সামনে কোন পথ, প্রশ্ন রেখেই শেষ হল প্লেনাম

২৯ নভেম্বর
পচে -পড়া ভিড়ের সমাবেশে সমাপ্তি হল। নিচু তলার কর্মীদের নিয়ে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, বোঝার জন্য উপরের দিকের নেতাদের একেবারে শাখা কমিটি স্তরে গিয়ে কথা বলার নিদান গৃহীত হল। শুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার কথাও এল। তবু সমস্যার সমাধান খোঁজার প্লেনাম সিপিএমের জন্য রেখে গেল আরও বড় প্রশ্ন !
লোকসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে দলের জন্য রাজনৈতিক কৌশলগত লাইনটা এখন ঠিক কী? সিপিএমের মতো দলে বাংলা, কেরলের মতো রাজ্য শাখাগুলো আলাদা আলাদা পথে চলতে পারে কি? রাজ্য শাখা যদি যে যার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা কি আসলে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দুর্বলতাই প্রমাণ করে না? এ সব প্রশ্ন সামনে রেখেই সিপিএমের মধ্যে উঠে এল জাতীয় প্লেনামের দাবি। লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে বিশেষ করে কংগ্রেস -প্রশ্নে দলের অবস্থান ঠিক করার জন্যই এমন দাবির উত্থান। পলিটব্যুরো সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, সামনেই কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সেখানেই আলোচনা করে দেখা যাক।
প্লেনামের শেষে শুক্রবার পালাক্কাডের ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে ভিড়ের চাপে মঞ্চ প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল ! অথচ সেই মঞ্চ থেকেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট যা বললেন, তাতে স্পষ্ট কোনও বার্তাই নেই ! কংগ্রেসের অপশাসন এবং নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কিছু বাঁধা গত। দলের নেতাদেরই একাংশের বক্তব্য, এমনিতেই বামেদের অবস্থা ভাল নয়। এই ভাবে চলতে থাকলে মানুষ ভেবেই পাবেন না, কেন লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা বামেদের ভোট দেবেন ! প্রত্যাশিত ভাবেই বঙ্গ সিপিএম এই প্রশ্নে বেশি সরব। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের সাফ কথা, “নরেন্দ্র মোদীই এখন প্রথম এবং প্রধান বিপদ ! এই কথাটা আমাদের স্পষ্ট করে বলতে হবে।” পরিস্থিতি আঁচ করেই আলিমুদ্দিনের মন বুঝতে সোমবার কলকাতায় বাংলার শীর্ষ সিপিএম নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার কথা কারাটের।
কেরলের প্লেনাম ছিল রাজ্য শাখার সাংগঠনিক প্রশ্নে। গোষ্ঠী -দ্বন্দ্ব কাটানো এবং দলের মধ্যে ত্রুটি -বিচ্যুতি দূর করা, এই দু’টোই ছিল এই বিশেষ সম্মেলনের উদ্দেশ্য। রাতারাতি যে এই কাজ হয়ে যাবে না, সিপিএম নেতারাও জানতেন। তবে কারাট, এস আর পিল্লাই, সীতারাম ইয়েচুরিরা তিন দিন পালাক্কাডে বসে থেকে অন্তত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ব্যবস্থা করে যেতে পেরেছেন ! লাভালিন দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আপাতত ছাড় পেয়ে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন এখানে দলের মধ্যে যে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন, সেই পরিস্থিতিকে ব্যবহার করেই বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার দাবি প্লেনামে উঠেছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে তা আপাতত ঠেকানো গিয়েছে। ভি এস অবশ্য প্লেনামের শেষ দিনে বর্ণময় সমাবেশে থাকলেন না। পুনরাবৃত্তি হল গত বছর কোঝিকোড়ে পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনের ঘটনার। ভি এস অবশ্য দলের নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, জ্বর হয়েছে বলে থাকতে পারলেন না। গায়ে জ্বর নিয়েই দিন সকালে যে ভাবে ট্রেন ধরে তিরুঅনন্তপুরম চলে গেলেন, তাতে অন্য জল্পনার জন্ম হওয়া স্বাভাবিক। জল্পনা বেশি বাড়তে না দিতে বিজয়ন প্লেনামের জবাবি ভাষণে সরাসরি বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। কোণঠাসা ভি এস -কে আরও আঘাত করা উচিত হবে না, এমনই পরামর্শ ছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। আর দলকে একজোট রাখার বার্তা দিতে প্লেনামের শেষে ইয়েচুরি বলেছেন, “আমাদের দু’টো অস্ত্র। আমাদের আদর্শ আর দলের ঐক্য। এই দু’টো অস্ত্র দিয়েই সেই বিকল্প নীতি গড়ে তুলতে হবে, দেশবাসী যা চান।”
কেরল সিপিএম আপাতত ঠিক করেছে, দুর্নীতি থেকে শুরু করে আচরণগত সমস্যা সব সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে উপর দিকের নেতারা রাজ্যের ৩০ হাজারেরও বেশি শাখা কমিটিতে যাবেন। প্লেনামের শেষে ভাঙা হাটে দাঁড়িয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিজয়রাঘবন বলছিলেন, “সমস্যা কাটানোর রাস্তা কিন্তু দেখিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গই। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটে যেতে প্রমোদ দাশগুপ্ত প্লেনাম ডেকে সংগঠনের খতিয়ান নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক কর্তব্যও ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমরাও একই রকম চেষ্টা করলাম।”
এখন দলেই প্রশ্ন উঠেছে, এক কালের পথ -প্রদর্শক বাংলার সংগঠনকে কে বাঁধবে? রাজ্য দূরে থাক, জেলা স্তরে নেতৃত্বে রদবদলই বা শুরু হবে কবে? সাংগঠনিক প্রশ্নে আজ, শনিবার থেকে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে ফের পরীক্ষায় বসবেন বিমান বসুরা !

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.