বাগনানের মানকুড় থেকে শ্যামপুরের গড়চুমুক পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় রূপনারায়ণের ধারে মিনি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলছে হাওড়া জেলা পরিষদ। এই প্রকল্পে যে সব কাজ করা হবে তা হল, বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সৌন্দর্যায়ণ, রাত্রিকালীন আবাস গড়ে তোলা, বাংলো সংস্কার, রাস্তা নির্মাণ প্রভৃতি। সাংসদ ও বিধায়ক কোটার টাকা, কেন্দ্রীয় সরকারের সার্কিট ট্যুরিজম প্রকল্পের বরাদ্দ এবং জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিলেই এই সব পর্যটনকেন্দ্রগুলি গড়ে তোলা হবে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানানো হয়েছে। কিছু কাজ ইতিমধ্যে শুরু হলেও এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি হচ্ছে বলে জেলা পরিষদের দাবি।
মানকুড় এবং শ্যামপুরের শশাটিতে রয়েছে সেচ দফতরের বাংলো। অন্য দিকে, বাগনানের বেনাপুরে রয়েছে জেলা পরিষদের বাংলো। তিনটি বাংলোই রূপনারায়ণের তীরে। মানকুরে মাটির বাংলোটিকে ভেঙে তা নতুন করে গড়ে তুলছে সেচ দফতর। শশাটির বাংলোটিকেও সংস্কার করেছে তারা। অন্য দিকে, বেনাপুরের বাংলোটি সংস্কার করবে জেলা পরিষদ। তিনটি বাংলোয় যাতায়াতের জন্য রাস্তা তৈরি করা হবে। আলোর ব্যবস্থা হবে। বাংলোগুলির চারিদিকে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এগুলির সৌন্দর্যায়ণ করা হবে। ইতিমধ্যেই বেনাপুরে বাংলোয় যাতায়াতের জন্য প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জেলা পরিষদের এক কর্তা জানান।
সামতাবেড়ে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের বাড়িকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সার্কিট ট্যুরিজম’ প্রকল্পের ৩৫ লক্ষ টাকায় পর্যটকদের জন্য রাত্রিকালীন আবাস তৈরি, শৌচাগার ও রাস্তাঘাট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে জেলা পরিষদ। তবে কথাশিল্পীর বাড়ির পশ্চিম দিক দিয়ে বইছে রূপনারায়ণ। গত দু’তিন বছর ধরে রূপনারায়ণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শরৎচন্দ্রের বাড়ি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম বিপদের মধ্যে রয়েছে।
জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সেচ দফতরের কাছে যেমন ভাঙন মেরামতির জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, জেলা পরিষদ নিজে থেকেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এমন ধরনের ঘাস রোপণের পরিকল্পনা করেছে যাতে এক দিকে যেমন সৌন্দর্যায়ণ ঘটাবে অন্য দিকে, নদী ভাঙনও রোধ করবে। ‘শরৎ-বন’ নামে এই প্রকল্পে খরচ করা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের সার্কিট ট্যুরিজম খাতের টাকা। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সামতাবেড়ে রূপনারায়ণের বাঁধ মেরামতির জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি হচ্ছে।
কোলাঘাটে রূপনারায়ণের ধারে যাঁরা শীতকালে চড়ুইভাতি করতে আসেন তাঁদের জন্য শেড, শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনা করেছে জেলা পরিষদ। গাদিয়াড়া এবং গড়চুমুকে আগেই পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলিরও উন্নয়নের কাজে হাত দেওয়া হবে বলে জেলা পরিষদ সূত্রের খবর।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের সার্কিট ট্যুরিজম খাতের টাকায় জেলা পরিষদ গাদিয়াড়ায় ভূতল পরিবহণ দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জেটিঘাট সংস্কারে নেমেছে। শ্যামপুর-গাদিয়াড়া রোডটির সংস্কারে ৪৭ লক্ষ টাকা খরচ করছে। অন্য দিকে, গড়চুমুকে হরিণ প্রকল্পের ভিতরে জেলা পরিষদের যে বাংলোগুলি রয়েছে তারও সংস্কার করা হবে। ৫৮ গেটকে ঘিরে হবে সৌন্দর্যায়ণ প্রকল্প।
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “যে সব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে তার কোনও এক বা একাধিক জায়গায় গিয়ে একই দিনে যাতে ফিরে আসা যায়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই এই সব করা হচ্ছে। বাংলোগুলিতে রাতে থাকার ব্যবস্থাও হবে।” মিনি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে সেচ দফতর, পূর্ত দফতর, বন দফতর প্রভৃতিকে সামিল করা হবে জানান অজয়বাবু।
|