মিছিলে মানুষের ঢল, ফুঁসছে বেগুনকোদর
নাগাবাহিনীর ‘তাণ্ডবে’র জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দোকান-পাট। দোকান ও পরিবহণ বন্ধ রেখেই পরের দিন রবিবার প্রতিবাদে পথে নামলেন বাসিন্দারা। শনিবার রাতে পুরুলিয়ার কোটশিলা থানার বেগুনকোদরে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যেতে বাধা পেয়ে জওয়ানরা এলাকার কয়েকজনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ জানালে শিবির থেকে আরও জওয়ান এসে মারধর করে বাড়িতে ও দোকানে ‘তাণ্ডব’ চালান বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। গণ্ডগোলের মধ্যে বাড়িতে থাকা এক অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। প্রতিবাদে এ দিন ১২ ঘণ্টার বন্ধ পালন করে বেগুনকোদর নাগরিক মঞ্চ। পরে নাগা জওয়ানদের অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে পুলিশের কাছে একটি দাবিপত্র তুলে দেন তারা। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা ওই জওয়ানদের সরানোর জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। মাওবাদী নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই শিবির চালু করা হয়েছিল। তাই এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত নেব।” তিনি জানান, ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাগাবাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে কথা বলবেন।
নাগা জওয়ানদের বিরুদ্ধে তাণ্ডবের অভিযোগে প্রতিবাদ।
এ দিন বেগুনকোদর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে টমেটো, বেগুন, মুলো ইত্যাদি। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় এখানে সব্জি বাজারে বেচাকেনা চলার সময়েই ওই গণ্ডগোল বেধেছিল। একটি দোকানের সামনে ভাঙা উনুন পড়ে রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় চৌমাথার কাছে ঝালদা রোডের উপর সাইকেল ও অটোয় রাস্তায় জট পাকিয়েছিল। সেই সময় ঝালদার দিক মোটরবাইকে আসা দুই নাগা জওয়ান ওই জটে আটকে যান। হঠাৎ তাঁদের একজন এক সাইকেল আরোহীকে সরে যেতে বলে মারধর করেন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করেন পাশের অটোর চালক লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো। তাঁর অভিযোগ, “সাইকেল আরোহীকে মারধর করতে বারণ করলে উল্টে ওই জওয়ান আমার মুখে ঘুঁষি চালান। অন্যেরা তখন প্রতিবাদ করেন।” বাসিন্দারা জানান, এরপরেই জওয়ানদের একজন ফোন করে মুরগুমা শিবিরের নাগা জওয়ানদের ডাকেন। দুই নাগা জওয়ানকে ঘিরে বিক্ষোভ চলাকালীন শিবির থেকে গাড়িতে জনা কুড়ি জওয়ান এসে নির্বিচারে লাঠি চালাতে শুরু করেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চলে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। যাঁরা বাজারে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকে পাশের বাড়ি ও দোকানে আশ্রয় নেন। সুর্যকান্ত কুইরি নামের এক সব্জি ব্যবসায়ী আহত হয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জওয়ানদের হামলায় এলাকায় আরও ৮-৯ জন জখম হয়েছেন।
মুদি ব্যবসায়ী অজয় দত্তের দোকানের মেঝেতে তখনও ডাল, ছোলা, বেসন, বিস্কুট ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “গণ্ডগোলের সময় দোকান খোলা ছিল। হঠাৎ কয়েকজন নাগা জওয়ান দোকানে ঢুকে বন্দুক দিয়ে সব মালপত্র ফেলে দিল।” অবনি মোদক নামের এক মহিলার তেলেভাজার দোকান রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, “ট্রেতে তেলেভাজা রাখা ছিল। জওয়ানরা এসে সব উল্টে দিল। দৌড়ে বাড়িচে ঢুকে দিয়ে দেরজা লাগিয়ে দিই। তাতেও রেহাই মেলেনি। জওয়ানরা দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে।’ মিষ্টি ব্যবসায়ী চক্রধর কৈবর্তর দাবি, জওয়ানরা বন্দুক ও লাঠি দিয়ে তাঁর দুই কর্মচারীকে মারধর করেছেন। তাণ্ডব চলার সময় বেগুনকোদর বাজার এলাকার বাসিন্দা সাধন কর্মকার নামে মধ্য চল্লিশের এক অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে পরিবারের দাবি। তাঁর স্ত্রী বেবি কর্মকারের অভিযোগ, “স্বামী ক’দিন ধরে রোগে ভুগছিলেন। ঘরের বিছানায় তিনি শুয়েছিলেন। গোলমালের খবর পেয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। হঠাৎ জওয়ানরা এসে দরজায় দমাদ্দম লাথি মারতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে তারা ফিরে গেলে দেখি স্বামী বেঁচে নেই। মনে হয় আতঙ্কেই উনি মারা গেলেন।” দেহ দাহ করে ফেরার সময় শ্মশানযাত্রীরা নাগা জওয়ানদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

১২ ঘণ্টার বন্ধে শুনশান পথ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যখন ঘটনার কথা জানাচ্ছিলেন, সেই সময় বাজারের মধ্যে প্রায় এক হাজার মানুষের মিছিল থেকে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল‘নাগা বাহিনী চাই না, নাগাবাহিনী তুমি রক্ষক না ভক্ষক?’ হাতে ধরা ছিল জওয়ানদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড। পরে চৌমাথা মোড়ে একটি প্রতিবাদও সভাও করা হয়। সভায় শনিবার রাতে কী হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার কথা বলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এরপরেই সভা থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, কেন এই নাগাবাহিনীকে সরানো হবে না? কিছুটা দূরে পুলিশবাহিনী নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা থাকলেও, বাসিন্দারা তাঁদের মিছিলে বা সভায় ডাকেননি।
তৃণমূলের স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য গৌরি মাহাতো বলেন, “নাগা জওয়ানদের নানা কাজে এলাকায় কিছুটা ক্ষোভ ছিল। তাই শনিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মিছিলে নেমেছেন। জেলা সভাধিপতিকে পুরো ঘটনার কথা জানাব।” ওই মিছিলে বেগুনকোদরের বাসিন্দাদের সঙ্গে পা মেলান চাতমবাড়ি, মুরগুমা, দুয়ারসিনি, লক্ষ্মীপুর, নিশ্চিন্তপুর, লেওয়া, জজলং প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা। বেগুনকোদর নাগরিক মঞ্চের তরফে বেগুনকোদর পঞ্চায়েতের প্রধান সিদ্ধেশ্বর মাহাতো এ দিন অতিরিক্তি পুলিশ সুপারের হাতে একটি দাবিপত্র তুলে দেন। তিনি বলেন, “নাগাবাহিনীকে অবিলম্বে এখান থেকে প্রত্যাহার করা, বেগুনকোদরে ফাঁড়ি করা সহ- চোলাই মদের বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।”

সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।
পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.