অসাধু রেশন ডিলারদের কার্যকলাপ রুখতে ‘এসএমএস’ দাওয়াই বাতলালেন মন্ত্রী।
রবিবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে জেলা চালকল মালিক সমিতির ত্রিবার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেখানেই রেশন ডিলারেরা গণবন্টন ব্যবস্থাকে হেলাফেলা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। স্পষ্ট বলেন, “প্রতিটি রেশন দোকান থেকে উন্নতমানের চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্যের বেশিরভাগ রেশন দোকান থেকেই নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। ভাল চাল ডিলারেরা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন।”
তবে সমস্যা সমাধানে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে তাও জানান তিনি। মন্ত্রী জানান, অসাধু রেশন ডিলারদের কার্যকলাপ রুখতে গত কয়েক মাস ধরে ঠিক হয়েছে যে ডিস্ট্রিবিউটরেরা সরাসরি নীল-সাদা রংয়ের ভ্যানে করে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেবেন ডিলারদের কাছে। মাল পৌছে দেওয়ার পরে ডিস্ট্রিবিউটরেরা ওই এলাকার প্রধান শিক্ষক, চিকিৎসক, সরকারি কর্মচারীদের মতো অরাজনৈতিক বিশিষ্টদের কাছে এসএমএস করে জানিয়ে দেবেন যে সংশ্লিষ্ট ডিলারের কাছে কোন কোন সামগ্রী কী পরিমাণে পাঠানো হয়েছে। ওই ভ্যানে রেশন সামগ্রী ছাড়া অন্য কোনও মাল পরিবহণ করা যাবে না।
মন্ত্রীর আরও দাবি, এর আগেও তিনি ৭৭ লক্ষ জাল রেশন কার্ড বাতিল করেছিলেন। কিছুদিন আগে ফের ৩ লক্ষ ১৮ হাজার জাল রেশন কার্ড আটক করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে এখনও ৯২ লক্ষ জাল রেশন কার্ড রয়ে গিয়েছে। ফলে কোটি কোটি টাকা ভতুর্কি দিতে হচ্ছে সরকারকে। কার্ডগুলিকে চিহ্নিত করার ব্যাপারেও ডিলারদের সাহায্য মিলছে না বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি জানান, জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামে ৬৫টি রেশন দোকান খোলা হবে। তার মধ্যে ২৭টি দোকান তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রথমে মহিলাদের দিয়ে বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে ওই দোকানগুলি চালানোর কথা ভাবা হয়। কিন্তু রেশন ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটারেরা হাইকোর্টে মামলা করে দেওয়ায় ওই দোকানগুলি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। |
শক্তিগড়ে ধান কেনার শিবিরে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।—নিজস্ব চিত্র। |
জবাবে রাজ্য এমআর রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সদস্য পরেশ সরকার বলেন, “আমদের পেটে হাত পড়াতেই জঙ্গলমহলের ওই ২৭টি রেশন দোকান নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছি। তবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আমরাও পিছপা নই। বাজারে ভাল মানের চাল বিক্রি করে দেওয়া দূরের কথা আমরা বরং খারাপ চাল এলেই খাদ্য নিয়ামকদের লিখিত ভাবে জানাই। তাই আমরা সহযোগিতা না করায় জাল রেশন কার্ড উদ্ধার হচ্ছে না, সে অভিযোগ ঠিক নয়।”
ওয়েস্টবেঙ্গল এমআর ডিষ্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক আব্দুল মালেকও বলেন, “মন্ত্রী আসলে ডিলার আর ডিস্ট্রিবিউটরদের একই বন্ধনিতে এনে ফেলেছেন। ডিস্ট্রিবিউটারেরা রাজ্য সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা করছেন। তাই ডিলারদের সঙ্গে আমাদের ভূমিকা গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়।”
তবে এ দিনের বৈঠকে চালকল মালিকদের প্রশংসা করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “লেভির চাল আদায়-সহ নানা ভাব ওঁরা আমাদের সহযোগিতা করছেন। তাই আমরাও ওঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ভর্তুকি দিতে চাইছি।” তিনি আরও বলেন, “আপনারা টাস্ক ফোর্স তৈরি করুন। নতুন চালকল তৈরিতে উদ্যোগীদের আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করান। আমি কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি বিপণন ইত্যাদি দফতরের মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে উদ্যোগীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের নতুন চালকল খুলতে সাহায্য করব।” জেলা চালকল সমিতির নতুন পরিচালন কমিটিও তৈরি হয় এ দিন। এই কমিটির তিন শীর্ষ পদ সভাপতি, সহ সভাপতি ও সম্পাদক রয়ে গিয়েছেন যথাক্রমে দেবনাথ মণ্ডল, আব্দুল মালেক ও সুব্রত মণ্ডল।
বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী জানান, এ বছর লেভি বাবাদ ৮ লক্ষ ও বিভিন্ন সরকারি এজেন্সি, বেনফেড কনফেড ইত্যাদি দ্বারা সংগৃহীত ধান থেকে তৈরি ১৮ লক্ষ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ওই চাল বিদেশে বা ভিন রাজ্যে পাঠানো হবে। চাল সংগ্রহের জন্য রাজ্য সরকার একটি রুটিনও তৈরি করেছে। তাতে নভেম্বরের ছ’দিনের মধ্যে শতকরা ৩, ডিসেম্বরে শতকরা ১০, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শতকরা ২০ ভাগ করে চাল সংগ্রহ করা হবে। ১ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র শতকরা ১০ ভাগ লেভি বা এজেন্সি সংগৃহীত ধান থেকে চাল সরকার কিনবে। তাঁর দাবি, চাল গুদামে রাখার সমস্যা মেটাতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে গলসি, মেমারি, ভাতার, কাটোয়া, পূর্বস্থলী, মন্তেশ্বর, কালনা, রায়না, মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম ইত্যাদি ব্লক-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ৫ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি। প্রতিটির জন্য খরচ হবে প্রায় সাত কোটি টাকা। |