হাসপাতালই সংক্রমণের আঁতুড়ঘর!
উচ্ছিষ্ট খাবার, ছেঁড়া কাপড় থেকে শুরু করে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, রক্তমাখা গজ, তুলো-সহ যাবতীয় চিকিৎসা বর্জ্যও দিনের পর দিন ডাঁই হয়ে পড়ে থাকছে হাসপাতাল চত্বরের ভিতরেই জঞ্জালের স্তূপে। কুকুর-বিড়ালে সেই জঞ্জাল নিয়ে টানাটানি করে। জঞ্জালের স্তূপ ঘেঁটে পুরনো সিরিঞ্জ সংগ্রহ করে বাইরে বিক্রির কাজও চলে। ইঁদুর, ছুঁচোর যথেচ্ছ উৎপাত। আবর্জনার সেই স্তূপের পাশ দিয়েই প্রতিদিন রোগীদের যাতায়াত করতে হয়। এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ করেও ফল না হওয়ায় হতাশ চিকিৎসক মহল। ঘটনাস্থল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। রুগ্ণ নবজাতকদের চিকিৎসাকেন্দ্রের (সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট) বিল্ডিংয়ের পাশেই এমন জঞ্জালের স্তূপ নিয়ে একাধিক বার লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। ওই জঞ্জালের স্তূপ থেকে রোগীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কার কথাও তাঁরা জানিয়েছেন। এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, “দুর্গন্ধের জন্য সারা বছর নাকে রুমাল চাপা দিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হয়। বর্ষার সময়ে আবার ওই সব জঞ্জাল জলে ভাসতে থাকে। একেবারে নারকীয় পরিবেশ।”
জঞ্জালের এই স্তূপ যে হাসপাতাল চত্বরে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার পথে বড় বাধা, সে কথা স্বীকার করেছেন কর্তৃপক্ষও। তার পরেও কেন তাঁরা এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেন না? হাসপাতালের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বলেন, “আমাদের অত লোকবল নেই। তাই সব দেখেও চুপ করে থাকতে হয়। পুরসভাকে লিখেছি। যত দিন ওঁরা ব্যবস্থা না নেবেন, তত দিন ওই জায়গাটা সাফ হওয়ার আশা নেই।” |
পুরসভার জঞ্জাল বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, “হাসপাতালের ভিতরের জঞ্জাল পরিষ্কারের দায়িত্ব তো ওদের নিজেদেরই। যদি ওরা না পারে, তা হলে আমাদের সেটা লিখিত ভাবে জানাতে হবে। জঞ্জাল পরিষ্কারের জন্য টাকাও দিতে হবে। তা না হলে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।”
সুপার পার্থ প্রধান স্বীকার করেছেন, ওই জায়গাটা ধাপার মতো হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “শুধু হাসপাতালের বর্জ্য তো নয়, বাইরে থেকেও লোকেরা এসে সেখানে জঞ্জাল ফেলে। আশপাশের দোকানিরা এসে তাঁদের জঞ্জাল ফেলে যান। এমনকী, দিন কয়েক আগে কয়েক জন এসে একটি ভাঙা গাড়ির টায়ার ও যন্ত্রাংশ ফেলে গেলেন।”
প্রশ্ন হল, হাসপাতাল চত্বরেই এমন ভ্যাট তৈরি হল কী ভাবে? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের ভিতরেই একটি বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল দীর্ঘ দিন। বাড়িটিকে মজা করে চিকিৎসকেরা ‘ভূতের বাড়ি’ বলতেন। সেই বাড়ি ভেঙে সেখানে একটি ন’তলা বিল্ডিং তোলার প্রস্তাব পাশ হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। বাড়ি ভাঙা হয়ে যায়, কিন্তু নতুন বাড়ি আর ওঠেনি। বরং ওই জায়গায় অবাধে জঞ্জাল ফেলার রেওয়াজ শুরু হয়। হাসপাতালকর্মী, তাঁদের দেখাদেখি রোগীর বাড়ির লোকেরা এবং এখন স্থানীয় বহু মানুষ সকলের কাছেই জঞ্জালের ভ্যাট হয়ে উঠেছে হাসপাতাল চত্বরের ওই অংশটি।
রোগীদের স্থান সঙ্কুলান ন্যাশনালে একটা বড় সমস্যা। কর্তৃপক্ষ বারবার জানিয়েছেন, নতুন বাড়ি তৈরি হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ সেখানে স্থানান্তরিত হবে। কিছু বিভাগের শয্যাও বাড়ানো হবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই কাজ শুরুই হয়নি। পরিবর্তে ওই বাড়ির সামনে জঞ্জালের ভ্যাটটি আরও বড় হতে শুরু করেছে। সুপার বলেন, “হাসপাতালের ওই অংশে ভূগর্ভস্থ পার্কিং লট এবং ‘মেটারনিটি অ্যান্ড চাইল্ড হাব’ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই কাজ শুরু হয়ে গেলে হয়তো এই উপদ্রব এড়ানো যাবে।” কবে শুরু হবে কাজ? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ফাইল চালাচালি চলছে। এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। |