১৩ বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে বিধবা ভাতা চালু করার আবেদনও জানিয়েছেন। অভিযোগ, পুরসভার কাছে বহু বার আবেদন করেও তিনি তা পাননি। আবেদনের মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ সাতটা বছর। পরে তিনি আবেদন করেন বার্ধক্য ভাতারও। কিন্তু বিপিএল তালিকাভুক্ত হয়েও এ বারও মেলেনি সরকারি প্রকল্পের সাহায্য। রামপুরহাট শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোরসুদা বিবির অন্তত তেমনটাই দাবি। সোমবার তারই প্রতিবাদে মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে একাই অনশনে বসে পড়েন ৬৭ বছরের ওই বৃদ্ধা। মহকুমা প্রশাসনের কর্তাদের আশ্বাসে রাত ৮টা নাগাদ তিনি অবশ্য ওই অনশন তুলে নেন।
মোরসুদার এই আন্দোলন অবশ্য অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রথমত, এক জন বৃদ্ধা কেন বারবার আবেদন করেও নিজের নাম তালিকায় দেখতে পাননি? এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর কোনও লিখিত আবেদন পাননি বলে দাবি করলেও, প্রশাসনিক সূত্রে খবর এই ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরকেই খোঁজ নিয়ে নাম পাঠাতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রাপকদের লিখিত আবেদন বাধ্যতামূলক নয়। মোরসুদার আন্দোলনের জেরে দ্বিতীয় যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হল রামপুরহাট পুরসভা এলাকায় গত দু’ বছর ধরে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার জন্য নতুন প্রাপকদের তালিকা তৈরি হয়নি। এ দিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, মোরসুদা বিবি একা নন। রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে অধিকাংশ জনই অনিয়মিত ভাবে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার মতো সরকারি প্রকল্পগুলির টাকা পাচ্ছেন। কেউ একদমই পাচ্ছেন না। কেউ আগে পেলেও এখন পাচ্ছেন না। আবার প্রকৃত দাবিদার হলেও অনেকেরই নাম এখনও তালিকাভুক্ত হয়নি। অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্তারা। |
২০০০ সালে স্বামী মারা গিয়েছিলেন ওই মহিলার। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫৪। তখন থেকেই তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে বিধবা ভাতার তালিকায় নাম তোলার জন্য জানিয়ে আসছেন বলে দাবি করেছেন। প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সলিরদের কাছে পুরপ্রধান ওই তালিকার জন্য নাম চেয়ে পাঠান। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর সমস্ত মাপকাঠি খতিয়ে দেখে প্রকৃত প্রাপকদের নাম পুরসভায় জমা দেন। মোরসুদার অভিযোগ, “কাউন্সিলরের কাছে বারবার ছুটে গিয়েছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় বয়স (৪০-৫৯) থাকাকালীন বিধবা ভাতার জন্য তাঁর কাছে তদ্বির করেও তার সুবিধা পাইনি। পরে ৬০ বছর বয়স হয়ে গেলে তাঁর কাছে প্রাপ্য বার্ধক্য ভাতার জন্যও আবেদন করেছি। কিন্তু তাতেও তিনি আমার নাম পুরসভায় পাঠাননি।” ধৈর্য শেষ হওয়ার পরে সম্প্রতি গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু অভিযোগ, অক্টোবর পর্যন্ত দু’ বার মোরসুদা বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানালেও তিনি কোনও সুরাহা পাননি। তার জেরেই এ দিন তিনি আমরণ অনশনে বসেছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁর ছেলে নুরুল ইসলামের অভিযোগ, “মা বারবার বললেও পাননি। অথচ ওই দুই প্রকল্পে এমন বাসিন্দার নামও পাঠানো হয়েছে, যাঁরা আদৌ তাঁর প্রকৃত প্রাপক নন।” মোরসুদা যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা, সেই ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গত দশ বছর ধরে তৃণমূলের আব্বাস হোসেনই কাউন্সিলর। তাঁর আবার যুক্তি, “ওই মহিলা খালি মুখে বলে যান। আমার কাছে লিখিত ভাবে না জানালে, আমি কী করে জানব কার কী প্রয়োজন!” কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর নিজেরই কি এক বৃদ্ধার বিষয়ে যাঁচাই করে নাম পাঠানো উচিত ছিল না? তাঁর উত্তরে কাউন্সিলরের জবাব, “যাঁর খিদে আছে, তাঁকে তো আমার কাছে এসে বলতে হবে।”
ফোনে মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) রত্নেশ্বর রায় বলেন, “সিউড়িতে প্রশাসনিক বৈঠকে এসেছি। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।” ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত রায় বলেন, “বিষয়টি পুরসভার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। তবু ওই বৃদ্ধার অভিযোগ পেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসেই পুরসভাকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কোনও উত্তর দেননি।” পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার দিলীপকুমার সাধুর পাল্টা দাবি, “মহকুমাশাসকের দফতরের পাঠানো চিঠিতে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। তাই তার উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়নি।” ওই বৃদ্ধার নাম পুরসভায় না আসার জন্যই তাঁর ভাতা চালু হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। এ দিকে রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিনী তেওয়ারি জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাজ্য সরকার নতুনদের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে। সেই তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। নতুন তালিকায় মোরসুদা বিবির নাম তালিকায় অন্তভুক্ত করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে গত দেড় বছর ধরে তৃণমূল পুরপ্রধান হলেও কেন এত দিন ধরে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার নতুন তালিকা তৈরির কাজ হয়নি, অশ্বিনীবাবু অবশ্য তার সদুত্তর দিতে পারেননি।
রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দোপাধ্যায়কেও অনশনে বসার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ওই বৃদ্ধা। বিধায়ক অবশ্য বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। অন্য দিকে, জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রদীপ কুমার বলেন, “বিষয়টি এই প্রথম জানলাম। ওই বৃদ্ধা যদি আমাদের কাছে আবেদন পাঠান, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।” বিধবা ভাতা ও বার্ধক্য ভাতা অনিয়মিত মেলার প্রসঙ্গে জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিক অনুপমা পুরকায়স্থর অবশ্য দাবি, “বীরভূমে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতার টাকা মেটানো হয়ে গিয়েছে।” |