কথা ছিল তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে মৃদঙ্গভাঙা সেতুর কাজ। টাকার অভাব নেই। কেন্দ্র তা বরাদ্দ করেছে। নেই আইনি জটিলতা। কিন্তু চার বছরেরও বেশি কেটে যাওয়া সত্ত্বেও কাজ অনেকটাই বাকি। বকেয়া কাজে গতি আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ।
গত কয়েক বছরে লোকসভা, বিধানসভা সব ভোটেই শাসক ও বিরোধী নেতারা তুরূপের তাস করেছেন এই সেতুকে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার মথুরাপুর এবং পাথরপ্রতিমার মাঝে তৈরি হচ্ছে সেতুটি। এটি হলে এই দুই বিধানসভা কেন্দ্র এবং সংলগ্ন বিস্তীর্ন অঞ্চলের লক্ষাধিক বাসিন্দা উপকৃত হবেন। সেতু তৈরির জন্য সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ প্রথম ঘোষণা করে ২০০৯-এর ২৭ মে। প্রকল্পব্যয় ছিল ৪৮ কোটি ১৬ লক্ষ হাজার টাকা। কিন্তু কিছুকাল কাজ থমকে থাকে। পর্ষদের দাবি, দেরির মূল ব্যাপারটি হয় বাম আমলেই। সেতু তৈরির ব্যাপারে প্রধান উদ্যোগী প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “কাজে গতি আনার সবরকম চেষ্টা হয়েছিল। ঢিলেমির দায়ে ঠিকাদার পর্যন্ত বদল করা হয়েছে।” |
মৃদঙ্গভাঙা নদীর উপরে অসমাপ্ত সেতু তৈরির কাজ। ছবি: দিলীপ নস্কর। |
প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি)। তারা নতুন করে নির্মাতা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় ’১২-র ১৮ জুন। কাজের বরাত দেওয়ার ১৭ মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার শর্ত ছিল তাতে। গভীর এই নদীর উপর সেতু তৈরির জন্য টাকা দিয়েছিল জাতীয় গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক (নাবার্ড)। অর্থ বরাদ্দ হয় গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (আরআইডিএফ) থেকে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭৩০ মিটার। দু’পাসে আরও ৫০০ মিটার থাকবে সংযোগকারী রাস্তা। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে সাত মিটার।
এইচআরবিসি-র ভাইস চেয়ারম্যান সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাজটা শুরু হতে হতে লেগে যায় ’১১-র ফেব্রুয়ারি। আশা করছি আগামী বছর জুলাই মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।” কাজ কবে শেষ হবে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের কর্তারা। তাঁদের মতে, “সেতুর জন্য কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। প্রথা মেনে এই কাজে গোড়ার দিকে বছরখানেক নির্মাণকাজ শুরুতে দেরি হয়। এ ছাড়াও, অবস্থানগত কারণে নির্মাণের কাজটাও করতে হচ্ছে খুব সতর্কভাবে।” পর্ষদের প্রকল্প অধিকর্তা রজত বসু বলেন, “এখন আমরা পুরোদমে রাজ করছি। চেষ্টা হচ্ছে, মে-র মধ্যে কাজ শেষ করার।”
প্রযুক্তির জটিলতা ঠিক কোথায়?
সাধনবাবু বলেন, জোয়ারের সময়ে নদীর জল প্রায় ২০ ফুট উঠে যায়। ভাটার সময়ে নেমে যায় প্রায় ৩৩ ফুট। এ রকম ক্ষেত্রে সেতুর উচ্চতা যথেষ্ঠ বেশি হওয়া উচিত। নদীর উপর ছ’টি স্তম্ভ হচ্ছে। এগুলো তৈরির জন্য লোহার পাত দিয়ে (প্রযুক্তির পরিভাষায় ‘ক্যাসিয়ন’) ‘কূপ ভিত’ করতেও সময় লেগেছে। দক্ষিণবঙ্গে উপকূল-অঞ্চলে কোনও নদীতে এই পদ্ধতিতে স্তম্ভের ভিত তৈরি এই প্রথম। এ ছাড়াও, নিচে গভীর নদী থাকায় সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে স্তম্ভের উপর ঢালাই অর্থাৎ সুপার স্ট্রাকচারের কাজটাও হচ্ছে সতর্কভাবে। এক লপ্তে এই ঢালাই হচ্ছে তিন মিটার করে। দু’টি স্তম্ভের মাঝের অংশে ঢালাই করতে লেগে যাচ্ছে অন্তত তিন
মাস সময়।
সব মিলিয়ে, কাজে দেরি হওয়ায় একদিকে প্রকল্পব্যয় বেড়েছে। অন্যদিকে নদীর এক পাড়ে লক্ষ্মীজনার্দনপুর, হেরম্বগোপালপুর, অচিন্ত্যনগর নন্দকুমার, অপর পাড়ে নন্দকুমার বোলেরহাট আর সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের এখনও কলকাতায় যাতায়ত করতে হচ্ছে অনেক ঘুরপথে। কেউ যাচ্ছেন রামগঙ্গা হয়ে। কেউ রায়দিঘি মারফৎ। ভোট আসে, ভোট যায়। বাসিন্দারা জানেন, আগামী ভোটের প্রচারেও উঠবে এই সেতুর কথা। আশা নিয়ে ওঁরা তাকিয়ে আছেন শেষের সেদিনের দিকে। |