নান্টুর জয়, ৩১শে জিতে উজ্জীবিত বামেরাও
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে গিয়েও নান্টু পাল নিজের ওয়ার্ড ধরে রাখতে পেরেছেন। কিন্তু উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের নির্বাচনী ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর। তৃণমূলের কাছ থেকে ওই ওয়ার্ড কেড়ে নিয়েছে সিপিএম। সোমবার গণনার ফল প্রকাশ হতেই তাই এলাকায় সিপিএম কর্মী সমর্থকরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। এই জয় বামপন্থীদের উজ্জীবিত করবে বলে মনে করছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য-সহ দলীয় নেতৃত্বরা। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইতে এই ফল উৎসাহ জোগাবে বলে তাঁরা মনে করছেন। ওই ওয়ার্ডে তাদের প্রার্থী দীপা বিশ্বাস তৃণমূলের প্রার্থী জনা বাগচীকে ১১৩৯ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন। |
জয়ের পরে নান্টু পালকে অভিনন্দন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের। |
শিলিগুড়ি পুরসভার উপনির্বাচনে দু’টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী নান্টু পালের জয়ে একদিকে খুশি হলেও নিজের এলাকায় থাকা ওয়ার্ড হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ‘চাপে’ পড়লেন বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে ওই এলাকায় উন্নয়নে রাস্তাঘাট তৈরি, নিকাশি ব্যবস্থা করা, এলাকায় একটি অত্যাধুনিক অনুষ্ঠান মঞ্চ তৈরির মতো বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন। কিছু কাজও করেছিলেন। তার পরেও বাসিন্দাদের সমর্থন না থাকাটা তাঁকে চিন্তায় ফেলেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এ দিন বলেন, “কেন আমাদের কাউন্সিলর পদত্যাগ করেছিলেন, সে সব আমরা সঠিক ভাবে মানুষকে বোঝাতে পারিনি। হারের কারণ আমরা অনুসন্ধান করব।”
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এই ওয়ার্ডে জয়কে দলের কর্মী-সমর্থকদের সামনে নমুনা হিসাবে তুলে ধরতে চান। তিনি বলেন, “মানুষ তৃণমূলকে হলুদ কার্ড দেখাল বলে মনে করছি। কেন না যে ভাবে বিরোধীদের সম্পর্কে তারা খারাপ উক্তি করছিলেন, তাচ্ছিল্য দেখাচ্ছিলেন তা ঠিক নয়। মানুষ তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। আশা করব এ বার তাঁরা কিছুটা ভুল শোধরাবেন।” দীপাদেবী বিপুল ভোটে জয়ের জন্য বাসিন্দাদের ‘বিশেষ ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এলাকার উন্নয়নে, বাসিন্দাদের সমস্যা মেটাতে কাজ করাই আমার লক্ষ্য।” |
জয়ের পরে সিপিএম প্রার্থী দীপা বিশ্বাস। |
গত পুর নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী চৈতালি সেনশর্মা ৩৭৬৮ ভোট পেয়ে সিপিএমের প্রার্থীকে ৭২ ভোটে হারিয়েছিলেন। তবে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার অভিযোগে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করেন। তা নিয়ে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়ে। যদিও তৃণমূলের তরফে তা অস্বীকার করা হয়। পারিবারিক সমস্যার জেরেই কাউন্সিলর পদত্যাগ করেছিলেন বলে দলীয় তরফে দাবি করা হয়। কাউন্সিলর না থাকলেও পরিষেবার কাজে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে জন্য বরো চেয়ারম্যান সমীরণ সূত্রধরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দলের তরফে। তবে তাঁর পক্ষে পরিস্থিতি সামলানো মুশকিল হয়। কাউন্সিলরহীন অবস্থায় গত সাড়ে ৩ বছরে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তা স্বীকার করে নেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও।
বাম নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ওয়ার্ডের শীতলাপাড়া, প্রগতিপাড়ার মতো বিভিন্ন বস্তি এলাকাগুলির একাংশ মানুষ যাঁরা তাদের সঙ্গে ছিলেন গত নির্বাচনে তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তাতে দলীয় নেত্বের কিছু ভুল ছিল। ওই সমস্ত বাসিন্দাদের তারা ফের সমিল করতে পেরেছেন। ওই বস্তি এলাকাগুলি থেকেই বেশি ভোট পেয়ে এ বার তাঁরা জিতেছেন। গত পুর নির্বাচনে যেখানে বস্তি এলাকাগুলি থেকে ৪০০ ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন এ বার সেখানে ৫০০ ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন তাদের প্রার্থী। দলের কর্মীরাও পরিশ্রম করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারেই তারা জোর দিয়েছিলেন। তার ফলও মিলেছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটে ওই ওয়ার্ড থেকে গৌতমবাবু ৫২ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এর পর ওয়ার্ডের স্কুল নির্বাচনগুলিতে বামেরাই জয়ী হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ওই বিধানসভা এলাকার ৪টি পঞ্চায়েতে তৃণমূল যে ভোট পেয়েছে তা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটের থেকে অন্তত ২১ হাজার কম।
এ দিন দুপুরে ওয়ার্ডের নৌকাঘাট এলাকায় ৭ নম্বর রাস্তায় সিপিএমের সমর্থরকদের উপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে। সিপিএমের সমর্থকদের অভিযোগ, ভোটে হেরে তৃণমূল হামলার চেষ্টা করছে। এলাকায় তৃণমূলের উদ্যোগে একটি পানীয় জলের কল বসানো হয়। সিপিএম সমর্থকরা ওই কল ব্যবহার করে বলে এ দিন সেটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা হয়। বাধা দিলে গোলমাল বাধে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। সিপিএমের দার্জিলিং জেলার কার্যনির্বাহী সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “হারার পর এ ভাবে হামলা করার চেষ্টা নিন্দনীয়। আমরা সমর্থন করি না। হার-জিত আছেই। এটা মেনে নিতে হবে।” |