উন্নত করা হয়নি নানা মডেল। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আকর্ষণ হারিয়েছে। এমন অভিযোগে এক সময়ে লোকজনের আনাগোনা কমেছিল দুর্গাপুরের এনার্জি পার্কে। হাত গুটিয়ে নেয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা। সেই পার্ক ফের চালুর দাবি উঠেছে নানা সময়ে। কিন্তু কোনও তরফে কোনও উদ্যোগ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ দুর্গাপুর ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা।
রাজ্যের অচিরাচরিত শক্তি দফতরের উদ্যোগে (ওয়েবরেডা) দুর্গাপুরে ২০০৩ সালে গড়ে ওঠে পার্কটি। ওয়েবরেডার প্রাক্তন ডিরেক্টর শক্তিপদ গণচৌধুরী জানান, এই পার্কটি গড়ার সময়কালে তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের এনার্জি পার্ক কমিটির চেয়ারম্যান। সারা দেশে এমন ৯টি পার্ক গড়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনি জানান, দুর্গাপুরে এমন একটি পার্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয় শহরের তৎকালীন মেয়র রথীন রায়কে। পুরসভার তরফেও সম্মতি মেলে। পার্ক গড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এক কোটি টাকা মেলে। এ ছাড়া রাজ্য সরকার দেয় আরও ৪০ লক্ষ টাকা। সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডের কাছেই প্রয়োজনীয় জায়গা দেয় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। ২০০৩-এর সেপ্টেম্বরে পার্কটি চালু হয়। |
ওয়েবরেডা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পার্কে শক্তি ও অচিরাচরিত শক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন মডেল চালু হয়। পড়ুয়া থেকে শুরু করে আগ্রহী বহু মানুষজন বিভিন্ন বিষয় জানতে পারতেন এই সব মডেল থেকে। জলবিদ্যুৎ, স্থির তড়িৎ থেকে শুরু করে সৌরবিদ্যুৎ, নানা বিষয়ের মডেল ব্যবহার করে উৎসাহীরা নিজেরাই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আলো জ্বালার মজা পেতেন। এ ছাড়াও আরও বহু ধরনের বিজ্ঞানের মডেল ছিল পার্কে। জেলা ও ভিন্ জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে পড়ুয়াদের বাসে করে এই পার্কে নিয়ে আসতেন শিক্ষকেরা।
পার্ক চালু হওয়ার পরে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থাকে। ওয়েবরেডা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালের এক দিনে দর্শক সংখ্যার নিরিখে ‘রেকর্ড’ করেছিল দুর্গাপুরের এই পার্ক। কোনও এক দিনে দেশের সব ক’টি এনার্জি পার্কের মধ্যে বেশি দর্শক দুর্গাপুরের পার্কে এসেছিলেন সে দিন। কিন্তু সুদিন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাঁকুড়ার শিক্ষক রাজীব পতি বা দুর্গাপুরের শান্তনু কোনাররা মনে করেন, যুগোপযোগী নতুন নতুন মডেল যোগ না হওয়ায় পার্কের আকর্ষণ কমে যায়। বিপদ বুঝে সরে পড়ে বেসরকারি সংস্থাটিও। শেষ পর্যন্ত ওয়েবরেডার গভর্নিং বডির বৈঠকে পার্কের দায়িত্ব পুরসভার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা আর হয়নি। ২০০৯ সালের শেষ দিকে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় পার্কটি। পার্কটি ফের না খোলায় ক্ষুব্ধ রাজীববাবু, শান্তনুবাবুরা। তাঁদের দাবি, শীঘ্র এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
তবে এ বিষয়ে ওয়েবরেডার তরফে কোনও আশ্বাস মেলেনি। পার্কটি ফের খুলবে কি না তা নিয়ে সংশয়ী এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পার্কটি রয়েছে পর্ষদের জমির উপরেই। নিখিলবাবু জানান, পার্ক ঝোপঝাড়ে ভরে গিয়েছে। অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া হয়ে উঠতে পারে সেটি। তিনি বলেন, “পার্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি। দ্রুত একটা বিহিত করা হবে।” |