তাঁর সামনে ভুল বলে ফেললেই বিপদ হতে পারে। এই আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রশাসনিক বৈঠকে ‘মহড়া’ দিয়ে রাখলেন মালদহের প্রশাসনিক আধিকারিকরা। ২৬ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামে এসে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। রবিবার ওই মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দিষ্ট আসন ‘খালি’ রেখে, ‘ম্যাডাম’ সম্বোধন করে তার সামনে সরকারি কাজের খতিয়ান পড়লেন জেলার ১৫ ব্লকের কর্তা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক আধিকারিকরা। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ থেকে সমাজকল্যাণ কোনও দফতরই এ দিনের মহড়ায় বাদ ছিল না। গত একবছরে দফতরের কাজের ফর্দ নিয়েই আধিকারিকরা এ দিনের মহড়ায় আসেন।
মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক অমলকান্তি রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সামনে যাতে কোনও আধিকারিক তাঁর দফতরের রিপোর্ট তুলে ধরতে গিয়ে অসুবিধায় না পড়েন, সেই কারণেই আজকে মহড়া করা হয়েছে।”
মালদহে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে ওই দিনই উত্তর দিনাজপুরে পৌঁছোবেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও তার আগে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় জেলাশাসকের দফতরের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে অস্থায়ী মঞ্চ ও হলঘর তৈরি নিয়ে সরকারি টাকা অপচয়ের অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তি জেলা প্রশাসনে। জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “সরকারি টাকা অপচয় নিয়ে মন্তব্য করব না। নিরাপত্তার কারণে রায়গঞ্জের হলঘর ভাড়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক না করার সিদ্ধান্ত হয়। রায়গঞ্জের হলঘরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক করা হলে গাড়ি পার্কিং ও যানজটের সমস্যা তীব্র আকার নিত।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় জেলা শাসকের দফতরের সামনে জেলার নানা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ও বিভাগীয় সচিব মিলে ৪০ জন উপস্থিত থাকবেন। পর দিন কর্ণজোড়া পার্ক লাগোয়া এলাকায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ওই অনুষ্ঠানে কিছু প্রকল্পের শিলান্যাস, বাসিন্দাদের পাট্টা, সাইকেল দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের বিধায়ক সহ সিপিএম পরিচালিত জেলা পরিষদ সভাধিপতি লাডলি চৌধুরীকে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেস বিধায়ক প্রাক্তন মন্ত্রী প্রমথনাথ রায় বলেন, “রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও প্রশাসনিক বৈঠককে দলীয় বৈঠকে পরিণত করার জন্যই জেলার কংগ্রেস বিধায়কদের ডাকা হয়নি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়ী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনের শীর্ষপদে থেকে সরকারি অনুষ্ঠানে অসৌজন্যতার রাজনীতি শুরু করেছেন। তাই বামফ্রন্ট বিধায়ক ও জেলা সভাধিপতিকে ডাকা হয়নি।” রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য জানান, প্রশাসনিক বৈঠকে বিধায়ক ও পঞ্চায়েত স্তরের কোনও জন প্রতিনিধিদের রাখা হয়নি। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমলবাবু বলেন, “আসলে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসায় বিরোধীরা অপপ্রচার শুরু করেছেন।”
উত্তর দিনাজপুর সফরের পরদিন ২৭ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী দক্ষিণ দিনাজপুরে পৌঁছবেন। জেলার প্রত্ন নিদর্শন ঘিরে জেলায় পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাসের পাশাপাশি গঙ্গারামপুরের বাণগড় এবং একাধিক দিঘিকে ঘিরে ইকো ট্যুরিজম প্রকল্পের সূচনা করবেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র বলেন, “২৭ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী জনসভার পরে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। পাট্টাবিলি সহ একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনা ও শিলান্যাস তাঁর সফরসূচিতে রয়েছে।”
|