ফুটবল আগেও ছিল। ম্যানেজাররা নিজেরাই মাঠে নেমে চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে বলে পা লাগাবেন, এমনটা চোখে পড়ত না। শ্রমিক-ম্যানেজারের সেই দূরত্ব ঘুচে গেল ডুয়ার্সের এক ফুটবল প্রতিযোগিতায়।
চার দশক আগে অ্যান্ড্রু ইউলের ডুয়ার্সের চা বাগানগুলির মধ্যে ফুটবল প্রতিযোগিতা চালু হয়। মাঝে এক দশক সেই প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকার পর চার বছর আগে ফের চালু হয়েছে। নতুন করে সেই খেলাতেই চা বাগানের ম্যানেজাররা হাফ প্যান্ট জার্সি পরে নেমে শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে ফুটবল খেললেন। আর তাতে দু’পক্ষের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।
শনিবার ফাইনাল খেলা ছিল অ্যান্ড্রু ইউল গ্রুপের দুই চা বাগান নিউ ডুয়ার্স ও চুনাভাটির মধ্যে। শুধু বাগানগুলির শ্রমিকেরাই নন, খেলা দেখতে কলকাতা থেকে গ্রুপের চার শীর্ষ কর্তা আসেন ডুয়ার্সে। চেয়ারম্যান অ্যান্ড ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কল্লোল দত্ত বলেন, “শ্রমিকদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার সেই মান্ধাতা আমলের ভাবধারা থেকে বেরিয়ে এসেছি। মূলত খেলার মাধ্যমে প্রচুর কাজ হচ্ছে। কাজের পরিবেশ এখন অত্যন্ত ভাল। সব বাগান মিলে এই ধরনের প্রতিযোগিতা করার জন্য আমরা বলেছি। এতে সকলের লাভ হবে।”
দেড়শো বছর আগে ডুয়ার্সে নানা চা বাগান তৈরি করার সময় ইংরেজ ম্যানেজারেরা শ্রমিকদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার রীতি চালু করেন। ম্যানেজাররা চা বাগানের অফিসের কর্মীদের সঙ্গেও কাজের বাইরে সাধারণত মেলামেশা করতেন না। সে প্রথা আজও বহু বাগানে চলছে। চুনাভাটি চা বাগানের ম্যানেজার স্মরজিৎ সিংহের কথায়, “শ্রমিকদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার ফলে সার্বিক ভাবেই পরিবেশের উন্নতি হয়েছে। তাতে এই প্রতিযোগিতারও অবদান রয়েছে।” বিজয়ী দল নিউ ডুয়ার্স বাগানের ম্যানেজার লিওনার্দো স্মিথ বলেন, “বাগান শ্রমিক, তাঁদের পরিবারের লোকের সঙ্গে প্র্যাকটিস করেছি। পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়াও অনেক বাড়ছে।” চা বাগানের পরিবেশে জন্ম সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের। তাঁর লেখায় বহু বার এই দূরত্বের কথা উল্লেখ করেন। সমরেশবাবু সব শুনে বলেন, “দীর্ঘ অহঙ্কারের দেওয়াল এ বার সরে গেল। ব্রিটিশদের ব্যাখ্যা ছিল, বাগান পরিচালনা যাঁরা করবেন, তাঁরা থাকবেন আড়ালে। শ্রমিকেরা তাঁদের ঈশ্বর মানবে।” চা বাগান মালিকদের সংগঠন ডিবিআইটিএ-র সচিব বলেন, “এ ধরনের টুর্নামেন্ট হলে শ্রমিক মালিক দূরত্ব ঘোচে। দেখা যাক সকলে মিলে এক সঙ্গে এ ধরনের টুর্নামেন্ট করা যায় কি না।” |