জাতীয় সড়ক নিয়ে ক্ষোভ জারি
ধুলোর জ্বালায় অবরোধে মহিলারাও
৩ বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে বিধবা ভাতা চালু করার আবেদনও জানিয়েছেন। অভিযোগ, পুরসভার কাছে বহু বার আবেদন করেও তিনি তা পাননি। আবেদনের মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ সাতটা বছর। পরে তিনি আবেদন করেন বার্ধক্য ভাতারও। কিন্তু বিপিএল তালিকাভুক্ত হয়েও এ বারও মেলেনি সরকারি প্রকল্পের সাহায্য। রামপুরহাট শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোরসুদা বিবির অন্তত তেমনটাই দাবি। সোমবার তারই প্রতিবাদে মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে একাই অনশনে বসে পড়েন ৬৭ বছরের ওই বৃদ্ধা। মহকুমা প্রশাসনের কর্তাদের আশ্বাসে রাত ৮টা নাগাদ তিনি অবশ্য ওই অনশন তুলে নেন।
মোরসুদার এই আন্দোলন অবশ্য অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রথমত, এক জন বৃদ্ধা কেন বারবার আবেদন করেও নিজের নাম তালিকায় দেখতে পাননি? এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর কোনও লিখিত আবেদন পাননি বলে দাবি করলেও, প্রশাসনিক সূত্রে খবর এই ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরকেই খোঁজ নিয়ে নাম পাঠাতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রাপকদের লিখিত আবেদন বাধ্যতামূলক নয়। মোরসুদার আন্দোলনের জেরে দ্বিতীয় যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হল রামপুরহাট পুরসভা এলাকায় গত দু’ বছর ধরে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার জন্য নতুন প্রাপকদের তালিকা তৈরি হয়নি। এ দিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, মোরসুদা বিবি একা নন। রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে অধিকাংশ জনই অনিয়মিত ভাবে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার মতো সরকারি প্রকল্পগুলির টাকা পাচ্ছেন। কেউ একদমই পাচ্ছেন না। কেউ আগে পেলেও এখন পাচ্ছেন না। আবার প্রকৃত দাবিদার হলেও অনেকেরই নাম এখনও তালিকাভুক্ত হয়নি। অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্তারা।
অবরোধে অরবিন্দপল্লির বাসিন্দারা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংস্কারহীন রাস্তার ধুলোর চোটে টিকে থাকায় মুশকিল হয়েছে। এমনকী, ফের ময়লা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কাঁচা কাপড়ও মেলতে পারছেন না বাসিন্দারা। সোমবার সকালে তারই প্রতিবাদে পথে নামলেন এলাকার মহিলারাই। রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের সংস্কারের দাবিতে অবরোধে সামিল হলেন সিউড়ির অরবিন্দ পল্লির ওই বাসিন্দারা। অবরোধকারীদের দাবি, ওই রাস্তা উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে ভরে ধুলোময় হয়ে পড়েছে। যার জেরে রাস্তার দু’ ধারের বাড়িগুলিতে বসবাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এ দিন তাঁরা অবরোধে সামিল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলার পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় অবরোধকারীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ অরবিন্দ পল্লির কাছে জাতীয় সড়কে অবরোধ শুরু হয়। অবরোধকারীদের অভিযোগ, “এখানে রাস্তার অবস্থা সম্পূর্ণ বেহাল। খানাখন্দে আর ধুলোয় ভর্তি রাস্তা দিয়েই ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চলাচল করছে। একটা গাড়ি গেলেই ধুলোয় কিছু দেখা যাচ্ছে না।” এক জন বলে উঠলেন, “শুধু ধুলো? গাড়ির চাকায় লেগে পাথরের টুকরো ছিটকে এসে হামেশাই পথচারীরা জখম হচ্ছেন। ধুলোর চোটে ঘরের দরজা-জানলা খোলার উপায় নেই। এমনকী, কাঁচার পরে কোথায় কাপড় মেলাও যাচ্ছে না।” ধুলোর চোটে এলাকার অনেকেরই নানা অসুখও দেখা দিচ্ছে বলে তাঁদের দাবি। এই পরিস্থিতিতে হয়, রোজ ৪-৫ বার রাস্তায় জল ছিটোনো হোক, তা না হলে ওই রাস্তা সম্পূর্ণ সারানোর দাবি তাঁরা তুলেছেন। যদিও এ দিনের অবরোধের জেরে দু’ ঘণ্টা ধরে যানজটের তৈরি হয়। বহু সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েন। জাতীয় সড়কের দু’ দিকের লাইনের সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। যানজটে আটকে থাকা রামপুরহাটের শাকিল শেখ, মল্লারপুরের অমর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আসানসোল যাব। কিন্তু অবরোধের চোটে আটকা পড়েছি। কত ক্ষণ এ ভাবে চলবে কে জানে।” রোজ জোর জেরে অবরোধের নিত্যযাত্রী আর গাড়ি চালকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। এ দিকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশি হস্তক্ষেপে দু’ ঘণ্টা পরে ১০টা নাগাদ অবরোধ উঠে যায়।
রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। জায়গায় জায়গায় পিচ ভেঙে পড়া ওই রাস্তার ধুলোর দূষণে জেরবার হয়ে প্রায় দিনই অবরোধে সামিল হচ্ছেন তাঁরা। মাস খানেক ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকাতেই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে দেখা যাচ্ছে প্রতিবাদের এই চিত্র। গত দু’ দিন ধরে মহম্মদবাজারের সোঁতশাল এবং শেওড়াকুড়িতেও একই কারণে পথ অবরোধ হয়েছে। একেই খানাখন্দে ভরা রাস্তা, তার উপর রোজ দিন পথ অবরোধ দুইয়ে মিলে রোজই প্রায় নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ যাত্রী থেকে পণ্যবাহী গাড়ির চালকেরা। এ দিনই রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সুশোভন গুহ জানিয়েছেন, গত বছর অগস্ট মাসে মহম্মদবাজার থেকে বক্রেশ্বর এবং দেউচা থেকে মল্লারপুর পর্যন্ত রাস্তা সারানোর ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। ৩৯ কোটি টাকার ওই কাজের টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। কাজ শেষ হলে সমস্যা মিটে যাবে বলেই তাঁর আশ্বাস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.