ইতিহাস -পুরাণও বলে অরুণাচল ভারতের, চিনকে বার্তা প্রণবের

২৯ নভেম্বর
চিনের নাম না করে আরও এক বার উত্তরের এই প্রতিবেশী দেশটির উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন, “অরুণাচলপ্রদেশ শুধু দেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়, নয়াদিল্লির পুবে তাকাও নীতির অন্যতম অংশীদার। ভারতীয় মননে একটি মৌলিক স্থান জুড়ে রয়েছে হিমালয়ের পাদদেশের এই রাজ্য।” পাশাপাশি তিনি বিশদে জানালেন অরুণাচলের সঙ্গে নয়াদিল্লির আস্থার সম্পর্ক আরও মজবুত করতে এই রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্র কতটা আগ্রহী। উত্তর -পূর্ব ভারতকে ভিত্তি করেই যে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে চায় দিল্লি, রাষ্ট্রপতি তুলে ধরলেন সে কথাও।
কূটনীতকরা আঁচ করেছিলেন, রাষ্ট্রপতি অরুণাচলে গেলেই চিন কিছু না কিছু মন্তব্য করবে। বাস্তবেও ঘটেছে তাই। রাষ্ট্রপতি আজ বিকেলে অরুণাচলে পা রাখার কিছু ক্ষণ পরেই চিনের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দেয়, “সীমান্তের পূর্ব অংশের বিতর্কিত এলাকা নিয়ে বেজিংয়ের অবস্থান স্পষ্ট অপরিবর্তিত। আমরা চাইছি, সীমান্ত সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে, এমন কিছু করা থেকে ভারত সংযত থাকুক। সীমান্ত সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে শান্তি বজায় রেখে যৌথ ভাবে এগোনোই ভাল।”
অতীতে রাষ্ট্রপতি থাকাকালে প্রতিভা পাটিল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের অরুণাচল সফরের পর আরও কঠোর শব্দে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ওয়েন জিয়াবাও প্রশাসন। কিন্তু ভারত যে সবে পরোয়া করছে না, সেই বার্তা দিতে নয়াদিল্লি বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রপতির দু’দিনের অরুণাচল সফর কৌশলগত বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে বড় কথা, আজ অরুণাচল সফরে গিয়ে সেখানকার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেন রাষ্ট্রপতি।
সেখানে কী বললেন তিনি?
ভারতীয় মননে, ইতিহাস পুরাণে অরুণাচলের মৌলিক স্থানের কথা তুলে ধরলেন বক্তৃতায়। বোঝাতে চাইলেন, ঐতিহাসিক ভাবেই এই ভূখণ্ড ভারতের অংশ। রাষ্ট্রপতির কথায়, “অরুণাচলের ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। পুরাণ -মহাভারতেও এর উল্লেখ রয়েছে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, পরশুরাম এখানে এসে তাঁর পাপস্খালন করেছিলেন, ব্যাসদেব এখানে তপস্যা করেন। কৃষ্ণ -রুক্মিনীর বিয়েও হয় এখানেই।”
চিনের সঙ্গে সীমান্ত -বিরোধ নিয়ে আলোচনা ২০০৩ -এর পরে আর তেমন না এগোলেও উভয় পক্ষই সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার উপরে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এখন। কিন্তু অরুণাচলের ব্যাপারে বেজিং কতটা স্পর্শকাতর, তা আজ ফের বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের বিবৃতি। কম গুরুত্বপূর্ণ নয় নয়াদিল্লির অবস্থানও। তিব্বতে যে ধরনের পরিকাঠামো উন্নয়ন করেছে চিন, সেই তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে অরুণাচল। কিন্তু ব্যাপারে অরুণাচলে যাতে কোনও অসন্তোষ তৈরি না হয় দিল্লি নজর দিচ্ছে সে দিকে। অরুণাচলবাসীকে সেই বার্তা দিতে প্রণববাবু আজ বলেন, “এটা অত্যন্ত খুশির বিষয়, কয়েক মাসের মধ্যেই অরুণাচলে প্রথম ট্রেন চলবে। প্রায় ৫৮ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ তৈরি হতে পারে রাজ্যে। তার মধ্যে ৪৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
অরুণাচলবাসী আগ্রহের কথা মাথায় রেখে প্রণববাবু বলেছেন, “দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে অরুণাচলের যোগাযোগের দরজা খুলে দিতেও নয়াদিল্লি সচেষ্ট।” মনমোহন চিন সফরেও এই প্রসঙ্গ তোলেন। কিন্তু তিব্বতের দরজা খোলার ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে বেজিংয়ের। এই সূত্রে বেজিংকেও বার্তা দেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর কথায়, “আমাদের পুবে তাকাও নীতির মূল দর্শনই হল এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। নিয়ে প্রতিবেশি দেশগুলিকে অংশীদার হিসেবে পেতে চায় দিল্লি।” সাউথ ব্লকের এক কূটনৈতিক কর্তার মতে, অরুণাচল নিয়ে রাষ্ট্রপতি আজ যে ভাবে দিল্লির দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট করলেন, তা মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিধানসভায় তাঁর বক্তৃতার শেষ লাইনটিও। “আশা করি অরুণাচল ভারতের বৈচিত্রময় রাজ্যগুলির মধ্যে একটা উজ্জ্বল মণি হয়ে উঠবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.