স্তন ক্যানসার ঠেকাতে গাছেই ভরসা রাখছেন ভারতীয় বিজ্ঞানী
কা তারা বড়ই সাধারণ। কিন্তু জোট বাঁধলে এরাই বিনাশ করতে পারে ক্যানসারের বীজ। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘অবস্ট্রেটিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজির’ ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী মাধব রাজ। সম্প্রতি ‘জার্নাল অব ক্যানসার’-এ প্রকাশিত হয়েছে মাধব ও তাঁর দলের গবেষণার ফলাফল। আর সেখানেই দাবি করা হয়েছে, হলুদ, সয়াবিন, বিভিন্ন সবজি, স্পিরুলিনা (এক ধরনের শ্যাওলা), আঙুর এবং চা পাতায় পাওয়া যায় এমন ছ’টি উপাদানের ককটেল রুখতে পারে স্তন ক্যানসার। কারণ মাধবদের দাবি, স্তন ক্যানসার আক্রান্ত কোষ মেরে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে এই ককটেলের।
মাধব জানিয়েছেন, এখনকার প্রচলিত চিকিৎসায় স্তন ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকে মেরে ফেললেও শরীরে বিভিন্ন অংশে এদেরই কিছু বংশধর লুকিয়ে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা শরীরে ফের ক্যানসার সৃষ্টি করে। আর এই কারণেই স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা করাটা বেশ সমস্যার। মাধবের কথায়, “অনেক সময়েই নতুন করে ক্যানসার সৃষ্টি করা কোষগুলোর উপরে পুরনো ওষুধ কাজ করে না। ফলে চিকিৎসাও করা যায় না। এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতেই নতুন কিছু খুঁজছিলাম।” এই মিশ্রণ সেই পথ দেখাল বলেই মনে করছেন মাধব।
হলুদ, চা, স্পিরুলিনার ওষধি গুণ অনেক দিন ধরেই জানেন বিজ্ঞানীরা। হলুদের ক্যানসার-রোধী গুণ আছে বলেও দাবি করেন অনেকে। কিন্তু স্তন ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ আছে কি না এতদিন তা জানা ছিল না। মাধবরা প্রথমে হলুদ, চা, আঙুর, সয়াবিনে র মতো খাদ্যে থাকা কারকিউমিন, আইসোফ্ল্যাভন, ইন্ডো-৩-কার্বিনল, সি-ফাইকোসায়ানিন, রেসারভেট্রোল এবং কুয়েরসেটিন একসঙ্গে মেশান। এর পর তাঁরা গবেষণাগারে স্তন ক্যানসার আক্রান্ত কোষের উপরে তা প্রয়োগ করেন। মাধবদের দাবি, এই উপাদানগুলোর ককটেল বা মিশ্রণ স্তন ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকে মেরে ফেলেছে। যদিও স্বাভাবিক কোষগুলোর উপরে এই মিশ্রণ কোনও প্রভাব ফেলেনি বলেই দাবি মাধবদের। স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী বিআরসিএ ১ এবং বিআরসিএ ২ জিনের উপর এই মিশ্রণ কোনও প্রভাব ফেলে কি না তা অবশ্য এখনও পরীক্ষা করে দেখেননি মাধবরা।
ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের মতে, “এ বিষয়ে আরও গবেষণার দরকার। মূলত দু’ধরনের স্তন ক্যানসার দেখা যায়। জিনগত এবং জীবনযাত্রার ত্রুটির ফলে হওয়া ক্যানসার। এই মিশ্রণ জিনের উপর কী প্রভাব ফেলছে সেটাই জানা যায়নি। তাই একটা নির্দিষ্ট গবেষণার উপর নির্ভর করে এই মিশ্রণ স্তন ক্যানসার নির্মূল করতে পারে, তা বলা যায় না।” তবে একটা ওষুধ নয় বরং অনেক উপাদানের মিশ্রণ নিয়ে এই যে গবেষণা, তা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য বলেই মনে করেন গৌতমবাবু।
স্তন ক্যানসার চিকিৎসা নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি বলেই মনে করছেন ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। সাময়িক ভাবে এই মিশ্রণ স্তন ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকে মেরে ফেললেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কতটা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন সুবীরবাবু। তিনি বললেন, “বার বার স্তন ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোর ফিরে আসার যে প্রবণতা তাকে এই মিশ্রণ কতটা রুখতে পারে, সেটা যেমন দেখা দরকার ঠিক তেমনিই সাধারণ কোষের উপরে এই মিশ্রণের দীর্ঘমেয়াদি কোনও প্রভাব রয়েছে কি না সেটাও দেখা দরকার।” তাই আশার আলো দেখালেও মাধবদের এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন সুবীরবাবু। গবেষণা আরও প্রয়োজন, তা মাধবরাও মেনে নিয়েছেন। প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে রোগ সারানোর দাওয়াই ছিল নানা প্রাকৃতিক উপাদান। মারণ রোগ নির্মূল করতে মাধবদের গবেষণা যেন সেই পথেই উত্তর খুঁজছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.