এ বার মালদহ এবং দুই দিনাজপুরের উন্নয়নের কাজসরেজমিনে দেখতে কার্যত গোটা সচিবালয় নিয়ে হাজির হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব ঠিক থাকলে ২৬ নভেম্বর দুপুরে মালদহে এবং সন্ধ্যায় রায়গঞ্জে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রীর বালুরঘাটে যাওয়ার কথা বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অন্তত ১৫ জন মন্ত্রী এবং সব বিভাগীয় সচিব থাকার কথা। এমন বড় মাপের প্রশাসনিক বৈঠকের আয়োজন করতে প্রশাসনিক কর্তাদের এখন হিমশিম অবস্থা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতিটি জেলায় সব দফতরের অফিসারদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছে। মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অন্তত ৪০ জনের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। মালদহ কলেজের অডিটোরিয়ামের মঞ্চে তেমন ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু, রায়গঞ্জে তেমন কোনও পরিকাঠামোই নেই বলে প্রশাসনের দাবি। ফলে, রাতারাতি সেখানে জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিশাল এলাকা ঘিরে অস্থায়ী মঞ্চ ও হলঘর বানানো হচ্ছে। সে জন্য কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। |
মুখ্যমন্ত্রী ২৬ নভেম্বর কলকাতা থেকে কপ্টারে বেলা ২টোয় মালদহ কলেজ মাঠে নামবেন। সেখান থেকে মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামে গিয়ে জেলার সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। পরে সড়ক পথে যাবেন বৃন্দাবনী মাঠে। সেখানে জেলার ১৫টি ব্লকের তিন হাজার উপভোক্তার হাতে নানা সরকারি প্রকল্পের কাগজ তুলে দেবেন। প্রায় ৮৫টি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন ।
মালদহে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে পুরাতন সার্কিট হাউসের সংস্কার ও মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল বৃন্দাবনী মাঠের চারপাশের রাস্তা সারাইয়ের কাজ চলছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর গৌড় ভবনে ওঠার কথা। অন্য মন্ত্রী ও আমলাদের জন্য ব্যবস্থা হচ্ছে সার্কিট হাউসে। ঐতিহ্যমণ্ডিত সার্কিট হাউসের লাল রং পাল্টে নীল-সাদা করায় জেলার ইতিহাস চর্চায় যুক্তদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের অনেকে খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মালদহ থেকে ২৬ নভেম্বর বিকেলেই মুখ্যমন্ত্রী রায়গঞ্জে যাবেন। রাতে সেখানে থাকবেন। পরের দিন দুপুরে বালুরঘাটে যাবেন। সেখানে বৈঠক করে ওই দিন রাতে মালদহে ফিরবেন। ২৮ নভেম্বর দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে কলকাতায় ফিরে যাবেন।”
রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। বাসিন্দাদের পাট্টা ও সাইকেল বিলির কথাও রয়েছে। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য জেলাশাসকের অফিসের সামনে যে ভাবে অস্থায়ী মঞ্চ এবং হলঘর বানানো হচ্ছে, তার খরচের বিষয়টিকে সামনে রেখে অপচয়ের অভিযোগ তুলেছে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন, ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ’-এর উত্তর দিনাজপুর শাখা। সংগঠনের জেলা সম্পাদক সুযশ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “যেখানে ৮-১০ হাজার টাকায় হল ভাড়া করে সভা করা যেত, সেখানে এত টাকা খরচ অপচয়ের সামিল।” জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়ার দাবি, “রায়গঞ্জ শহরে এমন হলঘর নেই, যেখানে মঞ্চে একযোগে ৪০ জন বসতে পারবেন।” তাঁর সংযোজন, “মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যোগ দেবেন কয়েকশো অফিসার। গাড়িও থাকবে শতাধিক। শহরের কোনও হলে বৈঠক হলে পার্কিংয়ের সমস্যা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টার তরফেও সঙ্কীর্ণ জায়গায় বৈঠকের ব্যাপারে আপত্তি করা হয়। সব খতিয়ে দেখেই অস্থায়ী মঞ্চ ও গ্যালারি বানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলার উন্নতির স্বার্থে বৈঠক। তবে অপচয়ের প্রশ্ন কেন?” |