ন্যায্য মূল্যের পেসমেকার ‘ব্রাত্য’ দুই হাসপাতালে
হাসপাতালে রোগীদের শরীরে পেসমেকার বসছে যথেষ্ট ভাল সংখ্যায়। অথচ সেই হাসপাতালেরই ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে তিন মাসে পেসমেকার বিক্রির সংখ্যা ১০-ও পার হচ্ছে না! কলকাতা শহরের বুকে দু’টি নামী সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এই ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্তারা উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের মালিকেরা স্বাস্থ্য দফতরের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি সেলের কর্তাদের বিষয়টি জানান। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে বাজারের থেকে অনেক কম টাকায় পেসমেকার বিক্রি শুরু করার পরেও সরকারি হাসপাতালে পেসমেকার বিক্রির চক্র সক্রিয় কি না, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কার্ডিওলজির চিকিৎসকদের কাছে তা জানতে চান স্বাস্থ্যকর্তারা। এর পরেই তাঁরা ওই দুই হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে রীতিমতো নোটিস টাঙিয়ে রোগীদের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে পেসমেকার বিক্রির কথা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত অগস্ট থেকে এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল, নীলরতন সরকার এবং আর জি কর হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে কম দামে পেসমেকার বিক্রি শুরু হয়। তিন রকম মানের পেসমেকার পাওয়া যাচ্ছে ওই দোকানগুলিতে। যে পেসমেকারের দাম বাজারে প্রায় এক লক্ষ ১৫ হাজার টাকা, ন্যায্য মূল্যের দোকানে সেটি পাওয়া যাচ্ছে ৩৮ হাজার টাকায়। যে পেসমেকারের দাম বাজারে এক লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা, সেটি মিলছে ৪৫ হাজার টাকায়। আর যে পেসমেকার বাইরে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হয়, সেটি পাওয়া যাচ্ছে ৮০ হাজার টাকায়।
তা সত্ত্বেও অগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাসে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের দোকান থেকে মাত্র চারটি এবং আর জি করের দোকান থেকে মাত্র সাতটি পেসমেকার বিক্রি হয়েছে বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। তা বলে এমন নয় যে, ওই দুই হাসপাতালে গত তিন মাসে নামমাত্র সংখ্যায় পেসমেকার বসেছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখানে অগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসে ১০২ জন রোগীর স্থায়ী পেসমেকার বসেছে। ওই তিন মাসে আর জি করে স্থায়ী পেসমেকার বসেছে ১৭০ জনের। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস বলেন, “প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই দারিদ্রসীমার নীচে (বিপিএল) থাকা কিছু রোগীকে সরকার বিনা পয়সায় পেসমেকার দেয়। কিন্তু সেই সংখ্যাটা এক-একটি হাসপাতালে মাসে ১৫-২০ জনের বেশি নয়। তার পরেও এমন বহু রোগী থাকেন, যাঁদের অনেক বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি সংস্থা থেকে পেসমেকার কিনতে হয়। মেডিক্যাল এবং আর জি করে সেই সব রোগী কেন হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে পেসমেকার কিনছেন না, সেটাই রহস্য।”
ওই দুই মেডিক্যাল কলেজের অনুপাতে কলকাতার আরও দুই মেডিক্যাল কলেজ এসএসকেএম এবং এনআরএসে অবশ্য অবস্থা অনেক ভাল। এসএসকেএমে অগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৬৬ জনের স্থায়ী পেসমেকার বসেছে। সেখানকার ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে এই তিন মাসে বিক্রি হয়েছে ৯০টি পেসমেকার। দোকান-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পেসমেকার জোগান দেওয়া তো হয়েছেই। বাইরে থেকে ক্রেতারা এসেও পেসমেকার কিনে নিয়ে গিয়েছেন।” নীলরতনে ওই তিন মাসে ১২৭ জনের স্থায়ী পেসমেকার বসেছে। সেখানকার ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে ওই তিন মাসে ৬৪টি পেসমেকার বিক্রি হয়েছে।
স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমের থেকেও মেডিক্যাল বা আর জি করে বেশি পেসমেকার বসছে। অথচ ওই দুই হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের দোকানে এসএসকেএমের থেকে অনেক কম সংখ্যায় পেসমেকার বিক্রি হচ্ছে, এমন হওয়ার কথা নয়। কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে।”
তা হলে কি বেসরকারি চক্রের ব্যাপারটাই সত্যি?
আর জি কর হাসপাতালের কার্ডিওলজির বিভাগীয় প্রধান প্রণব বিশ্বাসের জবাব, “না, সেটা নয়। আসলে মানুষ এখনও ন্যায্য মূল্যের দোকানের পেসমেকারের উপরে ভরসা করতে পারছে না। এটা একটা মানসিকতা। বদলাতে সময় লাগবে। অনেকে ভাবছেন, কম দামের পেসমেকার মানে খারাপ পেসমেকার। এ বার আমরা যদি তাঁদের জোর করে কেনাই এবং তার পরে কোনও চিকিৎসা-বিভ্রাট হয়, তার দায় কে নেবে? ফলে আমরাও ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে পেসমেকার কিনতে তাঁদের চাপ দিচ্ছি না।”
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের এক প্রবীণ চিকিৎসকের বক্তব্য, “আমাদের হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে পেসমেকার কিনে লাগানোর পরে সেই পেসমেকারের প্রোগ্রামিং বা সার্ভিসিংয়ের জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রেতা সংস্থা দায়িত্ব নিচ্ছে না। তা হলে কীসের ভরসায় আমরা রোগীকে কিনতে পাঠাব?” এর উত্তরে দোকানের দায়িত্বে থাকা অম্বরীশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “হাস্যকর অভিযোগ। আমরাই তো এসএসকেএম এবং নীলরতনে দোকান চালাচ্ছি। তা হলে সেখানে রোগীরা কোন ভরসায় কিনছেন? তাঁরা কি বোকা?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.