মানকুণ্ডুর ফ্ল্যাটে শিশুমৃত্যুর ঘটনার ১২ দিন বাদে খুনের অভিযোগে মাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ঘটনাচক্রে, যে দিন আরুষি হত্যায় তার বাবা-মাকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত, সে দিনই এই গ্রেফতারি।
গত ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় হুগলির মানকুণ্ডু স্টেশনের কাছে চারতলার একটি ফ্ল্যাটে বাথরুমের সামনে জল ভর্তি গামলায় আর্য চৌধুরী নামে ন’মাসের একটি শিশুর নিথর দেহ মেলে। পড়শিরা দরজার লক ভেঙে ঢুকে লেপ চাপা অবস্থায় শিশুটির মা সুনন্দা চৌধুরীকে পড়ে থাকতে দেখেন। তখন ওই ঘরে আর কেউ ছিলেন না। সুনন্দা পুলিশের কাছে তখন দাবি করেছিলেন, ডাকাতি করতে এসে দুষ্কৃতীরা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ কিছুটা ধন্দে পড়লেও ডাকাতির তত্ত্ব প্রথমেই উড়িয়ে দেয়। দফায়-দফায় বহু জিজ্ঞাসাবাদের পরে সোমবার রাতে ওই ফ্ল্যাট থেকেই সুনন্দাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় তিনি খুনের কথা অস্বীকার করেছেন। সুনন্দা বরং দাবি করেন, বুকের দুধ খাওয়াতে গিয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই সময়ে কোনও ভাবে চাপে শ্বাসরুদ্ধ তাঁর ছেলে মারা গিয়ে থাকতে পারে। স্বামী ও শাশুড়ির ভয়ে পরে তিনি ডাকাতির গল্প ফাঁদেন।
মঙ্গলবার চন্দননগর আদালতের ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম পূর্বা কুণ্ডুর এজলাসে তোলা সুনন্দাকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা বলেন, “ধৃত মহিলা শিশুটির মৃত্যুর পিছনে যে কারণ বলছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্য কারণও থাকতে পারে। কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছি না।”
আদতে দুর্গাপুরের বাসিন্দা, এম এ পাশ সুনন্দার স্বামী অঞ্জন চৌধুরী রেলকর্মী। ঘটনার দিন তিনি যথারীতি ব্যান্ডেলে তাঁর অফিসে ছিলেন। তাঁর মা তৃপ্তিদেবী দুপুরে বেরিয়েছিলেন বাইরে। বিকেলে ফিরে বারবার ডোর-বেল বাজিয়েও কারও সাড়া না পেয়ে তিনিই পড়শিদের ডাকেন। গত ক’দিন ধরে পুলিশ সুনন্দা এবং তৃপ্তিদেবী দু’জনকেই টানা জেরা করে এসেছে।
জেরায় সুনন্দা কী বলেছেন?
তদন্তকারীদের বক্তব্য, সুনন্দা দাবি করেছেন, গত ১২ নভেম্বর স্বামী, সন্তান এবং শাশুড়ির সঙ্গে তিনি সারারাত জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখেন। পরের দিন সকালে স্বামী কাজে বেরিয়ে যান। দুপুরে শাশুড়ি চলে যান শেওড়াফুলিতে ব্যাঙ্কের কাজ করতে। সুনন্দা ছেলেকে খিদে বাড়ানোর ওষুধ খাওয়ান। কিছু ক্ষণ পরে দুধ খাওয়ানো শুরু করেন। আগের রাতে ঘুরে কান্ত থাকায় ওই অবস্থাতেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙতে দেখেন, শিশুটির সাড়াশব্দ নেই। তার চোখে-মুখে জলের ছিটে দেন তিনি। তাতেও চোখ না খোলায় সুনন্দার সন্দেহ হয়। গামলায় ঠাণ্ডা-গরম জল মিশিয়ে ছেলেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন।
সুনন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন, এর পরেই তিনি দরজায় শাশুড়ির আওয়াজ পান। তাতে তিনি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। স্বামী-শাশুড়িকে কী জবাব দেবেন, এই ভয়েই তাঁর মাথায় ডাকাতির গল্প আসে। আলমারি থেকে জিনিস বের করে তিনি ছড়াতে শুরু করেন। কিছু গয়নাও এ-দিক ও-দিক ফেলে দেন। কিন্তু গামলা থেকে ছেলের দেহ তুলতে ভুলে যান।
তিনি যে ঘটনার দিন দুপুরে শেওড়াফুলি গিয়েছিলেন, সে কথা তৃপ্তিদেবীও পুলিশকে জানান। তবে এ দিন চন্দননগর আদালতে এসে তিনি বা অঞ্জনবাবু কেউই সুনন্দার গ্রেফতারি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |