প্রায় ৪ মাস হাজিরা নথিভুক্তির বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের চিকিৎসকদের একাংশের উপস্থিতি অনিয়মিত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। ওই অনিয়ম নিয়ে অসন্তুষ্ট চিকিৎসকদের একাংশই। অভিযোগ, এমন অনেক চিকিৎসক রয়েছেন যাঁরা সপ্তাহে ২ দিনের বেশি আসছেন না। শুধু গড় হাজির থাকাই নয়। যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে থাকায় তাঁদের হাজিরা আগের মতো খাতায় কলমে রাখা হচ্ছে। সপ্তাহে ৩-৪ দিন না এসেও ‘প্রক্সি’ হাজিরা দিয়ে তাঁরা অধিকাংশ দিনই ‘উপস্থিত’ থাকছেন বলে দাবি করছেন। বিষয়টি জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটিকেও।
ওই কমিটির অন্যতম সদস্য তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল মাজি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলেছেন। কলেজ অধ্যক্ষ অনুপ রায়ের সঙ্গেও তিনি এ ব্যাপারে কথা বলেন। অধ্যক্ষ জানান, হাজিরার জন্য ২টি বায়োমেট্রিক যন্ত্র বসানো হয়েছে। হাসপাতালের অংশে যন্ত্রটি ঠিক থাকলেও কলেজ ভবনের যন্ত্রটি অকেজো সেখানে অধ্যাপক-চিকিৎসক দেড়শো জন হাজিরা দেন। স্বাস্থ্য দফতর থেকে যে সংস্থাকে ওই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল তাদের তিনি জানিয়েছেন। তারা বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছে বলে দাবি করে।
এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিচালন সমিতি এবং রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমাকে চিকিৎসক বা পড়ুয়া কেউই এই ব্যাপারে কিছু জানাননি। তবে আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাসপাতালের চিকিৎসক তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সন্দীপ সেনগুপ্ত সাফ জানান, কলেজের অংশে যে চিকিৎসকরা রয়েছেন তাঁদের ৩০ শতাংশ নিয়মিত আসছেন না। ওই সমস্ত চিকিৎসকদের অধিকাংশ অধ্যাপনার কাজে যুক্ত। তাঁদের অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবাও দেন। সন্দীপবাবু বলেন, “সমস্যার বিষয়টি রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটিকে আমরা জানিয়েছি। গরহাজির হওয়া চিকিৎসকদের জন্য হাসপাতালে পরিষেবার কাজে যেমন বিঘ্ন ঘটছে, কলেজে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। তাদের জন্য সতীর্থ চিকিৎসকদের বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে।” এমনকী ওই চিকিৎসকদের একাংশ গরহাজির থেকেও খাতায় কলমে কী ভাবে তিনি ‘উপস্থিত’ দেখাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চিকিৎসক-পড়ুয়াদের একাংশ। রাজ্য স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “যন্ত্রাংশ দীর্ঘ দিন অকেজো পড়ে থাকলে সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক। অধ্যক্ষ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধকর্তার সঙ্গেও কথা বলব।” দীর্ঘ দিন ধরেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের একাংশের হাজিরা নিয়মিত নয় বলে অভিযোগ উঠছে। কলকাতার বাসিন্দা চিকিৎসকদের একাংশ এখানে থাকতে চান না বলে অভিযোগ। অনিয়ম বন্ধ করতে এ বছর মার্চে মাসে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু হয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি। সেখানে দুটি যন্ত্র বসিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা বদলায়। হাসপাতালে সুপারের ঘরের সামনে হাজিরা নথিভুক্তর যন্ত্র বসানো হয়েছে। সেখানে হাসপাতালের অন্তত ৩০০ জন চিকিৎসক হাজিরা দেন। আরেকটি যন্ত্র বসানো হয় কলেজভবনে অধ্যক্ষের ঘরের কাছে। সেটা অন্তত ৪ মাস ধরে অকেজো। সেখানকার চিকিৎসকদের একাংশ প্রসূতি, মেডিসিন, মাইক্রো বায়োলজির মতো বিভাগে রয়েছেন। তাঁদের একাংশ নিয়মিত হাসপাতালে না আসায় বিপত্তি দেখা দিচ্ছে। |