প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে অশান্ত তাইল্যান্ড
সাতসকালে অর্থমন্ত্রক চত্বরে প্রায় তিরিশ হাজার বিক্ষোভকারীর চিৎকার, “বেরিয়ে যাও।” সঙ্গে হুইসলের তীক্ষ্ম-আর্তনাদ, অন্যতম ব্যস্ত সড়কে ব্যাপক যানজট, তুমুল বিশৃঙ্খলা। সোমবার সকালে তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককের ছবিটি এ রকমই। মাসখানেক ধরেই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে তাইল্যান্ডে। সোমবারের প্রতিবাদ সেই আন্দোলনেরই অন্যতম কর্মসূচি।
কিন্তু কেন এই সরকার-বিরোধিতা? তা বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে সাত বছর আগের তাইল্যান্ডে। ২০০৬ সালে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার-সহ বিভিন্ন অভিযোগে সেনা অভ্যুত্থানের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাকসিন শিনাবাত্রা। তার পর থেকে তিনি স্বেচ্ছা-নির্বাসনে।
মাঝখানে ২০০৮ সালে অল্প সময়ের জন্য দেশে ফিরেছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে চলতে থাকা মামলার রায় বেরোনোর আগেই ফের দেশ ছাড়েন। এখনও তিনি তাইল্যান্ডের বাইরে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন তাঁরই বোন ইঙ্গলাক শিনাবাত্রা। সম্প্রতি তাকসিনকে তাইল্যান্ডে ফেরাতে ইঙ্গলাক একটি বিল পাশ করানোর চেষ্টা করছিলেন। এতেই শুরু হয় প্রবল বিক্ষোভ। প্রতিবাদের মুখে বিলটি প্রত্যাহার করে নেন ইঙ্গলাক। কিন্তু তাকসিন-বিরোধীদের একাংশ তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। তাঁদের নয়া দাবি, ইস্তফা দিতে হবে তাকসিন-অনুগত প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের।
ইঙ্গলাক শিনাবাত্রার ইস্তফার দাবিতে ব্যাঙ্ককের রাস্তায় জনতা। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।
কিন্তু গণবিরোধিতা সত্ত্বেও ইঙ্গলাকের প্রত্যয়ী মন্তব্য, “ইস্তফা দেওয়ার বা মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।” বরং তাঁর মতে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা উচিত। শান্তির পথ বেছেছেন বিক্ষোভকারীরাও। সরকার-বিরোধী এই প্রচারের অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী সুতেপ তাউগসুবান বললেন, “আমরা ফুল হাতে, হুইসল বাজিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবেই প্রতিবাদ জানাব।”
সোমবার যখন তিরিশ হাজার জনতাকে নিয়ে অর্থমন্ত্রক চত্বরে ঢুকলেন সুতেপ, তখনও ট্রাক থেকে মাইক হাতে বলে যাচ্ছেন, “আপনারা সকলে ভিতরে যান। কিন্তু কেউ কিছু ভাঙচুর করবেন না।”
শুধুমাত্র হুইসল বাজিয়ে, স্লোগান আউড়ে, কখনও বা নাচ-গানের মাধ্যমেও সোমবার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। শুধু অর্থমন্ত্রক চত্বরই নয়, সেনা ছাউনি, সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন দফতরেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। উদ্দেশ্য একটাই। সরকারি অফিসারদের নিজেদের দিকে টেনে আনা।
তবে তাইল্যান্ডের সব বাসিন্দাই বিক্ষোভের সমর্থক নন। তাকসিনের নির্বাসন সত্ত্বেও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব তাইল্যান্ডের একটি বিরাট অংশের মানুষ তাঁর সমর্থক। দরিদ্রদের মধ্যে আজও ‘নায়ক’ তিনি। তাঁদের সুবিধার্থে হরেক কিসিমের আর্থিক সংস্কারও করেছিলেন। কিন্তু তাতে আখেরে দেশের ক্ষতিই হচ্ছে, জাতীয় সম্পদ ক্রমেই চলে যাচ্ছে বিদেশি রাষ্ট্রের হাতে, এই দাবি তুলে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন দেশের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। গত মাস থেকে তাকসিন-অনুগত ইঙ্গলাকের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, তার নেপথ্যেও এই মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা প্রশ্নে তাই কার্যত দ্বিধাবিভক্ত তাইল্যান্ড। এবং আশঙ্কা সেখানেই। ইঙ্গলাক শিনাবাত্রা যতই পুলিশকে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এড়াতে বলুন না কেন, তাতে আদৌ সংঘর্ষ কতটা এড়ানো যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই। গত কাল ব্যাঙ্ককের স্টেডিয়ামে প্রায় দেড় লক্ষ বিক্ষোভকারী জমায়েত হয়েছিলেন। তার জবাবে বহু তাকসিন-সমর্থকও হাজির হন স্টেডিয়ামে। তাঁদের দাবি, যত ক্ষণ না তাকসিন-বিরোধীরা বিক্ষোভ থামাচ্ছেন, তাঁরা একচুলও নড়বেন না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.