|
|
|
|
অভ্যাস বদলে মোদীর হয়ে ভোটপ্রার্থী সঙ্ঘ
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি
২৯ নভেম্বর |
প্রায় নয় দশকের ইতিহাসে এই প্রথম বার। এ যাবৎ প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরেই সরিয়ে রেখে এসেছে আরএসএস। কিন্তু এই প্রথম লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত।
১৯২৫ সালে কেশব বলিরাম হেগড়েওয়াড় আরএসএসের প্রতিষ্ঠার পরে ৮৮ বছর কেটে গিয়েছে। মূলত সামাজিক আন্দোলনেই জড়িয়ে থেকেছে আরএসএস। বিজেপির যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সঙ্ঘ বকলমে নেতৃত্ব নিলেও প্রকাশ্যে কখনও রাজনীতিতে সামিল হয়নি। বরাবর এ কথাই তারা বলে এসেছে, বিজেপি একটি রাজনৈতিক দল। তাদের রাজনীতি কোন পথে এগোবে, তারা তা নিজেরাই স্থির করে। অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী জমানাতেও আরএসএস সে ভাবে বিজেপির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাতে পারত না। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের মাত্রাছাড়া অন্তর্কলহের প্রেক্ষাপটে সঙ্ঘ নেতৃত্ব এখন বিজেপির রাশ নিজের হাতে তুলে নিয়েছে।
সঙ্ঘের শীর্ষ সূত্রের মতে, আরএসএসের হস্তক্ষেপেই নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী করেছে বিজেপি। এ নিয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী বা সুষমা স্বরাজের আপত্তি দূর করার জন্যও সঙ্ঘ নেতৃত্বই উদ্যোগী হয়েছেন। স্বয়ং ভাগবত নিজে আডবাণী ও সুষমার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। গোটা দল যাতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করে, সে জন্য এখনও প্রায় নিয়মিত সঙ্ঘ নেতারা দিল্লি এসে বিজেপি নেতাদের পরামর্শ দিয়ে যান। কিন্তু ঘর সামলানোর পাশাপাশি লোকসভা ভোটে দিল্লির মসনদ এখন পাখির চোখ সঙ্ঘ ও বিজেপির। এ জন্য সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখাকে সক্রিয় করতে চান আরএসএস নেতৃত্ব। তাই এত দিনের অবস্থান বদলে সঙ্ঘ নেতৃত্ব এখন প্রকাশ্যেই ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন জানাতে শুরু করেছেন।
সঙ্ঘ সূত্রের মতে, সম্প্রতি দুটি সভায় মোহন ভাগবত এই আবেদন জানিয়েছেন। সঙ্ঘ নেতারা বলছেন, নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আম জনতার আকর্ষণ গোটা দেশ জুড়েই দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে যুবক ও মহিলাদের মধ্যে মোদী খুবই জনপ্রিয়। এই জনসমর্থনকে ভোটমুখী করাটাই এখন প্রধান কাজ। সঙ্ঘের এক নেতা বলেন, “সম্প্রতি আমি বিহারে গিয়েছিলাম। সেখানে এক প্রত্যন্ত গ্রামে অনেক মহিলাই বলেন, এক বার বিজেপিকে ভোট দিয়ে দেখেছি, কংগ্রেসকেও ভোট দিয়েছি। এ বারে মোদীকে ভোট দিয়ে দেখতে চাই।” সঙ্ঘের ওই নেতার মতে, মোদীকে ঘিরে এতটাই আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, সেখানে বহু মানুষ জানেনই না, মোদী বিজেপিরই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এই সমস্যা মোকাবিলায় রাজ্যে রাজ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে মোদী মানেই বিজেপি। মোদী মানেই পদ্মফুল। কিন্তু সঙ্ঘ নেতৃত্বের ধারণা, এই অবস্থা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোটের ওপর একই রকম। মোদীকে ঘিরে এই উন্মাদনা বুথ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। সে জন্য বিজেপি যা করার করুক, সঙ্ঘ নিজে থেকেও দেশজুড়ে সমান্তরাল প্রচার করবে, যাতে মোদী অনুগামীরা বিজেপিকেই ভোট দেন। ভাগবত প্রথম এই আবেদন করেছেন নাগপুরের দশেরার সভায়। এখন তিনি যেখানেই সভা করছেন, সেখানে একই কথা বলছেন। সঙ্ঘের নেতা মনমোহন বৈদ্যকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে বিভিন্ন শহরে গিয়ে ছোট ছোট গোষ্ঠীতে যুবকদের আরও বেশি প্রশিক্ষিত করা যায়। তারা আরও প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে মানুষকে বিজেপি ও মোদী সম্পর্কে জানাবেন। |
|
|
|
|
|