একশো দিনের কাজের প্রকল্পে চেনা ছবিটা ক্রমশই বদলে যাচ্ছে
প্রতিবন্ধকতা হারিয়ে কাজে মায়ারানিরা
প্রতিবন্ধকতা ওঁদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। নিজেরাই চেয়ে নিয়েছেন কাজের ‘অধিকার’। আলিপুরদুয়ারের মূক-বধির মায়ারানি দেবনাথ, বাকশক্তি হারানো সুধাংশু পাণ্ডিরা মাটি কাটার কাজ করছেন সমান তালে। ক্রাচে ভর দিয়ে মাটি কাটতে না পারলেও খাতা দেখভাল করার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বীরপাড়ার সন্তোষ রাই। কুষ্ঠ আক্রান্ত পার্বতী বাসনেট জলের গ্লাস দিচ্ছেন শ্রমিকের হাতে। খেয়াল রাখছেন মহিলা শ্রমিকদের সঙ্গে শিশুদের। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে এত দিনের চেনা ছবিটা এবার ক্রমশ বদলাচ্ছে।
ওই প্রকল্পের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, “একশো দিনের কাজের প্রকল্পের নির্দেশিকাতেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বেনিফিসিয়ারিদের তিন শতাংশ প্রতিবন্ধীকে ১০০ দিনের কাজ দিতে হবে। সেই মতো তাঁদের কাজও দেওয়া হচ্ছে।” নির্দেশিকাতে প্রতিবন্ধীকে কাজ দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে সারা দেশের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ এই চারটি মাত্রে রাজ্যে প্রতিবন্ধীদের কাজ দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। ওই চার রাজ্যের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে এগিয়ে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। তারপরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্থান। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “গত বছরে রাজ্যে মোট ৪ কোটি ৬০ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে প্রায় ৪৩ হাজার শ্রমদিবস তৈরি করেছিলেন প্রতিবন্ধীরাই।”
গত বছর থেকে জলপাইগুড়ি প্রতিবন্ধীতে কাজ দিলেও অন্য জেলার তুলনায় এখনও পর্যন্ত বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গের ওই জেলা। জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছরে ৬০৯ জন প্রতিবন্ধী ১১ হাজার ২২৯টি শ্রমদিবস তৈরি করেছে। এ বছর ১৫৮৪ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে বর্ধমান ও বীরভূম ৮ হাজার শ্রমদিবস তৈরি করেছে। মালদহে ৯৪৭৫টি শ্রমদিবস তৈরি করেন প্রতিবন্ধীরা।
জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরে জেলার ১৩টি ব্লকের প্রায় দু’হাজার প্রতিবন্ধীর নাম একশো দিনের প্রকল্পে নথিভুক্ত করা হয়। তার মধ্যে কাজ চেয়েছিলেন ৬০৯ জন। তাঁদের সকলকেই কাজ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি প্রশাসনের। ওই প্রতিবন্ধীরা সারা বছরে বছরে গড়ে ১৮ দিন কাজ পেয়েছিলেন। জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে মহিলা এবং প্রতিবন্ধীদের বেশি করে কাজ দিতে প্রতিটি ব্লককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মত কাজ হচ্ছে। জেলা থেকে প্রতিনিয়ত নজরদারি চালানো হচ্ছে।”
কী ধরণের কাজ দেওয়া হচ্ছে প্রতিবন্ধী বাসিন্দাদের? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, মাটি কাটা, জঙ্গল সাফাই করা, রাস্তা তৈরি, বাঁধ দেওয়া পুকুর খোঁড়ার মত যে কাজগুলি সাধারণত একশো দিনের প্রকল্পে বেশি নেওয়া হয়, তার বেশির ভাগটাই শ্রমসাপেক্ষ। তাই প্রশাসনের বৈঠকে স্থির হয়, কাজের জায়গায় শ্রমিক এবং কর্মীদের জলপানের ব্যবস্থা, জল সরবারহের তদারকি করা, জল আনার কাজ, মহিলা শ্রমিকদের সঙ্গে আসা শিশু সন্তানদের দেখাশোনা করা, গাছ লাগানো, জলে পাথর ধোয়া, মাটি সমান করার মতো কাজগুলি করবেন প্রতিবন্ধীরা। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা জেলা আধিকারিক সমীরণ মণ্ডল বলেন, “প্রতিবন্ধীরা যাতে কোনভাবেই অবহেলা বা অসম্মানের শিকার না হন, তা লক্ষ রাখা হয়েছে। যে ধরণের কাজ তাঁদের দেওয়া সম্ভব তাই বেছে দেওয়া হয়েছে।”
অন্য দিকে, মালদহে ১০০ দিনের কাজে জেলার প্রতিটি ব্লকে সাধারণ গ্রামবাসীদের সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার ১০০ জনেরও বেশি প্রতিবন্ধীকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে লাগানো হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। মালদহের ডিস্ট্রিক্ট নোডাল অফিসার সুদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, “১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে প্রতিবন্ধীদের কাজে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ৫০ জন শ্রমিক পিছু একজন করে প্রতিবন্ধীদের কাজে নেওয়া যাবে। যাঁরা শ্রমসাধ্য কাজ করবেন তাঁদের জল দেওয়ার জন্য ওই প্রতিবন্ধীদের কাজে লাগানো হয়েছে। জেলার সমস্ত বিডিওদের প্রতিবন্ধীদের কাজ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” রতুয়া ১ এর বিডিও নীলাঞ্জন তরফদার বলেছেন, “ইতিমধ্যেই এই ব্লকে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজের ২৫ শতাংশ প্রকল্পে প্রতিবন্ধীদের কাজ দেওয়া হয়েছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.