থানার বাইরে বাজছে সানাই। ভিতরে বিয়ের তোড়জোড়। তাড়াহুড়োয় মণ্ডপ তৈরি হয়নি। তাতে উৎসবের মেজাজে কোনও খামতি ছিল না। বর-কনে ছিলেন দুপুর থেকেই। গোধূলি লগ্নে মালাবদল করে চার হাত এক করালেন টিটাগড় থানার আইসি শুভাশিস চৌধুরী। কব্জি ডুবিয়ে মিষ্টিমুখ করলেন পথচলতি মানুষও।
পুলিশ ও নবদম্পতির পরিবার সূত্রে খবর, ব্যারাকপুরের শহিদ সরণির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ওরাওঁয়ের সঙ্গে সাত বছর ধরে ঘনিষ্ঠতা ছিল প্রতিবেশী অ্যাঞ্জেলা টোপ্পো-র। তার থেকেই সহবাস। অ্যাঞ্জেলা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সম্প্রতি। বিয়ের পরিকল্পনাও ছিল। যদিও বাড়িতে মত ছিল না। দিন দশেক আগেই ছেলের অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেন বিশ্বজিতের বাবা ভাটপাড়া পুরসভার কর্মী গণেশ ওরাওঁ। রবিবার অ্যাঞ্জেলা বিশ্বজিতের বাড়িতে গিয়ে পুলিশে জানানোর হুমকি দেন। পরে টিটাগড় থানায় অভিযোগও করেন। বিপদ বুঝে বিশ্বজিৎ পালালেও রাতেই তাঁর বাবা ও জামাইবাবুকে ধরা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পরে গণেশবাবুই প্রতিশ্রুতি দেন ছেলের বিয়ে অ্যাঞ্জেলার সঙ্গেই দেবেন। |
সহবাস করে চম্পট। থানার চেষ্টায় অবশেষে বিয়ে। |
সোমবার বিশ্বজিৎকে নিয়ে থানায় আসেন পরিজনেরা। অ্যাঞ্জেলাও যান। কিন্তু আর ঠকতে চাননি তিনি। আইসিকে বলেন, ‘‘আমি এখনই বিয়ে করতে রাজি। নইলে আবার ও পালাবে।’’ খুব তাড়াতাড়ি পুলিশকর্মীরা ধুতি, বেনারসি, গয়না, লিপস্টিক, নেলপালিশ জোগাড় করেন। কেনা হয় মালা, টোপর। স্থানীয় ডেকরেটর্স-এর কাছ থেকে চেয়ার টেবিল এনে বসার ব্যবস্থা হয়। এক পুলিশকর্মী নিজের বাড়ি থেকে সিডি এনে সানাই বাজানোরও ব্যবস্থা করেন। ম্যারেজ রেজিস্ট্রার এসে প্রথমে থানার মধ্যে দু’জনের আইনি বিয়ে দেন। তার পরে হয় মালাবদল ও সিঁদুর দান। আইসি বলেন, ‘‘শুধু চোর ধরাই আমাদের কাজ নয়। আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই কাজ করেছি।”
নবদম্পতিকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। ছিলেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক ও ব্যারাকপুর ও টিটাগড় পুরসভার চেয়ারম্যান। বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বলেন, ‘‘পাত্র-পাত্রী দু’পক্ষেরই ভাল মন্দের খেয়াল রাখব। এই বিয়েটায় আমাদের সঙ্গে ওঁদের আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’’ বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘অ্যাঞ্জেলাকে নিয়ে সুখী থাকব, সবাই দেখবেন।’’ |