সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহরমপুর শহরের জনসংখ্যা ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে রাস্তা ও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “অপরিকল্পিত ভাবে বেড়ে প্রাচীন ওই শহরকে রাজ্য সরকার ‘সি ক্যাটাগরি’তে ফেলে রেখেছিল। ফলে আর্থিক বরাদ্দও কম ছিল। অনেক লড়াইয়ের পর মাস দু’য়েক আগে ‘সি ক্যাটাগরি’ থেকে ‘বি ক্যাটাগরি’তে উন্নীত হয়েছে। এ বার থেকে আগের থেকে বেশি টাকা বরাদ্দ হবে। ওই বাড়তি টাকা পেলে আগের থেকে বেশি কাজ করা যাবে। তখন রাস্তা ও নিকাশি ব্যবস্থারও উন্নতি করা সম্ভব হবে। তবে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা বহু প্রাচীন ও ঘিঞ্জি শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জমির অভাবও বড় কারণ। জমির অভাবে অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মাফিক রাস্তা ও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হচ্ছে না।”
বহরমপুর কেন্দ্রীয় জেলখানার পিছন থেকে শুরু করে সৈয়দাবাদ এলাকা পর্যন্ত টানা ৫ কিলোমিটার ভাগীরথীর পাড় বরাবর রয়েছে বেশ কয়েকটি কলোনি। বরাবরের মতো এ বারের পুরভোটেও ইস্যু ছিল ওই কলোনি। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের অভিযোগ, “বিরোধী শূন্য বহরমপুর পুরসভা ১৫ বছরেও কেন কলোনির লোকদের স্থায়ী পাকা ঘরের ব্যবস্থা করেনি? তার জবাব কে দেবে?” |
পুরপ্রধানের পাল্টা আক্রমণ, “কলোনির ওই জমির মালিক রাজ্য সরকার। ওই জমির পাট্টা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কেবল রাজ্য সরকারের। বাম বা তৃণমূল কোনও সরকারই কলোনির লোকদের ওই জমির পাট্টা দেয়নি। বস্তির লোকদের পাট্টা দিলেই তাঁদের বিনা খরচে কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে বহরমপুর পুরসভা বহুতল আবাসন গড়ে দেবে।”
শহরের বুক চিরে চলে দিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। শহরের পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী। আর পূর্ব সীমানা দিয়ে চলে গিয়েছে লালগোলা-কৃষ্ণনগর শাখার রেললাইন। বহরমপুর শহরে ঢোকার মুখে ওই রেললাইনে দু’টি রেলগেট আছেপঞ্চাননতলা ও চুঁয়াপুরে। কিন্তু সেখানে উড়ালপুল নেই। ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচলের কারণে ওই দু’টি রেলগেট ২৪ ঘণ্টায় ৩২ বার বন্ধ করা হয়। উড়ালপুল না থাকায় যানজটে নাকাল হতে হয় শহরের মানুষকে। প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের অভিযোগ, “উড়ালপুল করার নাম করে চুঁয়াপুর রেলগেটের দুই পাশের দোকানঘর ভেঙেছে রেল ও পুরসভা। কিন্তু তার দু’ মাস পরেও রেল কেন কাজ শুরু করল না?”
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর পাল্টা অভিযোগ, “নিয়ম অনুসারে উড়ালপুল তৈরির খরচের অর্ধেক কেন্দ্রের ও অর্ধেক রাজ্যের। কিন্তু রাজ্য একটি পয়সাও দেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় ওই উড়ালপুলের জন্য অজস্র বার আবেদনেও তিনি সাড়া দেননি। আমি ওই মন্ত্রকে যাওয়ার পর ওই দু’টি উড়ালপুলের জন্য পুরো টাকাই রেল বরাদ্দ করেছে। কাজের ঠিকাদার নিয়োগ ও শিলান্যাস হয়ে গিয়েছে। কেবল প্রয়োজন ওই উড়ালপুলের নকশার অনুমোদন। সেই অনুমোদন দেবে রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজ্য সরকার রেলের পাঠানো উড়ালপুলের নকশা অনুমোদন না করে মাস তিনেক ধরে আটকে রেখেছে।” |