|
|
|
|
ফাঁকা মাঠে পাটকে গোল প্লাস্টিকের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৯ নভেম্বর |
মন্ত্রিসভায় বাংলার কোনও পূর্ণমন্ত্রী নেই। সেই সুযোগে ফাঁকা মাঠে ফের পাট-কে গোল দিয়ে গেল প্লাস্টিক!
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকে চিনি প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে চটের বস্তার বাধ্যতামূলক ব্যবহার এক ধাক্কায় কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হল ২০ শতাংশে। আবার খাদ্যশস্য প্যাকেজিংয়ে চটের বস্তার বাধ্যতামূলক ব্যবহার ৯০% রাখা হল ঠিকই, কিন্তু সেই শর্তে বড়সড় ফাঁকও রাখা হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, চাহিদা মতো চটের বস্তার জোগান না থাকলে খাদ্যশস্য প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে তা মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যবহার করলেই চলবে।
পাটচাষি ও চটকল শ্রমিকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ১৯৮৭ সালে একটি আইন পাশ করেছিল কেন্দ্র। যে আইন অনুযায়ী খাদ্যশস্য ও চিনি প্যাকেজিংয়ে চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এই দুই ক্ষেত্রে আগে ১০০ শতাংশ চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক ছিল। পরে দুটি কারণে তা লঘু হতে শুরু করে। এক, প্লাস্টিক শিল্পের চাপ। দুই, চটের বস্তার চাহিদা ও জোগানে ফারাক।
কিন্তু সেই পরিস্থিতি সত্ত্বেও দু’বছর আগে পর্যন্ত খাদ্যশস্য ও চিনি প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক ছিল। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার বারবার চাপ তৈরি করলেও, নিয়ম শিথিল করতে দেননি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বাধা দিয়েছিলেন প্রাক্তন দুই কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দীনেশ ত্রিবেদীও। পাটচাষিদের স্বার্থ রক্ষায় সরব ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিও। কিন্তু এখন মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটিতে বাংলার কোনও প্রতিনিধিই নেই। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিন জন প্রতিমন্ত্রী থাকলেও তাঁরা কেউই মন্ত্রিসভার কোনও কমিটির সদস্য নন। ফলে বস্ত্র মন্ত্রক বাধ্যতামূলক চটের বস্তা ব্যবহারের শর্ত শিথিল করলেও কেউই তাতে বাধা দেননি।
বস্ত্রমন্ত্রী কে এস রাওয়ের অবশ্য বক্তব্য, “চটের বস্তার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিপুল ফারাক রয়েছে। সেই কারণেই শর্ত শিথিল করতে হয়েছে।” কিন্তু সরকারের একটি সূত্র বলছে, যে হারে শর্ত শিথিল করা হয়েছে জোগান ততটা খারাপ নয়। বরং চিনি মিল মালিক এবং প্লাস্টিক লবির চাপই শর্ত শিথিলের প্রধান কারণ। এমনিতেই বাধ্যতামূলক ব্যবহারের শর্ত বহু চিনি কলই মানে না। এ ব্যাপারে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও কেন্দ্র এখনও কিছুই করেনি। তার ওপর বাধ্যতামূলক ব্যবহারের শর্ত এক ধাক্কায় এতটা শিথিল করায় সামগ্রিক ভাবে পাট শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বস্ত্র মন্ত্রকের এই প্রস্তাব নিয়ে কৈফিয়ত তলব করে ২৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় একটি চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় বস্ত্র সচিবের কাছে। কিন্তু কে এস রাও এবং শরদ পওয়ারের চাপে শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে তীব্র অসন্তোষ জানিয়ে চটকলগুলির সংগঠন আইজেএমএ-র সভাপতি রাঘব গুপ্ত বলেন, “চাহিদার অভাবে একেই পাঁচটি চটকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে আরও চটকল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্তত তিরিশ হাজার শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।” কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী যে জোগানের অভাবের যুক্তি দিয়েছেন, তা-ও খারিজ করেছেন রাঘববাবু। তাঁর বক্তব্য, “চটকলগুলির সমস্যা চাহিদার অভাব। সরকার চাইলে খাদ্য ও চিনি প্যাকেজিংয়ে ১০০% চটের বস্তা দিতে আমরা দিতে পারি। আসলে মন্ত্রিসভার বৈঠকের জন্য বস্ত্র মন্ত্রক যে নোট তৈরি করেছে, তাতে কারচুপি রয়েছে। চাহিদার মিথ্যা হিসাব দেখিয়ে জোগানের সঙ্গে ফারাক দেখানো হয়েছে।”
পাটচাষি ও শিল্পের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে নিয়ে ক’দিন আগে উত্তরবঙ্গের এক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পুনরুজ্জীবনের জন্য একটি বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর সরকার। তার পরেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের জন্য আজ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল নেতৃত্বও। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী বলেন, “এক সময় কুটির শিল্পকে বাঁচাতে খাদির প্রসারের কথা বলেছিলেন মহাত্মা গাঁধী। এখন বোঝা যাচ্ছে কংগ্রেস তা ভুলে গিয়েছে। যে ভাবে চটের বস্তার বাধ্যতামূলক ব্যবহারের শর্ত লঘু করা হয়েছে তা গরিব-বিরোধী। ভুল তথ্য ও হিসাব দেখিয়ে পাট শিল্পকে পথে বসাচ্ছে কেন্দ্র।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা জুট বোর্ডের সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্যও সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের নীতির কারণেই চটশিল্প ধুঁকছে। বাংলাদেশ সরকার ভারতে পাট রফতানির জন্য ১০ শতাংশ ভরতুকি দিচ্ছে। তাতে দেশের চটকলগুলি প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না। তার ওপর বাধ্যতামূলক চটের বস্তা ব্যবহার কমিয়ে দিলে শিল্প আরও মার খাবে। প্রদীপবাবু জানান, জুট উৎপাদক কারখানাগুলির সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনি শীঘ্রই কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানাবেন। |
|
|
|
|
|