দল পাল্টে ফের জয়ী নান্টু, জিতল বামেরাও
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
সিপিএমের হয়ে একাধিকবার শিলিগুড়ি পুরভোটে জিতেছেন নান্টু পাল। জিতেছেন কংগ্রেসের হয়েও। এ বার তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েও শিলিগুড়ি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে জিতলেন। কিন্তু তৃণমূলের দখলে থাকা শহরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে জিতেছেন সিপিএম প্রার্থী দীপা বিশ্বাস। শিলিগুড়ি পুরসভায় ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস এই উপনির্বাচনের পরে পুরবোর্ডের তৃতীয় দলে পরিণত হল। তাদের সদস্য সংখ্যা এখন ১৪। তৃণমূলের ১৫। বামেদের ১৮।
কংগ্রেস এই উপনির্বাচনে দু’টিতেই তৃতীয় স্থান পেয়েছে। দলের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার জানান, কেন এমন হল, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। সিপিএমের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকার অবশ্য দাবি করেছেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ও তাঁর দলের কাজকর্মে যে সকলে খুশি নন, সেটা ৩১ নম্বর ওয়ার্ড বুঝিয়ে দিয়েছে। ওয়ার্ডটি গৌতমবাবুর বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে। তাই নান্টুবাবুর জয়ে খুশি হলেও অন্য ওয়ার্ডটি হাতছাড়া হওয়ায় অস্বস্তি ধরা পড়েছে গৌতমবাবুর কথাতেও। তাঁর কথায়, “নান্টুবাবুর জয় প্রমাণ করল মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তবে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডটি হাতছাড়া হওয়া অবশ্যই ভাবনার বিষয়। বাসিন্দাদের রায় বিনম্র ভাবে মাথা পেতে নিচ্ছি। কী কারণে আমাদের ফল খারাপ হল তা অবশ্যই বিচার করব।” এর পরে মন্ত্রী নিজেদের ত্রুটিও খোলাখুলি স্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কেন ইস্তফা দিয়েছিলেন, তা মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।”
কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ২০০৯ সালে ৩০টি (দু-দলই ১৫টি করে) আসন পায়। বামেরা পায় ১৭টি। মেয়র কে হবেন, তা নিয়ে রেষারেষির জেরে কংগ্রেস কার্যত বামেদের সমর্থনে বোর্ড গড়ে। পরে মেয়র পদত্যাগ করে তৃণমূলের সমর্থনে ফের ক্ষমতায় আসেন। দ্বিতীয় দফায় গোলমাল হলে তৃণমূল সরে দাঁড়ায়। তখন ১৫ জন কাউন্সিলর নিয়ে একক ভাবে শিলিগুড়ি পুরবোর্ড চালাতে শুরু করে কংগ্রেস। তৃণমূলের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ‘ব্যক্তিগত’ কারণে ইস্তফা দেন। তখন তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা হয় ১৪ জন। এই অবস্থায় নান্টুবাবু কংগ্রেস ছাড়লে কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যাও দাঁড়ায় ১৪ জনে। তাই এ বারের উপনির্বাচন ঘিরে উত্তেজনার পারদও চড়ছিল দ্রুত।
তৃণমূল চেয়েছিল, এই দু’টি ওয়ার্ড জিতলে তারা কংগ্রেসের পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনবে। এখন ১৫ জন সদস্য নিয়ে তা সম্ভব নয়। কারণ, ৪৭ আসনের এই পুরসভায় অনাস্থা আনতে প্রয়োজন অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য বা ১৬ জনের সমর্থন। তাই সংখ্যালঘু হয়েই পুরবোর্ড কংগ্রেসের দখলেই থাকল। গৌতমবাবু অবশ্য আশা করছেন, সামনের মাসেই তাঁরা কংগ্রেসের পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে পারবেন। তাঁর
দাবি, “অনাস্থা আনতে আমাদের ১৬ জন কাউন্সিলর দরকার। শীঘ্রই ওই সংখ্যা হয়ে যাবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এই সংখ্যালঘু পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চলেছি। তার পরেও সিপিএম ও কংগ্রেস এক সঙ্গে চললে তা প্রকাশ্যে আসবে। মানুষ দেখবে।”
অনাস্থা আনার জন্য তৃণমূল তাঁদের দল ভাঙানোর চেষ্টা করতে পারে, এই আশঙ্কা করছেন কংগ্রেসের মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি বলেন, “উপনির্বাচনের ফলে আমরা হতাশ। তবে আমাদের ১৪ জন কাউন্সিলর এখনও একজোট। তবুও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী দল ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা দলের সকলে মিলে বসে পরের পদক্ষেপ ঠিক করব।” |