আধুনিকীকরণের পরে শনিবার থেকে চালু হল বৈদ্যবাটি হাতিশালা শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি।
বৈদ্যবাটি পুরসভার দাবি, নতুন করে যে চুল্লি তৈরি করা হল, সেটি পুরোপুরি দূষণমুক্ত। শুধু চুল্লির আধুনিকীকরণই নয়, গোটা শ্মশান চত্বর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছে। মাইকে ঘোষণার ব্যবস্থা থাকছে। শ্মশানে বসে মদ্যপান নিষেধ করা হয়েছে। দেওয়ালে হিজিবিজি লেখা বা পান মশলার পিক ফেলা যে অনুচিত, তা নিয়েও সচেতন করা হবে। ভক্তিমূলক গান, লোকগীতি বাজানোর ব্যবস্থা থাকছে। পাশাপাশি, পুরসভা থেকে মৃত্যু শংসাপত্রের জন্য কী লাগবে, তা-ও জানান হবে। ঘোষণার মাধ্যমেই ঘাটে সৎকার করতে আসা মানুষকে বোঝানো হবে, মরণোত্তর চক্ষুদানের প্রয়োজনীয়তা। চক্ষুদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন মনে করছেন, এ বিষয়ে শ্মশানে নিয়মিত প্রচার চললে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়তে বাধ্য।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতিশালা শ্মশানঘাট বহু প্রাচীন। শুধু শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটি নয়, জেলার বিভিন্ন জায়গা এমনকী, অন্য জেলা থেকেও মৃতদেহ এই শ্মশানে আসে সৎকারের জন্য। বৈদ্যুতিক চুল্লিটি জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। দূষণের অভিযোগ উঠছিল। তাই সেটি আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কয়েক মাস ধরে কাজ চলে। ফলে এত দিন বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দাহের কাজ বন্ধ ছিল। |
নব কলেবরে বৈদ্যবাটি হাতিশালা শ্মশান।—নিজস্ব চিত্র। |
পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ জানান, সংস্কারের কাজে কেএমডিএ দিয়েছে ৪৮ লক্ষ টাকা। পুরসভার তহবিল থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। শনিবার রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নতুন চুল্লির উদ্বোধন করেন। যে সংস্থা চুল্লিটি সংস্কারের কাজ করল, তাঁরাই আগামী ছ’মাস সেটি দেখভাল করবে। এই সময়ের মধ্যে কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তা তারা সারাই করে দেবে।
শ্মশানের এক পুরোহিত এবং দু’জন ডোম অবশ্য অভিযোগ করেছেন, একটি মৃতদেহ দাহ করে তাঁরা সরকারি ভাবে মাত্র পাঁচ টাকা পান। বছর দশেক আগে খাতায়-কলমে ওই মজুরি বেড়ে ১০ টাকা ধার্য করা হলেও লিজগ্রহিতা সংস্থার কাছ থেকে বর্ধিত টাকা তাঁরা পান না। বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে এ নিয়ে দরবার করে চলেছেন পুরোহিত এবং ডোমেরা। কাজের কাজ অবশ্য কিছুই হয়নি।
ওই শ্মশানে পুরোহিতের কাজ করেন শঙ্কর অধিকারী। রামশক্তি গঙ্গাপুত্র এবং গীতারানি গঙ্গাপুত্র মৃতদেহ পোড়ানো থেকে শুরু করে শ্মশান সাফসুতরো রাখার কাজ করেন। তিন জনই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চুক্তির ভিত্তিতে। ১৯৭৮ সালে মজুরির পরিমাণ বাড়িয়ে মৃতদেহ-পিছু ৫ টাকা করা হয় (কেবলমাত্র কাঠের চুল্লির ক্ষেত্রে)। ২৫ বছর ওই টাকায় কাজ করার পরে গত ২০০৩ সালে পুর-কর্তৃপক্ষ মজুরির পরিমাণ ১০ টাকা করে। ২০০৪ সালের ১ মে থেকে ওই টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। শঙ্করবাবুদের অভিযোগ, ‘নবদ্বীপের যে সংস্থা ওই ঘাটের লিজ নিয়েছে, তারা বর্ধিত মজুরি দিচ্ছেন না। এই ভাবে গত দশ বছরে তিন জনের লক্ষাধিক টাকা করে বকেয়া জমেছে।
পুরোহিত এবং দু’জন ডোম সরাসরি পুরসভার কর্মী নন, এই যুক্তি দেখিয়ে বাম-ডান কোনও পুরবোর্ডই তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায়নি। গীতারানিদেবীর বক্তব্য, “চরম অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি। আজকের দিনে ৫ টাকা মজুরি! অথচ ভোর হোক বা গভীর রাত যখনই দেহ আসুক চোখ কচলে উঠে আমাদের কাজ করতেই হয়।” গত কয়েক মাস ধরে বৈদ্যুতিক চুল্লি সংস্কারের কাজ চলায় শ্মশানে মৃতদেহ অনেক কম আসছে। ফলে আরও বেকায়দায় পড়েছেন তাঁরা।
পুরসভার একাংশের বক্তব্য, চুল্লি সংস্কারের জন্য আয় কিছুটা কমলেও মোটের উপর তাঁদের উপার্জন আদৌ কম নয়। শবযাত্রীদের থেকে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা তাঁরা আদায় করেন। পুরপ্রধান বলেন, “ওঁরা পুরসভার কর্মী নন। ওঁদের টাকাপয়সার বিষয়টি লিজগ্রহিতা সংস্থারই দেখার কথা। তবুও যদি কিছু করণীয় থাকে, আমরা চেষ্টা করব।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, পুরসভা স্বীকৃত যে চার শ্মশানকর্মী আছেন, তাঁদের টাকা পুরসভাই দেয়।
শ্মশানের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার তরফে জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, “পুরোহিতের ক্ষেত্রে ১০ টাকা করে দেওয়ার জন্য বর্তমান পুরসভার তরফে বলা হয়েছিল। মাঝে সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যায়। এ বার বর্ধিত টাকা দেওয়া হবে।” আগের পুরবোর্ডের তরফে এমন প্রস্তাব আসেনি বলেই জয়ন্তবাবুর দাবি। তবে বাকি দু’জনের ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য, এঁরা বয়স্ক মানুষ। তবু কাজ করছেন এখনও। সে কথা বিবেচনা করেই কিছুটা হাত খরচের টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা বাড়ানোর কোনও চিন্তা-ভাবনা আপাতত নেই। |