লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসে বড়সড় ফাটল ধরল। রবিবার বনগাঁ পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান সহ কংগ্রেসের পাঁচ কাউন্সিলরই তৃণমূলে যোগ দিলেন। গত এক সপ্তাহে বসিরহাটেরও কয়েক হাজার কংগ্রেস নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এর ফলে, দুই মহকুমায় দল আরও শক্তিশালী হল বলে দাবি তৃণমূলের।
২২ আসনের বনগাঁ পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। ২০১০ সালের নির্বাচনে তৃণমূল মাত্র সাতটি আসন পায়। সিপিএম পায় ১০টি। কিন্তু তারা বোর্ড গঠন করতে পারেনি। পাঁচটি আসন পাওয়া কংগ্রেস সমর্থন করে তৃণমূলকেই। চেয়ারম্যান হন তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্য, ভাইস-চেয়ারম্যান কৃষ্ণা রায়।
রবিবার মধ্যমগ্রামে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে গিয়ে কৃষ্ণাদেবী এবং বনগাঁ পুরসভায় তাঁর দলের কাউন্সিলর টুম্পা রায়, শম্পা সামন্ত, সুফল হালদার এবং তাপস মুখোপাধ্যায় নতুন দলে যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তার আগে শনিবার বসিরহাট-২ ব্লকের মালতীপুরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের এক জনসভায় নতুন দলে যোগ দেন সেখানকার কয়েক হাজার কংগ্রেস নেতা-কর্মী। তারমধ্যে বিভিন্ন পঞ্চায়েত সদস্য, এক জন পঞ্চায়েত প্রধান এবং তিন জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রয়েছেন। বস্তুত, গত এক সপ্তাহে বসিরহাটে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ঢল নেমেছে। তৃণমূলের দাবি, এই ক’দিনে ওই মহকুমায় কংগ্রেসের প্রায় ১৫ হাজার নেতা-কর্মী তাদের দলে যোগ দেন। সিপিএম এবং বিজেপি ছেড়েও অনেকে এসেছেন।
এ ভাবে তাঁদের দলে অন্য দলের নেতা-কর্মীদের যোগদান নিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “কংগ্রেস নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছে। এ সব দেখে বিরক্ত হয়ে ওই দলের নেতাকর্মীরা আমাদের দলে আসছেন। অন্য দল থেকেও অনেকে যোগ দিচ্ছেন। সকলকেই স্বাগত।” একই সুর শোনা গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গলাতেও। বনগাঁ পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলদের তাঁদের দলে যোগ দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “কংগ্রেস ছেড়ে যাঁরাই আমাদের দলে আসবেন, সকলকেই স্বাগত জানাব। ওঁরা বুঝেছেন কংগ্রেসে থেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে না।” পক্ষান্তরে, দলীয় নেতা-কর্মীদের দলত্যাগ নিয়ে জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবী ঘোষালের বক্তব্য, “যাঁরা চলে গেলেন, তাঁরা রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা থেকে যাননি। ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা ভেবেছেন। তবে, পাঁচ কাউন্সিলর অনেক আগেই মানসিক ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন। ওঁদের নীতি-আদর্শ ঠিক থাকলে প্রথমে কাউন্সিলর পদে ইস্তফা দিতেন। তার পরে কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দলে যোগ দিতেন। কিন্তু তাঁরা তা করেননি।”
দলত্যাগ প্রসঙ্গে কৃষ্ণাদেবী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উন্নয়ন করছেন, তার শরিক হতেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত। পুর এলাকার আরও উন্নয়ন করতে চাই।” তবে, ওই অঞ্চলের কংগ্রেসেরই একাংশ মনে করছেন, তারা সংগঠনগত ভাবে দুর্বল হয়ে পড়াতেই দলীয় কাউন্সিলরেরা দলত্যাগ করেছেন। নতুন দলে যোগ দিয়ে এখন থেকেই তারা আগামী পুর নির্বাচনের টিকিট নিশ্চিত করতে চাইছেন। বনগাঁ শহর কংগ্রেস সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ অবশ্য দাবি করেছেন, এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।
বনগাঁর পাশের মহকুমার কংগ্রেসের যে সব নেতা ইতিমধ্যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বসিরহাট-২ ব্লকের নেতা সিরাজুল ইসলাম, বসিরহাট-১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি নজরুল হক, স্বরূপনগরের বিথারীর কংগ্রেসের আঞ্চলিক সভাপতি মিজানুর রহমান মোল্লা প্রমুখ। সিপিএমেরও অনেকে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। মহকুমার সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহার দাবি, “পুলিশ প্রশাসন এবং দুষ্কৃতীদের কাজে লাগিয়ে নানা ভাবে ভয় দেখানোয় অনেকেই বাধ্য হচ্ছে দল ছাড়তে। অনেকে আবার বিশেষ সুবিধা নিতে অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন। এতে সিপিএমের ক্ষতি হবে না।”
|