টিকিট ব্ল্যাকের কথা হামেশাই শোনা যায়। কিন্তু মোবাইল, ই-মেলের যুগে পোস্টকার্ডও বিকোচ্ছে ব্ল্যাকে?
আজ্ঞে হ্যাঁ, পঞ্চাশ পয়সার পোস্টকার্ডের দাম পাঁচ টাকা! “নিতে হলে নেবেন, না হলে নেবেন না। সামান্য পোস্টকার্ড নিয়ে অত দর-দাম পোষাবে না দাদা’’-সাফ জানান ডোমকলের এক মনোহারি দোকানের বিক্রেতা।
নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের ডাকঘরগুলিতে বেশ কিছুদিন থেকেই ঘাটতি চলছে পোস্টকার্ডের। প্রয়োজনের সময় পোস্টকার্ড না পেয়ে হয়রান হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দিন কয়েক আগে মেয়ের জন্য ওবিসি শংসাপত্র সংগ্রহ করতে ডোমকল বিডিও অফিসে গিয়েছিলেন কুপিলা গ্রামের বাবর আলি। সেখানে তিনি জানতে পারেন আবেদনপত্রের সঙ্গে পোস্টকার্ড লাগবে। বাবর বলেন, “ডাকঘরে গিয়ে পোস্টকার্ড পেলাম না। শুনলাম, বাজারে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে। পাওয়াও গেল। কিন্তু পঞ্চাশ পয়সার একটা পোস্টকার্ডের দাম নিল পাঁচ টাকা।”
বাবর আলি একা নন, সীমান্তবর্তী ডোমকল মহকুমায় পোস্টকার্ড কিনতে গিয়ে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। অন্য দিকে নদিয়ার বেশ কিছু পোস্ট অফিসেও দীর্ঘদিন ধরে পোস্টকার্ডের ঘাটতি চলছে। তবে ডোমকলের মতো অবশ্য ব্ল্যাকে পোস্টকার্ড বিক্রির খবর নেই। মুর্শিদাবাদের জেলা ডাক বিভাগের সুপারিন্টেনডেন্ট জগন্নাথ বিশ্বাস বলেন, “জেলার বেশ কিছু পোস্ট অফিসে পোষ্টকার্ডের ঘাটতি আছে। খুব শীঘ্র সেই ঘাটতি মিটেও যাবে। পোস্টকার্ড কী ভাবে ব্ল্যাক হচ্ছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”
ডাকঘর কর্মীরা জানান, মাঝখানে একেবারেই পোস্টকার্ডের বিক্রি কমে গিয়েছিল। ইদানিং সরকারি কিছু কাজকর্মে পোস্টকার্ডের দরকার পড়ছে। তাই মানুষ প্রয়োজনে পোস্টকার্ড কিনতে ফের ডাকঘরমুখী হচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় জোগান কম থাকাতেই মানুষ পোস্ট অফিসে এসে হয়রান হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এক লপ্তে বেশ কিছু পোস্টকার্ড তারা সংগ্রহ করে নিজেদের কাজে মজুত রাখছে। পরে চড়া দামে সেগুলো বিক্রি করছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলছেন, “আমাদেরও বেশি দাম দিয়ে পোস্টকার্ড কিনতে হচ্ছে। পাঁচ টাকায় বিক্রি না করলে আমাদেরও তো লাভ থাকবে না।” আপনারা কোথা থেকে কিনছেন? তার কোনও উত্তর মেলেনি। ডোমকল উপ-ডাকঘরে পোস্টমাস্টার সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “মাস কয়েক আগেও পোস্টকার্ড তেমন বিক্রি হত না। এখন ওবিসি শংসাপত্র সংগ্রহের আবেদনপত্রের সঙ্গে পোস্টকার্ড দিতে হচ্ছে। তাতেই পোস্টকার্ড কেনার হিড়িক পড়েছে। বিষয়টি আমরা জেলাসদরে জানিয়েছি। এই সমস্যা বেশি দিন থাকবে না।” ডোমকলের বিডিও রবীন্দ্রনাথ মিশ্র বলেন, “ওবিসি শংসাপত্রের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে নাম-ঠিকানা লিখে দুটো পোস্টকার্ড জমা দিতে হচ্ছে। শুনানির সময় ওই পোস্টকার্ড পাঠিয়ে আবেদনকারীকে ডাকা হবে। কালোবাজারে পোস্টকার্ড কারা, কী ভাবে বিক্রি করছে তা নিয়ে আমরাও খোঁজখবর শুরু করেছি।” |