‘নাকের বদলে নরুন’ বা ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো’ জাতীয় সমঝোতায় যে তারা সন্তুষ্ট, সেটা বুঝিয়ে দিয়ে রবিবার শেষ দুপুরে ইডেন ছাড়ল লক্ষ্মীরতন শুক্লর বাংলা। ‘যো জিতা ওহি সিকন্দর’ কথাটার মানে বোধহয় জানা নেই অশোক দিন্দা, সৌরভ সরকার, শিবশঙ্কর পালদের। জানলে হাতের কাছে চলে আসা গুরুত্বপূর্ণ ছ’পয়েন্টের লড়াই ও ভাবে ছেড়ে দিয়ে তার বদলে ড্র করে তিন পয়েন্ট নিয়ে হাসিমুখে মাঠ ছাড়তেন না। ভাবখানা ছয় আসেনি তো কী, তিন পয়েন্ট এসেছে!
নভেম্বরের শেষ রবিবারের সকালে শিশির ভেজা উইকেটে যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন দিন্দা-সৌরভরা, দিনের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা যেন ঠান্ডা ছাই-এ পরিণত হল। বাংলা শিবির সূত্রের খবর, চা-বিরতিতে যখন প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়া সৌরাষ্ট্রের সরাসরি জিতে ছ’পয়েন্ট তোলার জন্য ৩৫ ওভারে ১১৯ প্রয়োজন, তখন লক্ষ্মীদের ড্রেসিংরুম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, ঢের হয়েছে, প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থেকে পাওয়া তিন পয়েন্টের জন্য শেষ সেশনটা খেলাই ভাল। অথচ সকালে চেতেশ্বর পূজারা (৯)-সহ সৌরাষ্ট্রকে ৩৮-৪ করে দিয়েছিলের বাংলার বোলাররা। |
পূজারাকে আউট করে দিন্দার উচ্ছ্বাস। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
|
তার পর থেকেই বাংলার বোলারদের উইকেট তোলার মরিয়া ভাবটা যেমন উধাও, তেমনই ১৫১-র পার্টনারশিপ তৈরি সৌরাষ্ট্রের দিনের শেষে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জয়দেব শাহ এবং অর্পিত বাসবদা-র। তবে সেখানেও সৌরাষ্ট্র অধিনায়ক জয়দেবের সেঞ্চুরি (১০৪) এবং সঙ্গী অর্পিতের হাফসেঞ্চুরির (৫০) মধ্যে জয়ের টার্গেট তাড়া করার তাগিদ বেপাত্তা। সৌরাষ্ট্র অধিনায়কের সাফাই, “ওরা যেমন নেগেটিভ বোলিং শুরু করল, তাতে আমাদের রান তাড়া করতে গিয়ে বাইরের বল ড্রাইভ করে আউট হওয়ার মানে হয় না। এক পয়েন্টই ঠিক আছে।”
যদিও সকালে মাথার উপরে নাগালের মধ্যে থাকা ক্যাচ মিড অনে দাঁড়িয়ে শিবশঙ্কর ধরলে জয়দেব ব্যক্তিগত ৮ রানে ফিরে যেতেন। ৭৭-য়েও তিনি পয়েন্টে অনুষ্টুপের কাছে নিচু ক্যাচ তুলে বেঁচে যান। লক্ষ্মী বলছিলেন, “এই স্তরের ক্রিকেটে এমন ক্যাচ অবশ্যই ধরা উচিত।” গ্রুপে বাংলার বাকি চার ম্যাচের মাত্র একটি ঘরের মাঠে। পারফরম্যান্স-সূচক না ওঠাতে পারলে লক্ষ্মীদের সামনে হয়তো আরও খারাপ সময় আসতে চলেছে! তবু সার্ভিসেস আর রেলওয়েজের বিরুদ্ধে পরের দু’ম্যাচে বাংলা একই দল নিয়ে দিল্লি যাচ্ছে!
সকালে পাঁচ বলের মধ্যে বাংলার শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে নিজেরা ব্যাট করতে নামার আগে কিউরেটরকে পিচে ‘হেভি রোলার’ চালাতে বলেন সৌরাষ্ট্র অধিনায়ক। পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক চাহিদা। তবু উইকেটের স্যাতসেঁতে ভাব ও নতুন বলের পালিশকে কাজে লাগিয়ে প্রথম ১৫ ওভারেই এক জোড়া করে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন দিন্দা আর সৌরভ। পূজারার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে দিন্দা মিডল স্টাম্প ছিটকে দেওয়ার পরেও ৫৭ ওভার বল করে শিকারহীন বাংলা! লক্ষ্মীর যুক্তি, “হেভি রোলার চালানোয় উইকেট খুব পাটা হয়ে গিয়েছিল।”
লক্ষ্মী যাই বলুন, ইডেনে উপস্থিত জাতীয় নির্বাচক বিক্রম রাঠৌরের মনে ভারতীয় দলে ফেরা নিয়ে প্রবল সংশয় রেখেই দিলেন দিন্দা!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলা ৩০৩ ও ১৯৪
সৌরাষ্ট্র ২২৫ ও ১৮৯-৪ (জয়দেব ১০৪ ন.আ. দিন্দা ২-৫৭) |