ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ময়দানে উপস্থিত শ’দুয়েক প্রতিযোগী। দর্শকদের মধ্যে স্কুলছাত্রদের সংখ্যা হাতে-গোণা। বুধবার তার জন্য ছুটি দিয়ে দেওয়া হল ১২৫টি স্কুলে। জঙ্গিপুর মহকুমা পর্যায়ের প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের বক্তব্য, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আগেও অনেক বার হয়েছে। তার জন্য স্কুল বন্ধ হয়নি কখনও। এ বারই বা হবে কেন?
রঘুনাথগঞ্জের ম্যাকেঞ্জি ময়দানে এক দিনের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নিয়ে আরও দুটি অভিযোগ উঠেছে। প্রতিযোগিতা চলাকালীন মাঠের এক ধারে হুকিং করে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে। আর দুই, এই প্রতিযোগিতার জন্য স্কুলগুলির শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা টাকা চাঁদাও তোলা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের মাথাপিছু ৭০০ টাকা, সহকারি শিক্ষকদের ৫০০ টাকা এবং প্যারাটিচারদের ২০০ টাকা, এই হারে চাঁদা তোলায় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। মহকুমা স্তরের ওই প্রতিযোগিতার জন্য সরকারি অনুদান ১০ হাজার টাকা। সেটা যথেষ্ট হয় না বলে প্রতি বছর মহকুমার প্রায় সাড়ে আটশো প্রাথমিক স্কুল থেকে সামান্য কিছু টাকা চাঁদা তোলা হলেও, এমন মাথাপিছু চাঁদা তোলা অভূতপূর্ব, জানান এক প্রবীণ শিক্ষক।
কেন এত চাঁদা তোলার ধুম? হুকিং করাই বা হল কেন? রঘুনাথগঞ্জ চক্রের প্রাথমিক স্কুলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ইফতিকার আহমেদ বলেন, “কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া হয়নি। আর এতগুলি ছেলেকে নিয়ে প্রতিযোগিতা হচ্ছে, তাই বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা উচিত।”
প্রধান শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কথাতেই স্কুলে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে অভিভাবকদের মধ্যে কিন্তু এই নিয়ে ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। কুলোরি প্রাইমারি স্কুলের এক ছাত্রের অভিভাবক মুরারী সরকার বলেন, “আমার ছেলের স্কুল থেকে কোনও প্রতিযোগী ছিল না। তবু এ দিন আচমকা ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে যত বার এমন প্রতিযোগিতা হয়েছে, কোনও বারই স্কুল বন্ধ করা হয়নি।” বানীপুরের একটি প্রাথমিক স্কুলের এক ছাত্রের অভিভাবকও স্কুল ছুটি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর স্কুল থেকেও এ দিনের প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধি ছিল না।
মুর্শিদাবাদের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি তথা তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য সাগির হোসেন এদিন প্রতিযোগিতার মাঠে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠানের জন্য কোনও রকম ভাবেই টাকা তোলা আমাদের সরকারের নীতি নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। এমন অভিযোগ পেলে আমরা দলগত ব্যবস্থা নেব।” হুকিং-এর প্রসঙ্গেও সাগিরের বক্তব্য, “বিদ্যুৎ চুরি করা হয়েছে এমন প্রমাণ যদি পাই তা হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিন প্রতিযোগিতার মাঠে অবশ্য আয়োজনের বাহুল্য ছিল খাওয়া-দাওয়াতে। টিফিনের প্যাকেট ছাড়াও দুপুরে মাংস-ভাত-মিষ্টি দিয়ে খাওয়া সারলেন প্রায় চারশো শিক্ষক। |