নাসা থেকে ইএসএ-র পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, দুনিয়ার সর্বত্রই উত্তেজনায় ফুটছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। মাহেন্দ্রক্ষণ হাজির। সূর্যের একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছে ধূমকেতু আইসন। ভারতীয় সময় অনুযায়ী আজ রাত ১২টা বেজে ৭ মিনিটে সূর্যের সব চেয়ে কাছে চলে যাবে আইসন। দূরত্ব তখন কমে দাঁড়াবে মাত্র ১১ লক্ষ কিলোমিটার। বিজ্ঞানীদের আশা, সৌর-রোষ থেকে যদি কোনও মতে বেঁচে যায় ধূমকেতুটি, শতকের সেরা মহাজাগতিক দৃশ্য হয়ে ধরা দিতে পারে সে।
আইসনের খোঁজ মিলেছিল গত বছর। দুই রুশ মহাকাশবিজ্ঞানী সন্ধান পেয়েছিলেন তার। রাশিয়ার ‘ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অপটিকাল নেটওয়ার্ক’ (আইসন)-এ ধরা পড়ে হিমশীতল ধূমকেতুটি। তখন সে বৃহস্পতি থেকে কিছুটা দূরে। বিজ্ঞানীরা সেই থেকেই অপেক্ষা করে রয়েছেন আজকের দিনটির জন্য। সূর্যের প্রচণ্ড তাপে বাষ্প হতে শুরু করবে ধূমকেতুর কিছু পরিমাণ বরফ। ফলে লেজের আকারে তার শরীর থেকে বেরিয়ে আসবে ধূলিকণা। সূর্যের আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠবে আইসন।
এই মুহূর্তে আইসন সূর্যের একেবারেই কাছে। তাই কোরোনাগ্রাফ যন্ত্র ছাড়া তার দেখা মেলা এক রকম অসম্ভব। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমির অধিকর্তা সঞ্জীব সেন বলেন, “সূর্যের তেজে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে সে। কিন্তু যদি অক্ষত থাকে, তা হলে সামনের মাসের ২-৩ তারিখের পর থেকে দেখা যেতে পারে আইসনকে। খালি চোখেই।”
কিন্তু সূর্যের মহাকর্ষ বল যদি ভেঙে দেয় ধূমকেতুটিকে? “সে ক্ষেত্রে তাকে আর খালি চোখে দেখা যাবে না। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যেতে পারে। তবে কেমন দেখা যাবে, তা নির্ভর করবে ধূমকেতুর মধ্যে উপস্থিত বরফের পরিমাণের উপর,” বললেন সঞ্জীববাবু। তবে বিজ্ঞানীদের আশা, আইসন যে হেতু অন্য ধূমকেতুর তুলনায় আকারে অনেকটাই বড়সড়, তাই সে হয়তো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে না।
ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরির তরফে ডোনাল্ড ইউম্যানস বলেন, “সূর্যের অত কাছ ঘেঁষে যাওয়ার সময়, আইসনের বেঁচে যাওয়াটা সত্যিই খুব কঠিন।” সে ক্ষেত্রেও অবশ্য অখুশি হওয়ার কারণ দেখছে না নাসা। তাদের মতে, আইসন যদি ভেঙে যায়, তা হলে তার গঠন সম্পর্কে আরও বিশদ জানা যাবে।
বুধবার সকালেও ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি ও নাসার ‘সোলার অ্যান্ড হেলিস্ফেরিক অবজারভেটরি’র স্পেকট্রোমেট্রিক কোরোনাগ্রাফে ধরা পড়েছিল আইসন। এখন সূর্যের সঙ্গে আইসনের সর্বশেষ সাক্ষাৎ কেমন হয়, তা জানতে সময়ের অপেক্ষা। |