|
|
|
|
মাওবাদী জাল কি আরও দক্ষিণে, উদ্বেগ
সন্দীপন চক্রবর্তী • পালাক্কাড
২৯ নভেম্বর |
অভ্যাস মতো অফিস থেকে বেরিয়ে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে গাড়ি ধরতে যাচ্ছিলেন ফরেস্ট ওয়ার্ডেন কে চন্দ্রন। সহকর্মী বিট অফিসার শশীকুমার তখনও অফিস থেকে বেরোননি। হঠাৎই গাছের আড়াল থেকে ছুটে এল বুলেট ! গুলির শব্দ এবং চন্দ্রনের চিৎকার শুনে বেরিয়ে এসেছিলেন শশীও। তার পরেই আতঙ্কে নালায় দু’জনের ঝাঁপ এবং ওই জল -পথ ধরেই সংরক্ষিত এলাকার বাইরে। পালানোর সময় শুধু তিনটে মুখ ঢাকা চেহারা চোখে পড়েছিল দুই বন আধিকারিকের। শুনেছিলেন আরও তিন রাউন্ড গুলির আওয়াজ।
ঘটনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার। কেরলের ‘সাইলেন্ট ভ্যালি’ সংরক্ষিত অরণ্য এলাকায়। আতঙ্কের প্রহর পেরিয়ে দুই বন অফিসার পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়েছেন। এবং কেরল পুলিশের মতে, আক্রমণকারীরা আসলে মাওবাদী। পুলিশের আশঙ্কা সত্যি হলে, পশ্চিমঘাট পর্বত উপত্যকার বনাঞ্চলে সরকারি আধিকারিকদের উপরে হামলার এই ঘটনাই সূচিত করে গেল দেশের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে মাওবাদী আনাগোনার স্পষ্ট চিহ্ন !
কেরল পুলিশ এবং বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ক’দিন আগে নীলাম্বুর অরণ্য এলাকার ওই অঞ্চলেই সশস্ত্র একটি বাহিনীকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছিলেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। পশ্চিমঘাটের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো চোরাশিকারী এবং কাঠ -মাফিয়াদের সঙ্গে এদের তফাত আছে বলেই স্থানীয় বাসিন্দা ও বন দফতরের অভিমত। তাই দুই আধিকারিক প্রাণে বেঁচে ফিরলেও সাইলেন্ট ভ্যালির ‘বাফার জোনে’র ওই ঘটনাকে হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না কেরল সরকার।
হাল্কা ভাবে নিতে চাইছে না কেরল সিপিএম -ও। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই কেরল সিপিএমের প্লেনামে ওয়ানাড়, মলপ্পুরম, কান্নুর রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলির প্রতিনিধিরা ওই এলাকার বন ও আদিবাসী এলাকায় মাওবাদী কার্যকলাপের সূত্রপাতের কথা দলীয় নেতৃত্বের নজরে এনেছেন। তাঁদের বক্তব্য, মাওবাদীরা এখনও ওখানে সরাসরি কোনও প্রকাশ্য সংগঠন খোলেনি। কিন্তু আদিবাসী এলাকায় গিয়ে তারা নিজেদের বক্তব্য প্রচার করছে এবং গ্রামবাসীদের বারণ করছে, তাদের খবর যেন পুলিশের কাছে না পৌঁছয়। অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েই এরা তামিলনাড়ু এবং কেরল সীমানা দিয়ে যাতায়াত করছে বলে সিপিএমের জেলা নেতাদের দাবি। তাঁদের আরও আশঙ্কা, পশ্চিমঘাট ও মালাবার উপত্যকায় সবুজ বাঁচানোর জন্য কস্তুরীরঙ্গন কমিটির যে রিপোর্ট নিয়ে ওই বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তার ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে মাওবাদীরা।
বস্তুত, সম্প্রতি দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে তামিলনাড়ু পুলিশও দুই রাজ্যের সীমানাবর্তী এলাকায় মাওবাদী কার্যকলাপ চোখে পড়ার কথা রিপোর্ট করেছে। এ নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ স্পষ্ট করেছে তারা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কোয়ম্বত্তূরের সিপিএম সাংসদ পি আর নটরাজনও। কেরলের যে এলাকায় এই প্রাথমিক মাওবাদী তৎপরতার অভিযোগ আসছে, তার এক দিকে যেমন কোয়ম্বত্তূর, সালেম হয়ে সহজেই তামিলনাড়ু পৌঁছনো সম্ভব। তেমনই আবার উত্তরে কর্নাটকের সঙ্গেও যোগসূত্র আছে। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উদ্বেগ হল, অন্ধ্রপ্রদেশের পরে এই এলাকা দিয়েই আরও দক্ষিণে নতুন ঘাঁটির সন্ধান করছে মাওবাদীরা। নিরস্ত্র বন আধিকারিকদের প্রাণে মেরে না -ফেলে ভয় পাওয়ানো এবং নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে। এবং এই সূত্রেই উঠে আসছে নয়া আশঙ্কা নেপালের পশুপতি থেকে অন্ধ্রের তিরুপতি পর্যন্ত মাওবাদীদের কাঙ্খিত ‘রেড করিডরে’র বাইরেও তারা প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে ! এমতাবস্থায় কেরল সিপিএম চাইছে মাওবাদী বিপদ অঙ্কুরেই বিনাশ করতে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ বিজয়রাঘবনের কথায়, “প্রশাসন তার কাজ করবে। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে, আদিবাসী এলাকায় মাওবাদীদের মতো কোনও শক্তি যাতে জনভিত্তি গড়ার সুযোগ না পায়।” বিষয়টিকে যে গুরুত্ব দিয়ে এখনই মোকাবিলা করা প্রয়োজন, প্লেনামের প্রতিনিধিদের এই দাবি মেনে নিয়েছেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব। একান্ত আলোচনায় তাঁরা এ -ও জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের অভিজ্ঞতা তাঁদের কাজে লাগবে। |
|
|
|
|
|