অধীরের খাসতালুকে ফুল ফুটল তৃণমূলের
দীর্ঘ পনেরো বছর পরে অধীর চৌধুরীর খাসতালুকে দু’টি ঘাসফুল ফুটল।
বহরমপুরে এ বারও বিরোধী-শূন্য পুরবোর্ড গড়ার দাবি করেছিলেন অধীর। কিন্তু সোমবার বেলা গড়ানোর আগেই স্পষ্ট হয়ে যায়, সেই দাবি পূরণ হচ্ছে না। ৩ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে জিতছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। দিনের শেষে রেল প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য, “যা চাইব, সব সময় তো তা হয় না। মানুষের রায় আমি মাথা পেতে নিচ্ছি।”
২৮ আসনের পুরসভায় দু’টি আসন খোয়ানোটা এক দিকে যদি অধীরের অহংয়ে আঘাত দিয়ে থাকে, তা হলে অন্য দিকে কি তাঁর দুর্গে ফাটলের ইঙ্গিতবাহী?
সংখ্যাতত্ত্ব এখনই সে কথা বলছে না। কারণ, শতাংশের হিসেবে কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কে তেমন ক্ষয় হয়নি। ২০০৮ সালের পুরভোটে ৬৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। সে বার ভোট পড়েছিল ৮৪ শতাংশ। এ বার ৫ শতাংশ কম ভোট পড়েছে। আর কংগ্রেস পেয়েছে ৬০ শতাংশ ভোট।
পুরভোটের ফল ঘোষণার পর জেলা কার্যালয়ে অধীর চৌধুরী। সোমবার গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
আসলে তৃণমূলের উত্থান হয়েছে বাম ভোট কেটেই। গত পুর নির্বাচনে বামেদের ভোট ছিল ২৪.৫৮ শতাংশ। গত বিধানসভাতেও বহরমপুর এলাকায় তা ছিল ২৯ শতাংশ। এ বার তা কমে হয়েছে ১০.১১ শতাংশ। অন্য দিকে তৃণমূলের ভোট ২০০৮-এর ২.৮ শতাংশ থেকে এক লাফে বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ, সিপিএম-কে সরিয়ে বহরমপুরে অধীরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠল তৃণমূল।
বামেদের এই বিপর্যয়ের কথা মেনে নিয়েই সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলছেন, “বহরমপুরে বামফ্রন্ট বরাবর দুর্বল। কিন্তু এতটা খারাপ ফল হবে ভাবিনি। বাম ভোটের বেশির ভাগই গিয়েছে শাসক দলের ভোট বাক্সে।” বহরমপুর পুরসভাটের দায়িত্বে থাকা জেলা তৃণমূলের নির্বাহী সম্পাদক হুমায়ুন কবীরেরও মন্তব্য, “বহরমপুরের বাম ভোটও যে আমাদের দিকেই ঘুরেছে তা নিয়ে সংশয় নেই।”
আর অধীরের কথায়, “কংগ্রেসের ভোট প্রায় একই আছে। কিন্তু বাম ভোটের একটা বড় অংশ চলে গিয়েছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের দিকে। বহরমপুরে তৃণমূলের খাতা খোলার এটাও একটা কারণ।” কিন্তু ভোটব্যাঙ্ক মোটের উপর অটুট থাকলেও বহরমপুরে তৃণমূলের এই উত্থান যে অধীরকে অস্বস্তিতে রাখবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, পুরসভায় পা রাখতে পেরে উজ্জীবিত শাসক দল এ বার রেল প্রতিমন্ত্রীকে আরও চাপে রাখার চেষ্টা করবে। বস্তুত, অধীর নিজেও ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, নিজের জমিতে তৃণমূলের এই অনুপ্রবেশ তাঁকে মোটেই স্বস্তি দিচ্ছে না।
এ বার দুই ওয়ার্ডে কংগ্রেসকে হারতে হল কেন? অধীরের ব্যাখ্যা, “শুরুটা বড্ড দেরি হয়ে গেল। আমি বহরমপুর এসে প্রচার শুরুর করার অনেক আগেই ময়দানে নেমে পড়েছিল তৃণমূল। দলটাকে গুছিয়ে নেওয়ার সময়টুকুও পেলাম না।” তাঁর দাবি, ষড়যন্ত্র করে তাঁকে খুনের মামলায় জড়িয়ে দেওয়াটা রাজ্য সরকারের একটা নির্বাচনী-চাল। অধীর বলেন, “হাইকমান্ডের নির্দেশ মেনে ওই সময়ে আগাম জামিন না পাওয়া পর্যন্ত বহরমপুরে আসতে পারিনি। যা নির্দেশ দিয়েছি সবই ফোনে। সেটাই কাল হয়েছে।”
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের এক তাবড় নেতাও ওই যুক্তি মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেস মানে অধীর চৌধুরী। ওঁর বহরমপুরে ফিরতেই অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ হয়ে গিয়েছিল। তত ক্ষণে আমরা প্রচারের অনেকটাই সেরে রেখেছিলাম।” অধীর-হীন ছন্নছাড়া কংগ্রেস যখন প্রার্থী বাছাই করতে হিমশিম খাচ্ছে তখন তৃণমূল রাজ্যস্তরের নেতাদের এনে প্রচার সেরে রেখেছিল অনেকটাই।
এ সব সত্ত্বেও দুই ওয়ার্ডে জয়কে দল হিসেবে তৃণমূলের সাফল্য বলে মানতে নারাজ অধীর। তিনি বলেন, “তৃণমূলের ওই দু’জনই স্থানীয় প্রার্থী। তাঁরা দীর্ঘ দিন কংগ্রেসের কাউন্সিলর ছিলেন। সে সময়ে এলাকায় কাজও করেছেন। পাশাপাশি আমাদের দুই কাউন্সিলরের কাজ তেমন আশাপ্রদ ছিল না।”
৩ নম্বর এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী কানাই রায় ও প্রদীপ নন্দী একদা অধীর-ঘনিষ্ঠই ছিলেন। ২০০৪ সালে ইন্দিরা-রাজীব মঞ্চ গড়ে তাঁরা অধীর-বিরোধিতা শুরু করেন। তবে তার আগেই তিন-তিন বারের ওই দুই কাউন্সিলর যে এলাকায় কাজ করেছেন, এই জয় তারই স্বীকৃতি বলে দাবি করছেন কংগ্রেসের একাংশ।
এ দিকে, অধীর-গড়ে খাতা খুলেও শাসক দলের কোন্দল ঢাকা থাকছে না। হুমায়ুন যেমন বলেন, “কার সাফল্যে কে বড় নেতা, দলে এই ইগোর লড়াই না থাকলে আমরা আরও আসন পেতাম। আমাকে একই সঙ্গে কংগ্রেসের পাশাপাশি নিজের দলের নেতাদের সঙ্গেও তো লড়তে হয়েছে!”
তাঁর লক্ষ্য কে? রাজ্যের মন্ত্রী পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুব্রত সাহা বলেন, “কোনও নেতাই নিজে থেকে নেতা হন না, বড় হন না। মানুষ যাঁকে বড় করে তিনিই বড় হন। ২২ নম্বর ওয়ার্ড আমাদের পাওয়া কথা ছিল, কিন্তু পেলাম না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.