত তার মা-বাবাকেও ডেকে পাঠায়। তাঁরাও মেয়ের কথাকেই সমর্থন করেন। থানায় অভিযোগকারিণী কিশোরীও আদালতের সামনে তার সাক্ষ্যে ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলেনি। লিখিত অভিযোগ এবং আদালতের সাক্ষ্যের মধ্যে গুরুতর অসঙ্গতির কথাও এ দিন উল্লেখ করেন বিচারক।

মুক্তির পরে শাহজাদা বক্স। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র।
শাহজাদার আইনজীবী স্বপন মিত্র এ দিন জানান, শাহজাদা ও তাঁর পরিবারের লোকজনের বিচার ব্যবস্থার উপরে পূর্ণ আস্থা রয়েছে। সরকারপক্ষের আইনজীবী আমিনুদ্দিন শেখ এ দিন রায় ঘোষণার পরে বলেন, “সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবে।” তিনি জানান, কিশোরীর মা কড়েয়া থানায় ধর্ষণের অভিযোগ জানালেও পুলিশ প্রথমে শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করেছিল। শ্লীলতাহানির অভিযোগ জামিনযোগ্য হওয়ায় শাহজাদা আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে জামিন পেয়ে যান। কিশোরীর মা লালবাজারের কর্তাদের কাছে পুনরায় ধর্ষণের অভিযোগ জানান। লালবাজারের কর্তারা কিশোরীকে আদালতে পাঠান এবং বিচারকের কাছে তার গোপন জবানবন্দি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
সহকারী সরকারি আইনজীবী প্রণবেশ মণ্ডল জানান, এই মামলায় ওই কিশোরী-সহ মোট ১৩ জন সাক্ষ্য দেন। তারা অনেকে আদালতে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত পুলিশের ‘সোর্স’ হওয়ায় সে এলাকায় হুমকি দিত, ভয় দেখাত। শাহজাদার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়। তার ভিত্তিতে আদালত শাহজাদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
আদালতের রায়ে খুশি হয়নি আমিনুলের পরিবার। আমিনুলের ভাই আনোয়ার ইজহার এ দিন বলেন, “আমরা ওই কিশোরীর পক্ষ নিয়ে হাইকোর্টে আপিল করব।” একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, রায় ঘোষণার পরেই ওই কিশোরীর বাড়ির সামনে গালিগালাজ করেছে একদল যুবক। তাঁর আশঙ্কা, ওই কিশোরীর বাড়িতে হামলাও হতে পারে।
কড়েয়ার বাসিন্দা, বছর ষোলোর ওই কিশোরীর মা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাঁর মেয়েকে একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন শাহজাদা বক্স।
লালবাজারের কর্তাদের কাছে আমিনুল কড়েয়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ জানিয়েছিলেন। আমিনুলের পরিবারের অভিযোগ ছিল, তাঁকে ডাকাতির মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে বুঝতে পেরে কড়েয়া থানার সামনে গায়ে আগুন দেন ওই যুবক। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আমিনুল বেসরকারি একটি হাসপাতালে মারা যান। ওই ঘটনায় তোলপাড় হয় কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে। আমিনুলের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয় কড়েয়া থানার কয়েক জন অফিসারের বিরুদ্ধে। থানার দুই সাব-ইনস্পেক্টর এবং দুই কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়। বদলি হন কড়েয়ার তৎকালীন ওসি, ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। আমিনুলের অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় শাহজাদা ও তাঁর এক সঙ্গীকে। পুলিশ শাহজাদার সঙ্গীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেনি। ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর শাহজাদাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার চার্জ গঠন করা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। মামলার বিচার শুরু হয় মার্চ মাস থেকে।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.