‘শহিদ সপ্তাহ’ পালনের ডাক দিয়ে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় মাওবাদীদের নামাঙ্কিত পোস্টার পাওয়া গেল। পোস্টারে মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেনজির মৃত্যুর ঘটনায় ২৪-৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালনের ডাক দেওয়ার পাশাপাশি, বর্তমান রাজ্য সরকারের ‘জনবিরোধী কাজকর্মের’ প্রতিবাদে আগামী ৩০ নভেম্বর জঙ্গলমহলের তিন জেলায় (পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায়) ২৪ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় বাসস্ট্যান্ড, জিরাপাড়া, নাদকনার মতো কয়েকটি এলাকায় এ ধরনের পোস্টার পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, কিষেনজিকে ‘লাল সেলাম’ জানিয়ে ওই সব পোস্টারে শহিদ সপ্তাহ ও বন্ধ পালনের ডাক দেওয়া ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পোস্টারগুলি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। শনিবার বিনপুরের দহিজুড়ি বাজারেও একই ধরনের পোস্টার সাঁটানো ও ছড়ানো হয়েছিল। শনিবার সেগুলি বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। এই নিয়ে গত এক বছরে গোয়ালতোড়-সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় চার বার ‘মাওবাদী-পোস্টার’ পাওয়া গেল।
বস্তুত, রবিবারই কিষেণজির মৃত্যুর দু’বছর পূর্ণ হল। ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর বিকেলে জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন এই শীর্ষ মাও-নেতা। রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূল আসার পরে জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোর বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেরা সাফল্যের’ অন্যতম হিসেবে দাবি করা হয়। কিন্তু সত্যিই কী ‘মাও-মুক্ত’ হয়েছে জঙ্গলমহল? গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শীর্ষনেতার মৃত্যুর দু’বছর পরে ফের সংগঠন বাড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে মাওবাদীরা। এখনও রাত বিরেতে ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত জনপদে মাওবাদীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। পুলিশের দমন মূলক অভিযানের ফলে যথেষ্ট কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে তারা। কিন্তু, পঞ্চায়েত ভোটের পরে ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’তে মাওবাদীরা গ্রামে-গঞ্জে শাসক দলের বিরুদ্ধে নানা ভাবে জনমত গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। শহিদ-সপ্তাহ পালনের ডাকে পোস্টার তারই অঙ্গ কিনা, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে জঙ্গলমহলে। তবে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে নিবিড় উন্নয়ন-কাজের মধ্য দিয়ে জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জঙ্গলমহলের মানুষ এখন আর পোস্টার দেখে ভয় পান না।”
এ দিকে, ‘মাওবাদী-কাঁটা’য় এ দিন জঙ্গলমহলে গিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারলেন না তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। এ দিন কাঁটাপাহাড়ি-রামগড়ে গিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তৃণমূল জেলা সভাপতির। সকালে তিনি জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে ফোন করে তা জানালে পুলিশ সুপারই সতর্ক করে দেন। বুঝিয়ে দেন, এমন একটা দিনে অসতর্ক ভাবে চলাফেরা করা ঠিক হবে না। এরপরই পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেন দীনেনবাবু। তবে, তিনি ঝাড়গ্রামে গিয়েছেন। আজ, সোমবার পুরভোটের গণনার আগে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। |