পণের দাবিতে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। মৃন্ময় দত্ত নামে বনগাঁর বাসিন্দা ওই যুবক সোমবার দুপুরে নিজেই বনগাঁ থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। হাতে একগাছি দড়ি। পুলিশকে তিনি জানান, ওই দড়ির ফাঁসেই খুন করেছেন স্ত্রীকে।
এ দিকে, ঘটনার কথা জানতে পেরে জনরোষ আছড়ে পরে তাঁর পরিবারের উপরে। মারধর করা হয় মৃন্ময়ের বাবা-মা-বোনকে। ভাঙচুর চলে তাঁর বাড়ি, গোডাউনে। নুপুর দত্ত (২৬) নামে ওই বধূর দেহ উদ্ধারে গিয়ে আবার জনতার বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। জখম হন বনগাঁর এসডিপিও রূপান্তর সেনগুপ্ত, গাইঘাটার ওসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়-সহ ১৪ জন পুলিশ কর্মী। রূপান্তরবাবুকে ভর্তি করা হয়েছে বারাসতের একটি নার্সিংহোমে। বাকিরা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়ে, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।
সোমবার দুপুর থেকে দফায় দফায় এই ঘটনা চলে বনগাঁ পুরসভার মুস্তাফিপাড়ায়। যশোহর রোডের ধারেই মৃন্ময়ের বাড়ি। গোলমাল এক সময়ে রাস্তার উপরে উঠে আসে। সন্ধের দিকে কিছু ক্ষণের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় যশোহর রোডে। পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। নুপুরের দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তে। মৃন্ময়, তাঁর বাবা মলয়, মা মধুমিতা ও বোন মিমিকে আটক করেছে পুলিশ। স্থানীয় কাউন্সিলর অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, “মৃন্ময় স্ত্রীর উপরে অত্যাচার করত। এ দিন জনরোষ তার বাবা-মায়ের উপরে গিয়ে পড়ে।” |
নুপুরের মামা বিশ্বনাথ দত্তবণিক বলেন, “বিয়ের সময়ে টাকা-পয়সা যৌতুক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছ’মাস কাটতে না কাটতেই আরও টাকা চেয়ে ফোন আসতে শুরু করে শ্বশুরবাড়ি থেকে। মেয়েকে মারধরও করা হত। দফায় দফায় ৪ লক্ষ টাকা দিয়েও শেষে এই পরিণতি হবে ভাবতে পারিনি।” চোখেমুখে আতঙ্ক নুপুরের চার বছরের ছেলে রূপের। কাঁদতে কাঁদতে বলে, “মাকে বাবাই মেরেছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর আটেক আগে বারাসতের বাসিন্দা নুপুরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বনগাঁর প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র ব্যবসায়ী মৃন্ময়ের। বিয়ের পর থেকে পণের দাবিতে নুপুরের উপরে শারীরিক-মানসিক অত্যাচার শুরু হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন। পাড়া-প্রতিবেশীদের দাবি, স্ত্রীকে সিগারেটের ছেঁকা দিতেন মৃন্ময়। বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যেই তরুণীর চিৎকার শোনা যেত।
পারিবারিক অশান্তির জেরেই তিনি স্ত্রীকে খুন করেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশকে জানিয়েছেন মৃন্ময়। যদিও তাঁর বাবা-মায়ের বক্তব্য, “আমাদের সঙ্গে ছেলের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ওরা একতলায় নিজেদের মতো থাকত। রবিবার রাতে বৌমাকে মারধর করছিল ছেলে। আমরা বারণ
করতে গেলেও শোনেনি। আমাদের ধারণা, অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে ছেলের সম্পর্ক ছিল। সেই কারণেই অশান্তি হত।” |