বেলা সাড়ে বারোটাতেই ঝাঁপ বন্ধ। সারা দিনে আর খুলল না। এমনই দশা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের পর্যটন সহায়তা কেন্দ্রের। আগে যেখানে প্রতিদিন প্রায় হাজার দুয়েক পর্যটক স্টেশনেই পেয়ে যেতেন গন্তব্যের সুলুক-সন্ধান, এখন সেখানে ডজন খানেক যাত্রীও আসেন না।
কেন এই দশা অতি জরুরি এই পরিষেবার? পর্যটন দফতরের কর্তাদের অভিযোগ, পর্যটন তথ্যকেন্দ্রগুলির জায়গা বদলে দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। আগে এনজেপি স্টেশনে ঢোকার মুখে এগুলি ছিল। মাস দুয়েক হল সেগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্টেশনের ১(এ) প্ল্যাটফর্মে। তাতেই হয়েছে বিপত্তি। রাজ্য পর্যটন দফতরের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডিরেক্টর সুনীল অগ্রবাল বলেন, “এখন যেখানে জায়গা দেওয়া হয়েছে তা খুঁজেই পাচ্ছেন না যাত্রীরা। তাই সকালে কলকাতা থেকে আসা কয়েকটি ট্রেনের সময় সেন্টার খোলা রাখা হচ্ছে। অন্য সময় বন্ধ থাকছে।” পর্যটক না আসায় কাজে উৎসাহ হারাচ্ছেন কেন্দ্রের কর্মীরা, দাবি করেন তিনি।
সিকিম পর্যটন দফতরের নির্দেশক এম কে প্রধানও মনে করেন স্টেশনের ঢোকার মুখে কাউন্টার হলে ভাল হয়। তিনি বলেন, “নতুন জায়গায় কাউন্টার আগের তুলনায় আড়ালে চলে গিয়েছে। সে কারণে বাইরের যাত্রীরা কেন্দ্রটি খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই অনেককে দালালদের খপ্পরেও পড়তে হচ্ছে।” তিনি জানান, নতুন জায়গায় কাউন্টার তৈরির জন্য সিকিম পর্যটন দফতরের কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। সিকিম পর্যটনের তথ্যকেন্দ্রটিও দিনের অনেকটা সময় বন্ধ থাকছে। |
বেলা আড়াইটের ছবি। —নিজস্ব চিত্র। |
নিউ জলপাইগুড়ির স্টেশন ম্যানেজার অজিতেশ দাস জানান, ভিআইপি লাউঞ্জের গা ঘেঁষে ছিল পুরনো ইনফরমেশন সেন্টারগুলি। তাই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেন্টারগুলি সরিয়ে অন্যত্র জায়গা দেওয়া হয়েছে। আপাতত কেন্দ্রগুলি ওখানেই থাকবে।”
সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে আসা পর্যটকদের একটি দল গ্যাংটক যাওয়ার জন্য নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামেন। স্টেশনে নেমে তথ্যকেন্দ্র খুঁজে পাননি বলে তাঁদের দাবি। ওই দলের প্রতিনিধি লিয়াকত আলি বলেন, “হাতের কাছে ইনফরমেশন সেন্টার ছিল বলে জেনেছিলাম। তা সরানো হয়েছে বলে নেমে জানতে পেরেছি। সেটাও খোলা পাইনি।”
সিআইআইয়ের পর্যটন বিভাগের উপদেষ্টা রাজ বসুও পর্যটকদের হয়রানি যাতে না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন। তাঁর কথায়, “এনজেপি স্টেশন হয়ে উত্তর পূর্ব ভারত, নেপাল, ভুটানে রোজ বহু পর্যটন যাতায়াত করেন। ইনফরমেশন সেন্টার সারাক্ষণ খোলা না থাকলে সমস্যা হবেই। তা যাতে নজরে পড়ার মতো জায়গায় থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে।”
দ্রুত ওই তথ্যকেন্দ্রগুলিকে সচল করানোর দাবি তুলেছেন এনজেপির নিত্যযাত্রী সংগঠনের সম্পাদক দীপক মহান্তি। তিনি বলেন, “সঠিক তথ্য না পাওয়ায় পর্যটকদের ভোগান্তি বাড়ে। হাতের কাছে তথ্যকেন্দ্রটি থাকলে হয়রানির মুখে পড়তে হয় না। রেল কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।” |