ভেঙে পড়েছে বাংলোর চারপাশ ঘেরা ইটের পাঁচিল। সেগুন কাঠের তৈরি ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে বর্ষায়। ভেঙে গিয়েছে রেলিং। বাংলোর এক পাশে গোসাবা থানা, অন্যপাশে ব্লক প্রশাসনের অফিস। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর বাংলোয় বসে যায় মদ-জুয়ার আসর। সংস্কারের অভাবে এমনই জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে রবীন্দ্রস্মৃতি বিজড়িত গোসাবার বেকন বাংলো। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ রকম ঘটনা ঘটলেও এ সব বিষয়ে কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৩২ সালের ৩০ ডিসেম্বর স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিল্টনের আমন্ত্রণে সাহেবের ইয়ং বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটির কাজকর্ম দেখতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন গোসাবায়। শোনা যায়, শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন কর্মধারার সঙ্গে হ্যামিল্টন সাহেবের কাজের মিল পেয়েছিলেন কবিগুরু। তিনি এসে দেখে যান সাহেবের পল্লি উন্নয়ন। তাঁর আতিথেয়তায় বেকন বাংলোতে দু’রাতও কাটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর স্মৃতিধন্য বাংলোর করুণ অবস্থা দেখে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ এলাকার বহু মানুষ।
তাঁদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল, বেকন বাংলোর সংস্কার করে হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের মর্যাদা দেওয়া হোক এবং ওই ভবনে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত জিনিসগুলি নিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক। কিন্তু প্রশাসনিক উদাসীনতায় তা হয়নি। বাংলোর সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। সন্ধে নামলেই বসে নেশাখোরদের আড্ডা।
সম্প্রতি এই বাংলোর সংস্কারের বিষয়ে জোরদার দাবি তুলেছেন ‘সুন্দরবন নাগরিক মঞ্চ’। মঞ্চের পক্ষ থেকে বাংলোর সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও অবাঞ্ছিত লোকজনের আনাগোনা বন্ধ করতে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে গোসাবার বিডিওকে। মঞ্চের সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা এই বাংলো দেখতে আসেন। কিন্তু বেশির ভাগই হতাশ হয়ে ফিরে যান। বাংলোর বিষয়ে দাবি জানিয়ে আমরা প্রশাসন, স্থানীয় সাংসদ তরুণ মণ্ডলকে এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছি।”
জয়নগরের সাংসদ তরুণ মণ্ডল বলেন, “বেকন বাংলোর সংস্কার এবং ওই জায়গায় রবীন্দ্রনাথের একটি মূর্তি বসানোর জন্য আমার সাংসদ কোটার টাকা থেকে অর্থ বরাদ্দ করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনিক তৎপরতার অভাবে এখনও সংস্কার হয়নি।” অন্য দিকে, বিডিও সুমন চক্রবর্তী বলেন, “খুব শীঘ্রই বাংলোর ভেঙে পড়া পাঁচিল ও অন্যান্য ক্ষেত্রের সংস্কার করা হবে। তবে, সাংসদ কোটার টাকায় যে রবীন্দ্র-মূর্তি বসানোর কথা বলা হয়েছে, তার জন্য আমাদের ব্লক স্তরে তেমন পরিকাঠামো নেই। এ জন্য বাইরের কোনও বিশেষজ্ঞকে দিয়ে কাজ করানোর বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।” |