কড়েয়া-কাণ্ডে মত লালবাজারের
সোর্সকে মাথায় তোলারই মাসুল গুনছে পুলিশ
সোর্স-কে মাথায় তুললে কী হয়, কড়েয়া-কাণ্ড থেকে তার শিক্ষা নিতে কলকাতার সব থানাকে বলবে লালবাজার। এ বিষয়ে থানায়-থানায় নির্দেশিকা জারির কথা ভাবছেন পুলিশ-কর্তারা। পাশাপাশি কড়েয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে সেলিম বলে এক জনের নামও উঠে এসেছে, যার সম্পর্কে পুলিশ নীরব।
কলকাতা পুলিশের সদর দফতরের এক সূত্রের দাবি: নিজেদের সোর্স শাহজাদা বক্সকে বাঁচাতে কড়েয়া থানার পুলিশ অবাঞ্ছিত তৎপরতা দেখিয়েছে। তারাই শাহজাদার স্ত্রীকে দিয়ে আমিনুলের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ দায়ের করিয়েছিল বলে লালবাজার-সূত্রের দাবি। আর এরই প্রেক্ষিতে সোর্স সম্পর্কে সতর্ক হতে চাইছেন লালবাজার-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, শাহজাদাকে মাত্রাতিরিক্ত সুযোগ দিয়ে পুলিশই যে মাথায় তুলেছিল, অভ্যন্তরীণ তদন্তে তা বেরিয়ে এসেছে। “তাই এ বার সোর্সদের কতটা সুযোগ-সুবিধে দেওয়া উচিত, সে ব্যাপারে থানায়-থানায় নির্দেশিকা পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে।” বলেন সূত্রটি।
লালবাজার-সূত্রের বক্তব্য: পুলিশের সঙ্গে দহরম-মহরমের সুবাদে শাহজাদা এলাকায় কার্যত যা খুশি করার সার্টিফিকেট পেয়ে গিয়েছিল। সূত্রটির দাবি: ডাকাতি-মামলার জেরে পুলিশ বেশ ক’বার আমিনুলের বাড়িতে হানাও দেয়। এমনকী, ওই ‘কেসের’ ভয় দেখিয়ে শাহাজাদার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে নিতেও আমিনুলকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
পুলিশি হেনস্থার অভিযোগ তুলে গত ৩ ডিসেম্বর কড়েয়া থানার সামনে গায়ে আগুন দিয়েছিলেন আমিনুল। পয়লা জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় কড়েয়া থানার যে তিন পুলিশকর্মীর দিকে আঙুল উঠেছে, তাঁরা কেন শাহাজাদাকে আড়াল করতে এতটা মরিয়া ছিলেন, এখন সেই প্রশ্ন তুলেছে খাস লালবাজার-ই। ওঁদের আপাতত সাসপেন্ড করা হয়েছে। একই সঙ্গে শাহজাদাকে কেন নিয়মিত পুলিশের গাড়িতে বসতে দেওয়া হত, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার কথায়, “পুলিশের যারা সোর্স, তাদের পরিচয় গোপন রাখাটাই নিয়ম। কড়েয়ায় তার তোয়াক্কা করা হয়নি!”

