একমাত্র শিক্ষক ছুটিতে
তালাবন্ধ স্কুলে শিক্ষকের অপেক্ষায় শোভন-উমারা
স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষক। তিনি অসুস্থ হয়ে ছুটি নেওয়ায় কার্যত তিনমাস তালাবন্ধ হয়ে রয়েছে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া চক্রের বড়বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ৪২ জন পড়ুয়া। সিলেবাস শেষ হয়নি। পড়ুয়াদের বার্ষিক মূল্যায়ন আদৌ হবে কিনা জানেন না অভিভাবকেরা। টানা স্কুল বন্ধ থাকায় ‘টিসি’ নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হওয়ারও জো নেই।
জঙ্গলেঘেরা বড়বাড়ি গ্রামে ৮০টি পরিবারের বাস। বেশির ভাগই কৃষিজীবী। গ্রামের মাঝে রয়েছে এই স্কুল। নিজস্ব ভবন, রান্নাঘর ও স্টোররুম, পড়ুয়াদের শৌচাগার, ডিপ ডিউবওয়েলের মাধ্যমে পানীয় জল-সহ উপযুক্ত সব পরিকাঠামোও রয়েছে। অথচ শিক্ষকের অভাবে বারবার ব্যাহত হচ্ছে পড়াশোনা। গ্রামবাসীরা জানালেন, আগে স্কুলে এক জন শিক্ষক ও এক জন শিক্ষিকা ছিলেন। ২০১০ সালে ‘টিচার ইন চার্জ’ শিবরাম পাড়ুই বদলি নিয়ে সবংয়ে চলে যান। তখন ‘টিচার ইন চার্জে’র দায়িত্ব বর্তায় সহ-শিক্ষিকা রূপালি গুঁইনের উপর। রূপালিদেবী প্রায় বছর খানেক একা স্কুল চালান। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সহ-শিক্ষক পদে যোগ দেন দুরন্ত দাস। দুরন্তবাবুর বাড়ি ডেবরা থানার নিজপাপান গ্রামে। ২০১২ সালের জুনে রূপালিদেবী বদলি নিয়ে ঝাড়গ্রামে চলে যান। ফের এক শিক্ষকের ঘাড়ে দায়িত্ব বর্তায়। অভিভাবকদের অভিযোগ, দুরন্তবাবু একা শিক্ষক হওয়ায় তিনি না এলেই স্কুল বন্ধ থাকত। চলতি বছর অগস্টের শেষে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন। সেপ্টেম্বরে একদিনও স্কুল হয়নি। বন্ধ ছিল মিড ডে মিলও।
ঝাড়গ্রামের বড়বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
বৃহস্পতিবার স্কুল প্রাঙ্গণে দেখা মিলল প্রথম শ্রেণির উমা মাহাতো, দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্বজিৎ মাহাতো, চতুর্থ শ্রেণির শোভন মাহাতো, সবিতা মাহাতোদের। খুদে পড়ুয়াদের বক্তব্য, “রোজই এখন ছুটি। বাড়িতে সারাদিন ভাল লাগে না। প্রতিদিন একবার করে এসে দেখে যাই, কেউ এসে স্কুল খুলল কি না।” অভিভাবক বাবুলাল মাহাতো, দুলাল মাহাতো, সাবিত্রী মাহাতোরা জানালেন, গত সেপ্টেম্বরে মানিকপাড়া বিদ্যালয় চক্রের প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শককে লিখিত ভাবে স্কুল বন্ধ থাকার বিষয়টি জানানো হয়। পুজোর ছুটির পরে সাময়িক ভাবে স্থানীয় লালগেড়িয়া গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের সহ-শিক্ষক হিরম্বর মাহাতোকে কিছুদিনের জন্য বড়বাড়ি স্কুলে পাঠানো হয়। হিরম্বরবাবু বলেন, “২৫ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আমাকে বড়বাড়ি স্কুলে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছিল। দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর স্কুলে তালা লাগিয়ে চাবি ও খাতাপত্র মানিকপাড়া এসআই অফিসে জমা দিয়ে এসেছি।” তিনি চলে যেতেই ১৩ নভেম্বর থেকে টানা বন্ধ রয়েছে স্কুল। স্কুলের মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমা মাহাতো, বিমলা মাহাতোরা বলেন, “স্কুল বন্ধ থাকায় মজুত চালে পোকা লেগেছে। আমাদেরও কাজকর্ম বন্ধ।” বড়বাড়ি গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি ধরণীধর মাহাতো বলেন, “দু’ কিমি দূরে বাঁশতলায় প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। কিন্তু ‘টিচার ইন চার্জ’ না আসায় পড়ুয়াদের ট্রান্সফার সার্টিফিকেটও দেওয়া যাচ্ছে না।” দু-এক জন অভিভাবক অবশ্য ৮কিমি দূরে মানিকপাড়ার বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করেছেন।”
কেন এই পরিস্থিতি? মানিকপাড়া প্রাথমিক চক্রের স্কুল পরিদর্শক শুভজিৎ মুখোপাধ্যায় দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে ছুটিতে আছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় নি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) কবিতা মাইতি বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্বে এসেছি। খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।” ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির স্থানীয় তৃণমূল সদস্য শম্ভু মাহাতোর বাড়ি বড়বাড়ি গ্রামে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলে শিক্ষার প্রসারের জন্য এত কিছু করছেন। অথচ প্রশাসনিক স্তরে উদ্যোগহীনতার কারণে গ্রামের পড়ুয়ারা শিক্ষা ও মিড-ডে মিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
এ দিন অবশ্য বিষয়টি জেনে আজ, শুক্রবারই স্কুল খোলার নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মুর্মু। স্বপনবাবুর কথায়, “অস্থায়ী ভাবে এক শিক্ষক স্কুলটি চালাচ্ছিলেন। তবে ১২ নভেম্বরের পরে যে স্কুল বন্ধ রয়েছে, তা জানা ছিল না।” স্বপনবাবু জানিয়েছেন, চুবকার তারাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে অস্থায়ী ভাবে বড়বাড়ি স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। গ্রামবাসীরা বলছেন, সেই তো এক শিক্ষক দিয়েই স্কুল চালানো হবে। তিনি না এলে ফের সমস্যা। স্কুল শিক্ষা দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র একজন করে শিক্ষক রয়েছেন। অর্থাৎ তিনি ছুটিতে গেলে সেই স্কুলগুলিরও হাল বড়বাড়ির মতো হয়। একজন শিক্ষক থাকার সমস্যাটা ঠিক কী, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জঙ্গলমহলের এই প্রাথমিক স্কুলটি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.