জলাশয়ে আবর্জনা, বিপাকে পরিযায়ী, বলছে বন দফতর
শীতের শুরুতেই উড়ে আসে শত শত পাখি। গত কয়েক বছর ধরে পরিযায়ীদের নতুন ঠিকানা দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের একটি প্রাচীন জলাশয়। কিন্তু জলাশয়ে যে ভাবে আবর্জনা জমছে, ভবিষ্যতে তাতে আর পরিযায়ী পাখিরা আসবে কি না, সে নিয়ে সংশয়ে বন দফতর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জলাশয়টি এক সময়ে জঙ্গলে ঘেরা ছিল। নগরায়নের ফলে ধীরে ধীরে আশপাশ ফাঁকা হয়ে যায়। ২০০৭ সালের ২ অগস্ট জলাশয়ের পাশে একটি বাড়ির ভিত খোঁড়ার সময় মজুরেরা মাটির নীচে একটি সুড়ঙ্গ পান। পাথরের খিলান দিয়ে উপর-নীচে বাঁধানো সুড়ঙ্গটি লম্বায় প্রায় আড়াই ফুট ও চওড়ায় দু’ফুট। পরীক্ষার পরে রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিক প্রকাশ মাইতি তাঁর রিপোর্টে উল্লেখ করেন, সুড়ঙ্গটি মধ্যযুগের। রাজ্যে এই ধরনের স্থাপত্য বেশ অমিল। তাতে রোমান শৈলীর মিশ্রণ রয়েছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগের পরামর্শ মেনে পুরসভা সুড়ঙ্গটিকে ‘সংরক্ষিত’ বলে ঘোষণা করে। বছর তিনেক আগে থেকে জলাশয়টিতে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করায় সেই সুড়ঙ্গ ও জলাশয় শীতকালে দ্রষ্টব্যস্থানে পরিণত হয়েছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক হল ওই জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিরা আসছে। এ বছর শীত পড়তেই কয়েকশো পাখি ঘাঁটি গেড়েছে ওই জলাশয়ে। ইতিমধ্যে দফতরের আধিকারিকেরা জলাশয়ে গিয়ে পাখিদের ছবি তুলে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা জানান, অন্তত চার প্রজাতির হাঁস রয়েছে সেখানে।
দুর্গাপুরের সিটিসেন্টার জলাশয়ে হরেক পরিযায়ী। ছবিটি তুলেছেন বিকাশ মশান।
রয়েছে ‘বার হেডেড ডাক’, যারা আসে দক্ষিণ তিব্বত, কাজাখস্থান, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া থেকে। ‘গারগেনি ডাক’ মূলত ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ায় থাকে। শীতে এরা আফ্রিকার দক্ষিণাংশে, অস্ট্রেলিয়ায় এবং এ দেশের সাঁতরাগাছিতে আসে। এ বার তারা এসেছে দুর্গাপুরের এই জলাশয়েও। উত্তর ইউরোপের পাখি ‘শোভিলার ডাক’ও এসেছে। শীতে এরা দক্ষিণ ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া ও এই উপমহাদেশে নেমে আসে। এ ছাড়াও এসেছে ‘স্পট বিলড ডাক’, যারা এই উপমহাদেশ ছাড়াও চিন, জাপান, লাওস, তাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শীত পেরোলে এই পাখিদের অধিকাংশই চলে যায়। এ বছরও শীত পড়তেই নতুন নতুন হাঁসের দল আসতে শুরু করেছে। বছর বছর পরিযায়ী পাখিদের এমন আগমনে খুশি বন দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁদের কথায়, চার দিকে ঘরবাড়ির জঙ্গলের মাঝে একটি জলাশয়ে যেভাবে পরিযায়ী পাখিরা এসে জড়ে হচ্ছে, তা বেশ আনন্দের। তবে যে ভাবে পাখিদের কথা না ভেবে ওই পুকুরে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, তাতে তারা কত দিন নির্বিঘ্নে ওই জলাশয়ে থাকতে পারবে, সে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বন দফতরের আধিকারিকেরা।
পরিযায়ীর দল যাতে এই জলাশয়ে ভাল ভাবে থাকতে পারে সে জন্য জলাশয়ে আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত হওয়ার আর্জি জানিয়েছে বন দফতর। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) জায়গায় রয়েছে জলাশয়টি। তার আশপাশে বাড়ি-ঘর গড়ে উঠেছে। জলাশয় পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে বিভিন্ন গৃহস্থালীর আবর্জনা, প্রতিমার কাঠামো পড়ে রয়েছে। তাতে ওই পরিযায়ী পাখিরা অসুবিধায় পড়তে পারে। তা মাথায় রেখে জলাশয়টিকে আবর্জনামুক্ত করে তুলতে হবে। বন দফতরের দুর্গাপুর বিভাগের রেঞ্জ অফিসার দিলীপকুমার চন্দ বলেন, “আমি ওই জলাশয় পরিদর্শন করে এসেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি।” বন দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দ্রুত এডিডিএ এবং পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.