কলেজ ক্যাম্পাসেই শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে গোঘাটের কামারপুকুর রামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যা মহাপীঠে।
পরিচালন সমিতি গঠন কিংবা ছাত্র ভর্তির মতো কারণে এর আগে গোলমাল ছড়িয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে। বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের দিকে। কোথাও প্রহৃত হন অধ্যক্ষ, শিক্ষকেরা। ভাঙড় কলেজে জলের জগ ছুড়ে মারা হয় এক শিক্ষিকাকে। কামারপুকুরের কলেজে গোলমালের সূত্রপাত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দায়িত্ব ছাত্র সংগঠনের কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে, তা নিয়ে। গোপাল রায় নামে প্রহৃত শিক্ষককে কলেজেরই কিছু ছাত্র নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে হাসপাতালে। |
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে কামারপুকুরের কলেজের
প্রহৃত শিক্ষক গোপাল রায়ের। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
গোপালবাবু নিজেও তৃণমূল নেতা। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের গোষ্ঠীকোন্দলের শিকার হলাম।” পাঁচ জন ছাত্র-সহ কয়েক জনের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন গোপালবাবু। খবর পেয়ে পুলিশ যায় কলেজে। তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। তৃণমূল পরিষদের রাজ্য সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। যদি ঘটনা সত্যি হয়ে থাকে, তা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাতে কাজ না হলে দলীয় স্তরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করব।” প্রয়োজনে এই কলেজে ছাত্র সংগঠনের ইউনিট ভেঙে দিতে বলা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ছাত্রসংসদের দখল নিয়ে দলের স্থানীয় নেতা তপন মণ্ডল ও আতাউল হকের অনুগামী দু’দল ছাত্রের মধ্যে আগেও সংঘর্ষ বেধেছে। গোপালবাবুর উপরে হামলা প্রসঙ্গে আতাউল গোষ্ঠীর ছাত্রনেতা রাজেশ রায় বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কিছু ছাত্রের উপরে দোষ চাপিয়েছেন। তপনবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছাত্রনেতা সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, গোপালবাবুকে কেউ মারধর করেনি। তিনি বলেন, “আমাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর জন্যই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন উনি।”
গোপালবাবু শারীরশিক্ষার অতিথি শিক্ষক। তিনি জানান, এ দিন দুপুরে ক্লাস সেরে ফেরার পথে কলেজ চত্বরে হঠাৎই তাঁর পথ আটকে দাঁড়ায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কিছু ছেলে। সঙ্গে বাইরের কয়েক জনও ছিল বলে অভিযোগ। গোপালবাবুর দাবি, ওই ছেলেরা জানতে চায়, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কবে হবে। দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি গোপালবাবু। প্রতিযোগিতা যখনই হোক, তাদের হাতেই পরিচালনার ভার তুলে দিতে হবে বলে আগাম দাবিও জানায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ওই ছেলেরা। গোপালবাবুর দাবি, তিনি বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেন। অভিযোগ, এর পরেই তাঁকে ছাত্রাবাসের দিকে টানতে টানতে নিয়ে যায় ছাত্ররা। হাতে লাঠি-রড। বেধড়ক মারধর করা হয় গোপালবাবুকে। পরে অন্য কিছু ছাত্র তাঁকে উদ্ধার করে বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, কলেজ চত্বরে কিছু ঘটেছে বলে তাঁদের নজরে পড়েনি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন ঘোষ বলেন, “ঘটনাটি পরে শুনেছি। শিক্ষককে মারধরের ঘটনা ঘটে থাকলে তা নিন্দার।” |