এক বছরেও মজুরি মেলেনি, অভিযোগ পুরুলিয়ার হুড়ায়
ছর গড়িয়ে গেলেও মজুরির এক টাকাও মেলেনি। এই অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের ৩৫ জন শ্রমিক। পুরুলিয়ার হুড়া ব্লকের দলদলি পঞ্চায়েতের তিলগোড়া গ্রাম সংসদের ঘটনা। বুধবারই এ নিয়ে তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিডিওকে একটি চিঠি দিয়েছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রায় বছর খানেক আগে তাঁরা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে এলাকার একটি রাস্তা সংস্কারের কাজ করেছিলেন। তারই প্রাপ্য মজুরি তাঁদের দেওয়া হয়নি। হুড়ার বিডিও সুব্রত পালিত বলেন, “আমি সবে বিষয়টি জেনেছি। ঠিক কী কারণে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক আটকে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত বছর পুজোর পরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে পঞ্চায়েতের মধুবন গ্রাম থেকে ছামনিগোড়া পযর্ন্ত একটি মোরাম রাস্তা সংস্কারের কাজ হয়েছিল। ওই কাজ শেষ হওয়ার পরে প্রায় সব সংসদ এলাকার শ্রমিকদের মজুরি মিটিয়ে দেওয়া হলেও তিলগোড়া গ্রামের শ্রমিকেরা মজুরি পাননি বলে অভিযোগ। প্রাণকৃষ্ণ সোরেন, সত্যরঞ্জন মুর্মু, নির্মলকুমার সোরেন, রতন হাঁসদা, জলেশ্বর মুর্মু, ছুটুবালা কিস্কুরা বলেন, “বহু সময়ই পুরো রাস্তার কাজ শেষ না হলে মজুরি মেটানো হয় না। কাজ শেষ হওয়ার পরে মাপজোক-সহ নানা ঝামেলা থাকে। আমরা ভেবেছিলাম এ সব কারণেই হয়তো মজুরি দিতে দেরি হচ্ছে।” তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, জব-সুপারভাইজার বা পঞ্চায়েত, কারো কাছেই তাঁদের অ্যাকাউন্ট নম্বর ছিল না। ফলে মাস্টাররোলে তাঁদের নাম ওঠেনি। তা জানতে পেরে পরে গত মার্চ মাসেই পঞ্চায়েতে গিয়ে ওই ৩৫ জন শ্রমিক নিজেদের অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা দেন। কিন্তু তার পরেও মজুরি দেওয়ার ব্যাপারে জব-সুপারভাইজার তেমন গা করেননি বলে অভিযোগ।
এ সবের মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট এসে পড়ে। পঞ্চায়েতের ক্ষমতারও হাত বদল হয়। নতুন পঞ্চায়েত গঠন হওয়ার পরে এক দিন তাঁরা হঠাৎই জানতে পারেন, কিছু শ্রমিক পঞ্চায়েত ভোটের আগেই নিজেদের প্রাপ্য টাকা পেয়ে গিয়েছেন। তার পরে প্রাপ্য মজুরি উদ্ধারে শেষমেশ বিডিওর দ্বারস্থ হলেন ওই শ্রমিকেরা। প্রাণকৃষ্ণ সোরেন, সত্যরঞ্জন মুর্মু, জলেশ্বর মুর্মুদের দাবি, “জব-সুপারভাইজারকে না দিয়ে সরাসরি পঞ্চায়েতে গিয়ে আমরা অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা দিয়েছিলাম। তাতে জব-সুপারভাইজার ক্ষুব্ধ হন। আর তার জেরেই সম্ভবত অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা দিয়েও আমরা এখনও টাকা পাইনি” জব-সুপারভাইজার রেবতী মাঝির অবশ্য যুক্তি, “ওই শ্রমিকেরা আমার কাছে তো তাঁদের অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা দেননি। কী করে মাস্টাররোল তৈরি করব?” পরে অবশ্য পঞ্চায়েতে অ্যাকাউন্ট নম্বর জমার খবর জানতে পেরে তিনি ওই শ্রমিকদের মাস্টাররোল তৈরি করে পঞ্চায়েতে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। যদিও কাজের আবেদনপত্রেই কেন ওই শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা নেওয়া হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাস্তা সংস্কারের সময় সিপিএমের দখলে ছিল ওই পঞ্চায়েত। বর্তমানে ক্ষমতায় তৃণমূল। প্রাক্তন প্রধান সিপিএমের নারান মুদি বলেন, “ঠিক কী কারণে ওই শ্রমিকদের পারিশ্রমিক আটকে রয়েছে, তা এখন আমার পক্ষে বলা মুশকিল। আমরা এখন আর ওই পঞ্চায়েতের দায়িত্বে নেই।” তাঁর দাবি, “সিপিএম ক্ষমতায় থাকলেও ওই গ্রাম সংসদ তৃণমূলের দখলে ছিল। শ্রমিকেরা অ্যাকাউন্ট নম্বর পঞ্চায়েতে জমা করেছেন বলেই যাবতীয় ক্ষোভ। তাই এলাকায় যিনি ওই শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেননি।” উল্টো দিকে, তিলগোড়া গ্রাম সংসদের গত বারের তৃণমূল সদস্য মতি সোরেনের যুক্তি, “কাজ আমরা করিয়েছি। ওই শ্রমিকেরা আমাদের এড়িয়ে পঞ্চায়েতে অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা দিয়েছে। এতে তো একটা ফাঁক তৈরি হবেই! সেটাই হয়েছে।”
শ্রমিকদের মজুরি না মেলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চায়েতের নতুন প্রধান তৃণমূলের প্রভাসচন্দ্র বাউড়ি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.