দৃষ্টিহীনদের নিরলস সেবার স্বীকৃতি জাতীয় পুরস্কারে
র্ধ শতাব্দী ধরে দৃষ্টিহীন শিশুদের জীবনে চলার পথ দেখিয়েছেন। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক স্বামী বিশ্বনাথানন্দ। আগামী ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেবেন তিনি। দৃষ্টিহীনদের হয়ে কাজ করার জন্য বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমকেও পৃথক ভাবে ওই দিন পুরস্কৃত করা হবে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও স্বামী বিশ্বনাথানন্দকে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
স্বামী বিশ্বনাথানন্দ।
—নিজস্ব চিত্র।
স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রহ্মচারী ভক্তি চৈতন্য ১৯৬২ সালে সুতাহাটা থানার রামপুরে বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে ১৯৫৬ সালে রামপুরেই নারীশিক্ষার জন্য গড়ে ওঠে সারদাময়ী বালিকা বিদ্যালয়। ১৯৬৩ সালে প্রথাগত শিক্ষার জন্য বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম বিদ্যামন্দির গড়ে তোলা হয়। কলকাতায় ছাত্র জীবন শেষ করে ওই বছরই বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন স্বামী বিশ্বনাথানন্দ। স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দিতে ১৯৬৮ সালে বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ও গড়ে ওঠে। যার অধ্যক্ষ হন তিনি। ১৯৮৪ সাল থেকে মিশনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দৃষ্টিহীনদের শিক্ষায় আলোয় নিয়ে আসতে বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম আবাসিক দৃষ্টিহীন শিক্ষায়তন গড়ে ওঠে। ওই শিক্ষায়তনের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা ব্রহ্মচারী গীতাদেবী বলেন, “দৃষ্টিহীনরা পারিবারিক ও সমাজ জীবনে চরম অবহেলিত। তাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিতে ১৯৮৭ সালে বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।”
আগে দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসার কোনও সুযোগ ছিল না। সেই অভাব দূর করতে ১৯৯৪ সালে ‘নেত্র নিরাময় নিকেতন’ গড়ে ওঠে। নিকেতনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বামী বিবেকাত্মানন্দ জানান, ২২টি শয্যা নিয়ে প্রথমে পথ চলা শুরু। এখন শয্যার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে একশো। তার মধ্যে ৪০টি শয্যায় বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগও রয়েছে। রয়েছেন ১২ জন আবাসিক চিকিৎসক। রাজ্য জুড়ে নিকেতনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে চক্ষু পরীক্ষা শিবিরের আয়োজনও করা হয়। নিকেতনের বহির্বিভাগে বছরে গড়ে ২ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা হয়। অস্ত্রোপচার হয় প্রায় আঠারো হাজার মানুষের। তিনি আরও জানান, রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশনের তত্ত্বাবধানে এখানে দশটি জেলার দশ হাজার দৃষ্টিহীন ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। নিকেতনের পক্ষ থেকে তাদের নানা সহায়তাও দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে দৃষ্টিহীনদের জন্য দেশের মধ্যে প্রথম সুসংহত প্রতিবন্ধকতাহীন পরিবেশ ও উপস্থাপন কক্ষও গড়ে তোলা হয়।
স্বামী বিশ্বনাথানন্দ জানান, ১৯৯৫ সালে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য আশ্রমে গ্রন্থাগার গড়ে তোলা হয়। ওই বছরই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত প্রাপ্তবয়স্ক দৃষ্টিহীনদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ‘সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন প্রকল্প’ শুরু করা হয়। বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক দৃষ্টিহীনদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ওই প্রকল্পে। ১৯৯৭ সালে এই উদ্দেশাকে সফল করতে গড়ে তোলা হয় বৃত্তিমূলক গবেষণা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। তারপর থেকে একে একে সর্বধর্মের মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য প্রার্থনা গৃহ, ব্রহ্মচারী মহিলাদের জন্য সারদা মিশন সেবাশ্রম, দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্রেইল প্রেস গড়ে ওঠে। ভিন রাজ্য ও জেলার চক্ষু চিকিৎসকদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও শিশুদের চক্ষু পরীক্ষার জন্য ‘পেডিয়াট্রিক ইউনিট ফর বেটার ভিশন’ রয়েছে। দৃষ্টিহীনরা যাতে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরতে পারে সেজন্যই আমাদের এই সমস্ত উদ্যোগ। কর্নিয়া সংগ্রহ ও প্রতিস্থাপনের জন্য আই ব্যাঙ্ক গড়ে উঠেছে।
তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের কাজে স্বামী বিশ্বনাথানন্দজী অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই কাজে তাঁর নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতার স্বীকৃতি পেলেন তিনি।” স্বামী বিশ্বনাথানন্দ বলেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে এই আশ্রমে দু’বার এসেছেন। অতীতের পাওয়া যে কোনও পুরস্কারের অর্থই সঞ্চয় করে আশ্রমের কর্মীদের পুরস্কৃত করেছি। তিনি আরও বলেন, “সমাজসেবার সুযোগ পেয়েছি এটাই বড়। বাকি সবই মানুষের জন্য। মানুষের সেবা করা ও তাঁদের সন্তুষ্টিবিধানই আসল লক্ষ্য।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.