|
|
|
|
চার মন্ত্র নিয়ে ঋদ্ধিমান যাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তাঁর ক্রিকেটজীবনে দক্ষিণ আফ্রিকা নতুন নয়, এই প্রথমও নয়। তিন বছর আগে ডেল স্টেইনের দেশে ভারতীয় টেস্ট টিমের সঙ্গে ঋদ্ধিমান সাহা গিয়েছিলেন, ঠিক যেমন এ বার যাচ্ছেন।
তিন বছর আগে ভারত ওখানে তিনটে টেস্ট খেলেছিল। কোনও সাইড গেম ছিল না। ঋদ্ধিমান সাহারও দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলতে নামা হয়নি।
তিন বছর পর ভারত আবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছে। টেস্ট ম্যাচ এ বার তিনটের বদলে দু’টো, সাইড গেমও আছে একটা। ঋদ্ধিমান সাহাও আছেন।
এ বার আশাবাদ আছে?
“সেটা তো আমার হাতে নেই। টেস্ট খেলব কি খেলব না, টিমে থাকব কি থাকব না, এগুলো ভেবে কোনও দিনই তো ক্রিকেট খেলিনি আমি,” সোমবার টেস্ট টিমে ডাক পাওয়ার পর বলছিলেন ঋদ্ধিমান। দীনেশ কার্তিক বনাম তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরগামী টেস্ট টিমে শেষ পর্যন্ত কে, জাতীয় প্রচারমাধ্যমের জল্পনার মাঝেও যাঁর শোনা গেল নির্বাচন নিয়ে বিন্দুমাত্র টেনশন হয়নি। যিনি টেস্ট টিমে ডাক পাওয়ার পরেও জানেন না, পরের পর রঞ্জি যুদ্ধ থেকে সময় বার করে প্রস্তুতির সময়টা আদৌ বার করা যাবে কি না। যিনি জানেন না, খেললেও কোন পজিশনে তাঁকে নামতে হবে। শুধু জানেন এক থেকে এগারোর যে কোনও একটা হলেই তাঁর চলবে। আর জানেন, নামলে তাঁর গেমপ্ল্যানটা কী হবে। |
সামনে লম্বা সফর। তার আগে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন ঋদ্ধিমান। সোমবার। ছবি: উৎপল সরকার। |
“ক্লাব ক্রিকেট থেকেই কখনও ভাবিনি এখানে ভাল খেললে আমি রঞ্জি খেলব। আবার রঞ্জিতে নেমেও কখনও ভাবিনি এখানে ভাল খেললে আমি ইন্ডিয়া খেলব। আমি যে ম্যাচেই নামি, চেষ্টা করি শুধু নিজের আরও উন্নতি করার,” বলে দিচ্ছেন ঋদ্ধিমান। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় এ বার শেষ পর্যন্ত নেমে পড়লে স্টেইনদের সামনে আপনার কাউন্টার স্ট্র্যাটেজিটা কী হবে? বঙ্গজ উইকেটকিপার যে ‘টু ডু’ লিস্টটা দিলেন, সেটা এ রকম:
১) প্রথম দিকে কুড়ি-পঁচিশ মিনিট স্রেফ দেখে নেওয়া। কোনও রকম ঝুঁকির রাস্তায় যাওয়া নেই।
২) লুজ বল পেলে চালানো। তাঁর নিজের কথায়, “যদি আচমকা একটা বল মারাত্মক হয়ে যায়, তখন?”
৩) শর্ট বলের সামনে একমাত্র প্রয়োজনে ‘পুল’ বা ‘হুক’ মারা। কারণ ঋদ্ধিমান নিজেই জানাচ্ছেন, তিনি স্বভাবসিদ্ধ ‘হুকার’ নন। যা পাব, তাই ‘পুল’ বা ‘হুক’ মেরে ফেলে দেব, সেই থিওরিতে তিনি বিশ্বাস করেন না। বরং বিশ্বাস করেন বল ছাড়ার থিওরিতে।
৪) বল শেষ পর্যন্ত দেখে তবে শট সিলেকশনে যাওয়া। “ওটা খুব দরকার ওখানে। বল থেকে চোখ সরালেই ভুগতে হবে,” বলে দিচ্ছেন ঋদ্ধি।
মঙ্গলবারই বাংলা টিমের সঙ্গে দিল্লি উড়ে যেতে হচ্ছে। সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে রঞ্জি খেলতে। বুধবার থেকে যে ম্যাচ শুরু রোশনারা স্টেডিয়ামে। এবং যা পরিস্থিতি, তাতে সম্ভবত আলাদা প্র্যাকটিসের চেয়ে রঞ্জি ট্রফি ম্যাচেই প্রস্তুতি সারতে হবে তাঁকে। ঋদ্ধি বলছিলেন, “তাতেও খারাপ লাভ হবে না। ইডেনের শেষ রঞ্জি ম্যাচটা যদি দেখেন, তা হলে দেখবেন উইকেটে ঘাস ছিল। ভাল বাউন্স ছিল। আবার সাংবাদিকদের থেকে যা শুনছি, রোশনারার উইকেটে ঘাস থাকবে। বাউন্সও থাকবে। তবে হ্যাঁ, সাউথ আফ্রিকায় সেটা আরও বেশি থাকবে। প্লাস ওখানে ল্যাটারাল মুভমেন্টটাও হবে।” একটু থেমে ফের সংযোজন, “সফরটা খুব কঠিন। স্টেইন। মর্কেল। ফিলান্ডার। কালিস। দুর্ধর্ষ সব বোলার। তবে এর আগেও আমি ‘এ’ টিমের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছি। ইংল্যান্ড গিয়েছি। দেশের বাইরে বেরোলেই তো আপনি কমফোর্ট জোনের বাইরে চলে যাচ্ছেন। সেটা যেখানেই হোক।” যদি বলা হয়, ওপেন করতে হবে, পারবেন? তাৎক্ষণিক উত্তর আসে, “কেন নয়? কেরিয়ারে প্রায় সব পজিশনে ব্যাট করেছি। এক থেকে এগারো, সব জায়গায়। বললে যে কোনও জায়গায় নেমে যাব।”
সাম্প্রতিকে এক অদ্ভুত চুলের ছাঁট নিয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বাংলা উইকেটকিপারকে। চুলের এক দিক বেশ কিছুটা ছেঁটে ইংরেজির ‘ডব্লিউ’ লেখা।
সিআর সেভেনের থেকে অনুপ্রেরণা? নাহ্।
জ্যোতিষী দেখিয়েছেন? তুকতাক? এটাও ভুল। ও সব বিশ্বাসই করেন না।
ঋদ্ধিমান সাহা ওটা করিয়েছেন, ছোট থেকে ইচ্ছে হত বলে। নিজের আলাদা ‘পরিচয়’ হোক বলে।
বঙ্গসমাজও ‘টিমে আছি, মাঠে নেই’-এর বাইরে এ বার তাঁর একটা অন্য ‘পরিচয়’ চায়। |
|
|
|
|
|