সম্পাদকীয় ১...
বারুদস্তূপ
নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হওয়ার পর হইতেই বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি এবং তাহার সহযোগী জামাতে ইসলামির দেশব্যাপী বিক্ষোভ আন্দোলনের ফলে হিংসা, অরাজকতা, লুঠপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হানাহানি আবার উত্তাল রূপ ধারণ করিয়াছে। বিএনপি নেতৃত্ব এই অবরোধ-আন্দোলনকে ‘শান্তিপূর্ণ’ বলিয়া দাবি করিয়াছে বটে, কিন্তু রেললাইন উপড়ানো, চলন্ত ট্রেন ও যাত্রিবাহী বাস উল্টাইয়া দেওয়ার মতো ঘটনা সেই দাবির সহিত সমঞ্জস নহে। পরিস্থিতি এমনই যে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দিন পিছাইয়া দিবার কথাও ভাবিতেছে। কিন্তু তাহাতে এই আন্দোলন থামানো যাইবে বলিয়া ভরসা হয় না। ওই দুই দলের দাবি তো নির্বাচিত হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বর্তী তদারকি সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তাহা মানিবেন কেন?
স্বভাবতই সন্দেহ হয়, বিরোধীরা ক্রমশ নির্বাচন বয়কটের দিকে অগ্রসর হইতেছে। লক্ষণীয়, সরকারকে নতজানু করিতে যে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ চলিতেছে, তাহাতে বিএনপি অপেক্ষাও জামাত স্বেচ্ছাসেবকদের অধিকতর উৎসাহী দেখা যাইতেছে। বিএনপি-ই দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল, অন্তত দুই দফায় এই দল দেশে সরকারও গড়িয়াছে। কিন্তু রাস্তায় অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কাজে জামাতপন্থীদের তৎপরতা বেশি। জামাতে ইসলামি বাংলাদেশের প্রধান মৌলবাদী ইসলামি সংগঠন, যাহা অন্য নানা জেহাদি ইসলামি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক হইয়া উঠিয়াছে। এই জেহাদিদের নাশকতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও লক্ষ্যবস্তু ভেদে নির্মম দক্ষতায় মণ্ডিত করার শিবিরগুলি দেশময় ছড়াইয়া পড়িয়াছে। হাসিনা ওয়াজেদের সরকার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পাকপন্থী ঘাতকদের ‘যুদ্ধাপরাধী’ শনাক্ত করিয়া বিচারের কাঠগড়ায় টানিয়া আনার পর দেখা যাইতেছে, জামাতে ইসলামির বিবিধ নেতা গণহত্যা ও গণধর্ষণের অপরাধী। অনেকেরই ইতিমধ্যে মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাবাস ধার্য হইয়াছে, বাকিরা দণ্ডাদেশের অপেক্ষায়। এই বিচারপ্রক্রিয়া বস্তুত সমগ্র দেশকে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ও বিরোধী এই দুই শিবিরে খাড়াখাড়ি বিভক্ত করিয়া দেওয়ায় বিএনপি এবং জামাত পরস্পরের আরও ঘনিষ্ঠ হইয়া পড়ে। তদবধি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা উত্তরোত্তর নাশকতা ও অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ রূপে ছড়াইয়া পড়িতেছে। ক্রমশ অস্পষ্ট হইতেছে বিএনপি ও জামাতের বিভাজনরেখা।
উপমহাদেশের আর এক রাষ্ট্রের কথা মনে পড়িতে বাধ্য। পাকিস্তানেও জামাতপন্থীরা নির্বাচনী রাজনীতিতে বিশেষ কল্কে পাইত না। সে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল পিপল্স পার্টি ও মুসলিম লিগ, কেহই জামাতপন্থীদের সহযোগিতায় সরকার গড়ে নাই (যদিও জঙ্গি শাসক পারভেজ মুশারফ তাহা করিয়াছিলেন)। কিন্তু তাই বলিয়া জামাতিদের প্রশ্রয় দিতে তাহারাও দ্বিধা করে নাই। সর্বোপরি সেখানকার দেওবন্দি মাদ্রাসায় লালিত তালিবানদের একেবারে কোলে বসাইয়া আদর করিয়াছে। পরিণাম আজ সকলের চোখের সামনে। পাকিস্তানের নবীন গণতন্ত্র আজ তালিবানকে ওগরাইতেও পারিতেছে না, গিলিতেও না। বাংলাদেশকে বিএনপি নেতৃত্বও কি ওই পথেই লইতে চাহেন? প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে জনাদেশকে শিরোধার্য করার যে বাধ্যতা থাকে, কোনও দল যদি তাহা অগ্রাহ্য করে, তবে তাহাকে গণতন্ত্রের সহায়ক শক্তি বলা যায় না। জামাতপন্থীদের সহিত হাত মিলাইয়া বিএনপি যদি ভোট বয়কটের হঠকারিতায় অবতীর্ণ হয়, তবে তাহাতে লাভবান হইবে কিন্তু জামাতিরাই। বাঘের পিঠে যে সওয়ার হইতে নাই, তাহা পুরানো শিক্ষা। বহুপরীক্ষিতও বটে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.