নিজে রোজ ৫৪ কিলোমিটার যাতায়াত করে কলেজে পড়েছেন। তাঁর মেয়েরাও পড়েছেন সে ভাবে। ঝক্কি কম ছিল না। তবু তাঁরা পড়া ছাড়েননি। অনেকটা যেন সেই রকমের জেদ থেকেই এক ছোট ব্যবসায়ী ১৫ বিঘা জমি দান করে দিলেন কলেজ
|
অমূল্যরতন বিশ্বাস |
গড়ার জন্য। দক্ষিণ দিনাজপুরের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হিলির বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ীর নাম অমূল্যরতন বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “আমরা অনেক কষ্ট করে পড়েছি। কিন্তু এলাকার অনেকেই মেধা থাকা সত্ত্বেও যাতায়াতের এই ধকল নিতে পারেননি। অনেকেই পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। সেই জন্যই চাই এই জমিতে কলেজ হোক।” আগামী ২৭ নভেম্বর ওই জমিতেই কলেজের শিলান্যাস করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
কলেজটি হলে উপকৃত হবেন কাঁটাতারের বেড়ার ওপারের ২২টি ভারতীয় গ্রামও। কাঁটাতারের বেড়ার উপরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ফটক খোলে ভোর ৬টায়। বন্ধ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এর মধ্যে ওই গ্রামগুলি থেকে এসে ২৭ কিলোমিটার দূরের বালুরঘাট কলেজে গিয়ে ক্লাস করে আবার ফিরে আসা খুবই শক্ত কাজ। হিলিতেই কলেজ হলে সেই সমস্যা মিটবে।
হিলি বাজারে অমূল্যরতনবাবুর একটি চালু মিষ্টির দোকান রয়েছে। একটি ছোট আইসক্রিমের কারখানাও রয়েছে তাঁর। আর রয়েছে ১০ বিঘা ধানী জমি। সেই সঙ্গেই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন এই ১৫ বিঘা জমিও, যা তিনি দান করে দিলেন। এই জমির এখন বাজারদর ৫০ লক্ষ টাকা। বাসুদেবপুর এলাকায় স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে সংসার। বড় মেয়ে অদিতির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে কুহেলি কলেজে পড়ে। অমূল্যবাবুর পরিবার কিন্তু এই দানের কথা পাঁচকান করতে চায়নি। রাজ্য সরকার হিলিতে কলেজ গড়ার জন্য জমি খুঁজছে জানতে পেরে এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি অমূল্যরতনবাবু প্রশাসনের সঙ্গে নিজেই যোগাযোগ করেছিলেন। পরে জেলাশাসককে জমিটি রেজিস্ট্রি করে হস্তান্তর করেন। গত ৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের
মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উপ-অধিকর্তা (পাবলিক ইন্সটিটিউশন) রমাপ্রসাদ ভট্টাচার্য এবং রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের উপ-অধিকর্তা শুভ্র দে হিলিতে গিয়ে ওই জমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এর পর কলেজ গড়তে পূর্ত দফতরের
চূড়ান্ত অনুমোদনের খবর হিলিতে পৌঁছলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়।
রাজ্যে জমির অভাবে কোথাও রাস্তা চওড়া করা যাচ্ছে না। আবার কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কাজ থমকে। সেখানে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর এই দান সম্পর্কে জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “জমির অভাবেই ওই এলাকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কোনও কলেজ তৈরি করা এত দিন সম্ভব হয়নি। অমূল্যরতনবাবু এগিয়ে আসায় গোটা এলাকার বাসিন্দারা উপকৃত হবেন।” তিনি জানান, “মুখ্যমন্ত্রীর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্যে দিয়ে কলেজ তৈরির কাজ শুরু হবে।”
অমূল্যরতনবাবুর স্ত্রী কবিতাদেবীর কথায়, “বিয়ের পর থেকেই ওঁকে দেখেছি, নানা রকমের সমাজসেবা করতে। আমরা সারা পরিবারই তাঁর সঙ্গে রয়েছি।” |