আমিনুল স্মরণ। -নিজস্ব চিত্র
শাহাজাদা-পুলিশ ‘যোগসাজসের’ উদাহরণ দিতে গিয়ে তাঁদের আইনজীবী নৌসাদ এ দিন বলেন, “সুইসাইড নোট ও ৩ ডিসেম্বরের জবানবন্দিতে তো বটেই, ১০ ডিসেম্বর কড়েয়া থানার এক এসআই-কে দেওয়া বয়ানেও আমিনুল জানিয়েছিল যে, ওকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তা-ও পুলিশ হাত গুটিয়ে থেকেছে।” আমিনুলের পরিবারের এক জনের কথায়, “শাহাজাদার দু’টো মোবাইলের কল লিস্ট ঘেঁটে যদি নিরপেক্ষ তদন্ত হয়, তা হলে পুলিশের সঙ্গে ওর আঁতাঁত পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
আমিনুলের পরিবারের দাবি: কড়েয়ায় কী ঘটেছে, আমিনুল নভেম্বরেই লালবাজারকে চিঠিতে তা জানিয়েছিলেন। ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে লালবাজার এখন যে ব্যবস্থাই নিক না কেন, তাতে আমিনুলের পরিজনেরা খুশি নন। তাঁরা চাইছেন, তিন পুলিশকর্মীকে দ্রুত গ্রেফতার করে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার হোক। সিবিআই-তদন্তও চাইছেন আমিনুলের বাবা ইজরাহুল ইসলাম। “আমার ছেলে কড়েয়া থানার সামনে দাঁড়িয়ে পুড়ল, অথচ পুলিশ দেখেও দেখল না! ও দু’-দু’বার জবানবন্দি দিল, তবু তদন্ত শুরু হল না! এর পরে পুলিশ বা সিআইডি-কে কী ভরসা? আমরা চাই, সিবিআই তদন্ত করুক।” এ দিন বলেন আমিনুলের বাবা। তাঁর আরও বক্তব্য: ৩০ নভেম্বর তাঁর ছেলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে গিয়ে চিঠি দিয়ে এসেছিলেন। আবার চিঠি দিতে যান ৩ ডিসেম্বর। সেখান থেকে ফিরেই কড়েয়া থানার সামনে গায়ে আগুন ধরান।
লালবাজারের সূত্রটির ব্যাখ্যা: চিঠি পাওয়ার পরেই স্থানীয় থানা ও সংশ্লিষ্ট ডিভিশন-কে বলা হয়েছিল খোঁজ নিতে। তাদের রিপোর্ট দেখে কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আর এগোনোর প্রয়োজন বোধ করেননি। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় আমিনুলের চিঠি নিয়ে কী করেছে, তাঁরা সে সম্পর্কে অন্ধকারে।

কড়েয়া-কাণ্ডে সামনে এল আর একটি নাম
কড়েয়ার ঘটনায় অভিযোগের তালিকায় আরও একটা নাম রবিবার উঠে এসেছে, যার কথা এত দিন জানা যায়নি।
পুলিশ-সূত্রের খবর: পুলিসের ‘সোর্স’ শাহজাদা বক্সের বিরুদ্ধে যে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে তাঁর পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম, সেই মেয়েটির মায়ের বয়ানে সেলিম নামে ওই যুবককেও দায়ী করা হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর তিনি কড়েয়া থানায় এ ব্যাপারে যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, তাতে শাহাজাদা বক্স ছাড়াও সেলিমের উল্লেখ রয়েছে। নির্যাতিতা কিশোরীর মায়ের অভিযোগ মোতাবেক, মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার টোপ দিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাঁর মেয়ে ও তেরো বছরের এক কিশোরীকে একটা ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে শাহাজাদা ও সেলিম।
শাহজাদা ধরা পড়েছে। কিন্তু সেলিম কোথায়? এ ব্যাপারে কড়েয়া থানা মুখে কুলুপ এঁটেছে।
প্রশ্ন রয়েছে আরও। অগ্নিদগ্ধ আমিনুল ৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন পাড়ার এক নার্সিংহামে। ৩১ ডিসেম্বর সকালে অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে, পর দিন যেখানে তিনি মারা যান। পরিবারের দাবি: আমিনুলের শরীরের পঁয়ত্রিশ শতাংশ পুড়েছিল। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি। তা হলে হঠাৎ অবস্থার অবনতি হল কেন?
এর পিছনেও ‘রহস্যের গন্ধ’ পাচ্ছেন পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ: ৩০ ডিসেম্বর রাতে অপরিচিত তিনটে ছেলে জোর করে নার্সিংহোমে আমিনুলের ঘরে ঢুকেছিল। বেশ কিছু ক্ষণ কাটিয়ে তারা চলে যায়। অচেনা তিন-তিনটে মুখ কী ভাবে ওখানে ঢুকতে পারল, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে কড়েয়া থানায় লিখিত আর্জি জানিয়েছে আমিনুলের পরিবার।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.